ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কত যে তোমাকে বেসেছি ভাল...

প্রকাশিত: ১২:৩৫, ১৮ এপ্রিল ২০১৯

কত যে তোমাকে বেসেছি ভাল...

গত চার দশক ধরে বাংলা সংগীত অঙ্গনে নক্ষত্রের মত আলো ছড়িয়ে চলেছেন তিনি। গেয়েছেন, কতো যে তোমাকে বেসেছি ভাল, দিন যায় কথা থাকে, বন্ধু হতে চেয়ে তোমার-শত্রু বলে গণ্য হলাম,পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই, আশা ছিল মনে, হাজার মনের কাছে প্রশ্ন রেখে, বন্ধু হতে চেয়ে তোমার, পাহাড়ের কান্না দেখে, ও আমার উড়াল পঙ্খীরে,কেন ভালবাসা হারিয়ে যায়, আমি বৃষ্টির কাছ থেকে কাঁদতে শিখেছি, একটা ছিল সোনার কন্যা এমন অসংখ্য কালজয়ী গান যিনি নিজের কণ্ঠে শ্রোতাদের উপহার দিয়েছেন তিনি ‘সুবীর নন্দী’। গান গুলোর নাম শুনলে যে কেউ চোখ বন্ধ করেই ওনার নাম বলে দিতে পারেন। সব বয়সী শ্রোতাদের কাছেই তিনি জনপ্রিয়। কিছু গান আছে যা কখনোই হারায় না, সেসব গান গেয়েই কোটি ভক্তের হৃদয় কেড়েছিলেন তিনি। বাংলা সংগীতের প্রাণপুরুষ এই মানুষটি বাংলাদেশের ছোট থেকে বড় সব বয়সী মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় জায়গা করে নিতে সমর্থ হয়েছেন। হঠাৎ যখন তাঁর বিশাল এ শ্রোতারা জানতে পেরেছেন তাঁদের এ প্রিয় মানুষটি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে তখন যেন ভক্তকূলে বিষাদের ঘনঘাটা দেখা দিয়েছে। সিএমএইচ এর সিসিইউতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে যাচ্ছেন তিনি। গত রোববার নিজ এলাকা সিলেট থেকে ঢাকা ফেরার পথে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সিএমএইচে ভর্তি করানো হয় তাকে। কালজয়ী গান গুলোর কারণে সুবীর নন্দী কালে কালে ভক্তের হৃদয়ে নিজের জায়গাটা পোক্ত করে ফেলেছেন। গুণী এই গায়কের অর্জনের ভান্ডারটা ও ছোট নয়। চারটি দশক ভক্তদের উপহার দিয়েছেন অসংখ্য গান। যদি সংখ্যার হিসাবে তা বলি তবে আড়াই হাজারের বেশি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন জনপ্রিয় এ সংগীত শিল্পী। চারবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরুস্কার। এবছরই সংগীতে অসামান্য অবদানের স্বরুপ তিনি পান ‘একুশে পদক’। তার অর্জনের ভান্ডারে চারবার বাসচাস পুরুস্কারের খেতাব ও জুটেছে। সুবীর নন্দীর জন্মটা হয় হবিগঞ্জ জেলার, বানিয়াচং উপজেলার নন্দীপাড়ায়। বাবা চা বাগানে চাকরি করতেন, সে সুবাদে চায়ের সাথেই বেড়ে ওঠা তাঁর। ছোট বেলা থেকেই গানের প্রতি ছিল তাঁর বেশ টান। প্রাথমিকের শুরুর দিকেই মাতা পুতুল রাণীর কাছে সংগীতের হাতেখড়ি হয় এরপর ওস্তাদ বাবর আলীর হাত ধরে শাস্ত্রীয় সংগীতে প্রবেশ করেন তিনি। ১৯৬৭ সালে তিনি প্রথম গান করেন সিলেট বেতার কেন্দ্রে। ঢাকা রেড্ওিতে তাঁর কণ্ঠের যাদু ছড়ান ১৯৭০ সালে। বেতার, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র সকল ক্ষেত্রেই তার পদচারণা ছিল দেখার মত। ১৯৭৬ সালে ‘সূর্য গ্রহণ’ ছবির মধ্যে দিয়ে প্লেব্যাক এ আসেন তিনি। সুবীর নন্দীর গান পাড়া থেকে মহল্লা, শহর থেকে নগর সব খানেই যেন দ্যুতি ছড়াতে থাকে। একের পর এক গান গেয়ে গেয়ে দর্শক হৃদয়ে জায়গা করা এ জনপ্রিয় সংগীত শিল্পীর অসুস্থতার খবরে ভক্তদের মাঝে বিরাজ করছে চাপা কষ্ট। সুবীর নন্দী দীর্ঘদীন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। হঠাৎ করেই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এখন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি আছেন।
×