ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিরাজদিখানে অপরণের করে ধর্ষণের পর স্কুল ছাত্রীর আত্মহনন

প্রকাশিত: ০৯:২০, ১৮ এপ্রিল ২০১৯

সিরাজদিখানে অপরণের করে ধর্ষণের পর স্কুল ছাত্রীর আত্মহনন

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে সেতু মন্ডল (১৪) নামে এক স্কুল ছাত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। বুধবার সকালে জেলার সিরাজদিখান উপজেলার গোয়ালখালি গ্রামে বসত-ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস দেয় সে। গোঙ্গানির শব্দ শুনে তাৎক্ষনিক পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মিডফোর্ট হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকালে সে মারা যায়। ময়নাতদন্তের পর বৃহস্পতিবার বিকালে স্কুল ছাত্রীর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে গত ১০ এপ্রিল সেতু মন্ডলকে স্কুলের সামনে থেকে অপহরণ করে সিএনজি স্কুটারে নিয়ে যায়। পরদিন ১১ এপ্রিল ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ উপজেলার গোলামবাজার পুলিশ ফাঁড়ি তাকে অনেকটা অচেতন উদ্ধার করে বাড়িতে খবর দেয়। পরিবারের লোকজন গোলামবাজার ফাঁড়ি থেকে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসে। সেতু মন্ডলের নিকট আত্মীয় আলী আজগর আব্দুল্লাহ কলেজের সহকারী গোবিন চাঁন মন্ডল বলেন, উদ্ধারের সময় মেয়েটি স্বাভাবিক ছিল না। জোর করে নেশা করনো হয়েছিল ধারনা করা হয়। উদ্ধারের পর থেকে বেশীর ভাগ সময়ই ঘুমে থাকতো। তাঁর মায়ের বরাদ দিয়ে জানান, সেতু মন্ডলকে পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছিল। শারীরিক অবস্থা থেকেও তা স্পষ্ট হয়। সিরাজদিখান থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন জানান, সেতু মন্ডল উদ্ধারের সময় অনেকটা অচেতন ছিল। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর তার মাকে জানিয়েছে- সোহেল নামের এক যুবক তাকে সেখানে নিয়ে যায়। পর দিন আসছিল বলে তাকে একটি স্থানে ফেলে রেখে কৌশলে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। পুলিশের ধারনা মেয়েটি ধর্ষণের স্বীকার হয়েছিল এবং কোন নেশাজাতীয় দ্রব্য খাওয়ানো হয়। মেয়েটি কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থার পরই আত্মহনণের পথ বেছে নেয়। ওসি সেতু মন্ডলের মা রেখা মন্ডলের বরাদ দিয়ে বলেন, মান সম্মানের ভয়ে মুখ খুলেননি। হাসপাতালে পর্যন্ত নেননি। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয় সেতুকে। ওসি জানান. জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোহেল মিয়া (২৪) আটক করা হয়েছে। নিহত সেতু মন্ডল গোয়ালখালি গ্রামের কুয়েত প্রবাসী গোপাল মন্ডলের মেয়ে। সে পাশ্ববর্তী ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর কবি নজরুল উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সোহেল মিয়া (২৪) ছাড়াও পলাশ রাজবংশী (২৩) নামে আরও একজনকে আটক করা হয়েছে। বুধবার দিবাগত রাতে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে ওই দুইজনকে আটক করা হয়। স্কুল ছাত্রী সেতু মন্ডলের বিষয়ে ওই দুই যুবক সম্পৃক্ত কিনা তা তদন্ত চলছে। তাছাড়া স্কুল ছাত্রীর সঙ্গে কি হয়েছিল-তা উদঘাটনের লক্ষ্যে ওই দুই জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঢাকার কেরাণীগঞ্জ উপজেলার গোলামবাজার পুলিশ ফাঁড়ির এসআই কবিরুল ইসলাম জানান, ১১ এপ্রিল গোলামবাজার এলাকায় থেকে ওই স্কুল ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। এদিকে সেতু মন্ডলের আত্মহননের খবরে গ্রামটিতে শোকের ছায় নেমে এসছে। তার শিক্ষালয়েও শোক এবং ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এই ঘটনায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট অজয় চক্রবর্তী ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, গোলামবাজার পুলিশ ফাঁড়ি সেতুমন্ডলের পরিবারের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা নিয়েছে। অথচ কিভাবে এখানে এল। কারা অপহরণ করল এব্যাপারে এই পুলিশ ফাঁড়ি কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তিনি জানান, সেতু মন্ডলকে অপরণের করে ধর্ষণের পর আত্মহননের পথ বেছে নেয়। জীবন দিয়ে সেতু মন্ডল এই ঘৃন ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েগেছে। সিরাজদিখান উপজেলা চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহম্মেদ এই ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে অপরাধীদের দৃষ্টান্ত মূল শাস্তি দাবী করেছেন।
×