ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্রে প্রেমে ফেলে যুবককে অপহরণ

প্রকাশিত: ১১:০২, ১৯ এপ্রিল ২০১৯

ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্রে প্রেমে ফেলে যুবককে অপহরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রেমের ফাঁদে ফেলে এক যুবককে অপহরণের পর ছয়দিন আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি করে। এ রকমই একটি সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্রের নারীসদস্যসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, সুন্দরী মেয়ের ছবি ব্যবহার করে ফেসবুক এ্যাকাউন্টটি পরিচালনাকারী কাজল বেগম (২৬)। তার সহযোগীরা হচ্ছে, আজিজুল হাকিম (৪০), লিটন মোল্লা (২৬), নজরুল ইসলাম বাবু (৪২), নুরু মিয়া ওরেফে মোল্লা (৬২)। এ সময় অপহৃত মেহেদি হাসান রায়হানকে (২৪) উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির। র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক জানান, ফেসবুকে পরিচয়। প্রোফাইলে সুন্দরী মেয়ের ছবি দেখে প্রেমের ফাঁদে পা দেন রায়হান (২৪)। আর এক মাসের মধ্যে ডেটিংয়ের প্রস্তাব পেয়ে রায়হানও ছুটে যান কথিত প্রেমিকা কাজলের কাছে। আসলে রায়হান বুঝতে পারেননি তিনি ফেক আইডির ফাঁদে পড়েছেন। তিনি জানান, গত ১২ এপ্রিল রাত ১১টা ১৫ মিনিটের দিকে রাজধানীর কলাবাগান থেকে অপহরহণকারীরা রায়হানকে অপহরণ করে সাভারের আমিন বাজারে নিয়ে আটকে রাখে। সেখানে ছয়দিন আটকে রেখে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। পরে অপহরণকারীরা রায়হানের পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এরপর পরিবারের সঙ্গে আলোচনায় পাঁচ লাখ টাকায় মুক্তিপণ রফা হয়। রায়হানের পরিবার অপহরণকারী চক্রের সদস্য বাহারের সঙ্গে যোগাযোগ করে মিরপুরের ৬০ ফিট ভাঙ্গা ব্রিজের কাছে সিগারেটের বক্সের ভেতর করে এক লাখ টাকা নিয়ে আসে। বাকি চার লাখ টাকা না দিলে রায়হানকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় চক্রটি। পরে র‌্যাবের কাছে অভিযোগ করেন অপহৃত রায়হানের পরিবার। এরই প্রেক্ষিতে বুধবার গভীররাতে আমিনবাজারের অভিযান চালিয়ে অপহরণকারী চক্রের ওই ৫ সদস্যকে আটক করা হয়। পরে অপহৃত রায়হানকে উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত অপহরণকারীরা জানায়, দীর্ঘ ১০ বছর ধরে তারা ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও চাকরিজীবী এবং তাদের পরিবারের সদস্যকে টার্গেট করে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন ও কৌশলে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে। তিনি জানান, গ্রেফতারকৃত নুরু মিয়া ও কাজল বাবা-মেয়ের পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া নেয়। ভাড়া বাসাতেই তারা অপহরণ করে নিয়ে এসে নির্যাতন ও মুক্তিপণ দাবি করত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টের পাওয়ার ভয়ে এক মাস কিংবা দুই মাস পর পর তারা বাসা পরিবর্তন করে ফেলে। র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি জানান, সাধারণত লোক লজ্জার ভয়ে প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা এসব বিষয়ে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আসে না। অনেকেই লাখ লাখ টাকা খোয়া দিয়েও ভয়ে কিংবা মান সম্মানের জন্য কাউকে জানায় না। অপহরণকারী চক্রের কৌশল সম্পর্কে চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির জানান, ঢাকাসহ আশপাশের বাসস্টেশন থেকে যাত্রীদের চাহিদা মতো স্থানে যাওয়ার কথা বলে মাইক্রো বা প্রাইভেটকারে উঠায়। এরপর গাড়িতে যাত্রীবেশে আগে থেকে অবস্থানকৃত ৩-৪ জন গাড়ি চলা অবস্থায় ভিকটিমকে অজ্ঞান করে। কখনও হাত-পা ও মুখ বেঁধে তাদের পরিকল্পিত এলাকায় নিয়ে আসে। ভিকটিমকে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে ভিকটিমের পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায় করে। কখনও সুন্দরী মেয়ের ছবি দিয়ে ফেসবুকে ফেক আইডির মাধ্যমে নির্দিষ্ট ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও চাকরিজীবীদের টার্গেট করে। পরে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বের মাধ্যমে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে। একপর্যায়ে ভিকটিমের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে অপহরণ করে।
×