অনলাইন রিপোর্টার ॥ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত অবৈধ সিগারেটের জন্য বছরে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারচ্ছে সরকার। একইসঙ্গে সরকারের তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য অর্জনও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সরেজমিন রংপুর, সিলেট ও কুষ্টিয়ার বিভিন্ন বাজার পরিদর্শন করে জানা যায়, অসাধু ব্যবসায়ীরা রাজস্ব ফাঁকি দিতে নকল ও পুন:ব্যবহৃত ট্যাক্সস্ট্যাম্প বা ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে সিগারেট উৎপাদন করছে। স্থনীয়ভাবে উৎপাদিত রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া এসব সিগারেট সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক কমে বাজারে বিক্রি করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের গত বছরের তথ্যানুযায়ী, রাজস্ব ফঁকি দিয়ে স্থনীয়ভাবে উৎপাদিত সিগারেটের ব্র্যান্ডের সংখ্যা ৪০টিরও বেশি। সম্প্রতি খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে প্রায় ৩০টি কোম্পানি ৫০টির বেশি ব্র্যান্ডের সিগারেট উৎপাদন করছে। রংপুর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও সিলেটের বিভিন্ন বাজারে সেনর গোল্ড, ডার্লি, ব্ল্যাক, ভরসা, পার্টনার, দেশ ব্ল্যাক, টপি টেন, ফ্রেশ গোল্ড, সুপার গোল্ড সেনর গোল্ড পিউর ইত্যাদি নামে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত অবৈধ সিগারেট বিক্রি হচ্ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ধূমপানকে নিরুৎসাহিত করতে সরকার কয়েক বছর ধরে সিগারেটের দাম বাড়িয়েছে। রাজস্ব আয় নিশ্চিত করতে সিগারেট প্রস্তুতকারী সব প্রতিষ্ঠানকে প্রতিটি প্যাকেটের গায়ে ট্যাক্সস্ট্যাম্প বা ব্যান্ডরোল সংযুক্ত করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই ট্যাক্সস্ট্যাম্প বা ব্যান্ডরোল ছাড়া কোন সিগারেট বাজারে ছাড়া হলে সেটা আইনত অবৈধ। এছাড়া ট্যাক্সস্ট্যাম্প পুনঃব্যবহার ও নকলভাবে সিগারেট উৎপাদন আইনত দ-নীয় অপরাধ। দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন বাংলাদেশ লিঃ এই ট্যাক্স স্ট্যাম্প উৎপাদনকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান। কেউ যদি অন্য কোথাও ট্যাক্সস্ট্যাম্প/ ব্যান্ডরোল উৎপাদন করে থাকে সেটা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং নকল টাকা তৈরির মতোই বড় অপরাধ। এই ট্যাক্সস্ট্যাম্প বা ব্যান্ডরোলের জন্য উৎপাদনের সময়ই ১০ শলাকার নিম্নস্তরের প্রতি প্যাকেট সিগারেটে ৭১% এবং উচ্চ স্তরের জন্য সর্বোচ্চ ৮১% রাজস্ব দিতে হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকার নির্ধারিত ১০ শলাকার এক প্যাকেট সিগারেটের সর্বনিম্ন দাম ৩৫ টাকা। আর প্রতি শলাকা সিগারেটের দাম ৪ টাকা। এর কমে কোনো সিগারেট বিক্রি করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। কিš‘ আইন অমান্য করে অসাধু ব্যবসায়ীরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ১০ থেকে ১৫ টাকায় স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত সিগারেটের প্যাকেট বিক্রি করছে। এতে প্রতি শলাকা সিগারেটের দাম পড়ে দেড় থেকে দু টাকায়। যেখানে সরকার নির্ধারিত নিম্ন স্তরের ৩৫ টাকার এক প্যাকেট সিগারেটে করই প্রায় ২৫ টাকা দিতে হয়। সেখানে ১০/১৫ টাকায় সিগারেটের প্যাকেট বিক্রিই প্রমাণ করে সেগুলো অবৈধ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে প্রথম নয় মাসে রাজস্ব ঘাটতি প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা। এ ঘাটতি কমাতে রাজস্ব আদায়ের পাশপাশি বিভিন্ন খাতের ফাঁকি রোধ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
তাদের মতে, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত অবৈধ ও নকল সিগারেটের বানিজ্য বন্ধ করতে পারলে এ খাত থেকে বছরে আরো প্রায় দু হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় সম্ভব। এতে একদিকে রাজস্ব ঘাটতি কমবে, অন্যদিকে দেশের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ ত্বরান্বিত করতেও ভূমিকা রাখবে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: