ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আদালতে জবানবন্দী

নুসরাতকে হত্যার দায় স্বীকার করল হাফেজ আবদুল কাদের

প্রকাশিত: ১১:০৪, ১৯ এপ্রিল ২০১৯

নুসরাতকে হত্যার দায় স্বীকার করল হাফেজ আবদুল কাদের

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফেনী, ১৮ এপ্রিল ॥ ফেনীর নুসরাত হত্যা মামলার অন্যতম আসামি হাফেজ আবদুল কাদের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সরাফ উদ্দিন আহমেদের আদালতে এ জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়। জবানবন্দী শেষে তাকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। বুধবার রাতে পুরান ঢাকার হোসেনী দালান এলাকা থেকে আসামি হাফেজ আবদুল কাদেরকে গ্রেফতার করে পিবিআই। আবদুল কাদের এ মামলার এজহারভুক্ত আসামি। এর আগে এ মামলায় তিন আসামি নুসরাত হত্যার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছিল। তারা হলো মামলার এজহারভুক্ত আসামি নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীম। এছাড়া অন্যতম আসামি আবদুর রহিম শরীফও হত্যার দায় স্বীকার করে বুধবার রাতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে আবদুল কাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। এ মামলায় এ পর্যন্ত ৪ জনের ১৬৪ ধারয় জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়েছে। আলোচিত এ মামলা বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও পিবিআই। এদের মধ্যে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা, কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, শিক্ষক আবছার উদ্দিন, সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্যাহ জনি, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন, সহিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষের ভাগ্নি উম্মে সুলতানা পপি, জাবেদ হোসেন, যোবায়ের হোসেন, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন, মো. শামীম, কামুরুন নাহার মনি, আবদুর রহিম শরিফ ও হাফেজ আবদুল কাদের। গত ৬ এপ্রিল সকালে নুসরাত আলিমের আরবী পরীক্ষা প্রথম পত্র দিতে গেলে মাদ্রাসায় দুর্বৃত্তরা গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় দগ্ধ নুসরাত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ দিন পর ১০ এপ্রিল রাতে মারা যায়। পরদিন ১১ এপ্রিল বিকেলে তার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে প্রধান আসামি রেখে ৮ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪/৫ জনের নামে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করে। সোনাগাজীতে ঘুরে জানা গেছেÑ ঘটনার পর নোমান অভিযোগ করেছিল -সে দিন রাফির ভাই নোমানকে পরীক্ষার হলে রাফিকে বসাতে যাওয়ার সময় গেটে বাধা দিয়েছিল নিরাপত্তারক্ষী মোঃ মোস্তফা। সে ঘটনা ঘটবে বিষয়টি জানত। তাই গেটে হামলাকারীরা হামলার পর নিরাপদে বাইরে যাওয়ার কাজ তদারকিতে থাকা নুরউদ্দিনকে সহায়তা করে নোমানকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেয়। এভাবে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার ফুফা শ্বশুর মাদ্রাসার পিয়ন নুরুল আমিনও ঘটনা ঘটবে বলে অবগত ছিল। তাই ঘটনা ঘটার পরপরই ছাদের গেট বন্ধসহ কিছু আলামত সরিয়ে ফেলে। এ মামলায় এখন পর্যন্ত তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। সোনাগাজী থানার প্রায় ১৫০ গজের মধ্যে এ ঘটনা ঘটলেও পুলিশ ঘটনা স্থলে যায় প্রায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর। পুলিশ তাৎক্ষণিক কোন আলামত সংগ্রহ করেনি ॥ থানার ওসি মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন ও তাকে সহায়তাকারী কিছু সুবিধাভোগী অপসাংবাদিকতায় লিপ্ত সাংবাদিক নামধারী ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে প্রচারে সরব হয়ে উঠে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মনগড়া গল্প লিখতে শুরু করে। এলাকা ঘুরে দেখা গেছে স্থানীয় এ চক্রটি এখনও সক্রিয় রয়েছে। আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়া ৪ জনেই বলেছে তারা ঘটনার সঙ্গে, ঘটনার পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত ছিল। জবানবন্দীতে দেয়া তথ্যে কারা কিভাবে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের নামও পিবিআইর হাতে চলে এসেছে। আদালতে স্বীকারোক্তিতে দেয়া তথ্য সূত্র ধরে পিবিআই সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতারের অভিযান অব্যহত রেখেছে। পিবিআইর চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ পুলিশ সুপার মোঃ ইকবাল জানান মামলার অগ্রগতি সন্তোষজনক।
×