ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চবির প্রাণিবিদ্যার সেই প্রভাষক পদে নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ১৮ এপ্রিল ২০১৯

চবির প্রাণিবিদ্যার সেই প্রভাষক পদে নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা

অনলাইন রিপোর্টার ॥ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক নিয়োগে সাক্ষাৎকার (মৌখিক পরীক্ষা) বাতিলপূর্বক পুনরায় পরীক্ষা নিতে প্রার্থী মো. এমদাদুল হকের আবেদন দুই সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ওই বিভাগের প্রভাষক পদে শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। এমদাদুল হকের করা রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। পরে জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, “গত ২৭ মার্চ প্রাণীবিদ্যা বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার জন্য মো. এমদাদুল হক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে পৌঁছানোর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতজন শিক্ষার্থী তার পথ আটকায় এবং সেখান থেকে অবরোধ করে তাকে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের কোনায় নিয়ে গিয়ে তার কাছ থেকে টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে মারধর করে। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্যাগোডায় নিয়ে গিয়েও মারধর করে।” সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে নিয়ে গিয়েও মারধর করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে এবং বলা হয় যে, সে শিবিরের রাজনীতির সাথে যুক্ত। পুলিশ সাথে সাথেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করেছিলো। প্রক্টর ও ভিসি মহোদয়কে জানিয়েছে এ ঘটনার বিষয়ে। কিন্তু প্রক্টর ও ভিসি কোনো রকমের পদক্ষেপ নেননি। তারপর তার নিরাপত্তার কথা ভেবে পুলিশ তাকে হাটহাজারী থানায় নিয়ে গিয়ে লকাপে রাখে ৫টা পর্যন্ত। এরপর ৫টার সময় ওসি এসে পুরো ঘটনা শুনে দুঃখ প্রকাশ করেন। মারধর করে এমদাদুল হকের গায়ের কাপড় ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিলো। থানার ডিউটি অফিসার তার একটি শার্ট দেন। ৫টার দিকে ছাড়া পেয়ে এমদাদুলক হক তার এক বন্ধুর বাসায় চলে যান। তার দুই দিন পর ৩০ মার্চ এমদাদুল হক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বরাবরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন এবং অনুরোধ করেন যেন তাকে নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। এমদাদুল হক ২০১২-১৩ সালে প্রাণীবিদ্যা বিভাগ থেকে সিজিপিএ ৪.৮৮ পেয়েছেন। তিনি এই এক্সিলেন্ট রেজাল্টের জন্য ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক পান। এমন ভালো রেজাল্ট করার পরও একজন শিক্ষার্থী যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ না পান, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আরো বলেন, এই ঘটনার কোনো সমাধান না পেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদনা করা হয়। আজকে এ আবেদনটির শুনানি হয়েছে। শুনানি শেষে আদালত আদেশে বলেছেন, ৩০ মার্চ এমদাদুল হক যে আবেদনটি জানিয়েছিলেন ভিসি মহোদয়ের কাছে সেটি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলেছেন এবং এই সময়ের মধ্যে কোনোভাবেই যেন প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রভাষকের দুটো খালি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়টা সম্পন্ন না করা হয়, সেটার ওপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করেছেন। এছাড়া আদালত শুনানির এক পর্যায়ে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর চলমান অবক্ষয়ের বিষয়ে অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন বলে জানান ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া। তিনি আরো বলেন, আদালত যেহেতু দুই সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছেন, আমরা দেখবো কী হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে আদালতকে আমরা এর ফলাফল সম্পর্কে অবহিত করবো এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চাইবো। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, আজকে আদালত যে রুল দিয়েছেন তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এমদাদুল হক যে পদে আবেদন করেছেন সে পদে শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। ২০১৭ সালে ১৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রাণিবিদ্যা বিভাগেও প্রভাষক পদের বিপরীতেও দরখাস্ত আহবান করা হয়। যেটিতে আবেদন করেন এমদাদুল হক।
×