ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ফাঁদে পা দিলেই মাদক পাচার সিন্ডিকেটে

‘স্মার্ট মেয়ে’

প্রকাশিত: ১১:০৬, ১৯ এপ্রিল ২০১৯

‘স্মার্ট মেয়ে’

শংকর কুমার দে ॥ ‘স্মার্ট মেয়ে’ শিরোনামে বিজ্ঞাপন দিয়ে নিয়োগ দেয়া হতো বায়িং হাউসে। এভাবে আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে স্মার্ট নারীদের সংগ্রহ করে নিয়োগ দেয়া হতো সংঘবদ্ধ একটি আন্তর্জাতিক মাদকপাচারকারী সিন্ডিকেটে। এরপর তাদের দিয়ে প্রথমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হতো মাদক। পারদর্শী হয়ে উঠলে সংঘবদ্ধ একটি আন্তর্জাতিক মাদকপাচার সিন্ডিকেটের সদস্য বানিয়ে তাদের পাঠানো হতো বিদেশে। রাজধানীর বিমানবন্দরের পাশে কাওলা এলাকা থেকে সম্প্রতি গ্রেফতার হয়েছে মাদক চোরাচালানী চক্রের তিন নারী। তাদের সঙ্গে গ্রেফতার হয়েছে ওই চক্রের আরও দুই পুরুষ সদস্য। ওই সংঘবদ্ধ আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান চক্রের তিন নারীসহ ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র‌্যাবের টাস্কফোর্স কর্মকর্তারা। র‌্যাব কর্মকর্তারা গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে স্মার্ট মেয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে নারীদের সংগ্রহ করে বায়িং হাউসে নিয়োগ দিয়ে মাদক চোরাচালানে জড়িত করার চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে। র‌্যাব সূত্রে এ খবর জানা গেছে। র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, মাদক চোরাচালানী চক্রের গ্রেফতারকৃত সদস্যরা হলো, ফাতেমা ইমাম তানিয়া (২৬), আফসানা মিমি (২৩), সালমা সুলতানা (২৬), শেখ মোহাম্মদ বাধন ওরফে পারভেজ (২৮), রুহুল আমিন ওরফে সায়মন (২৯)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১ হাজার ৯৭০টি ইয়াবা, বৈদেশিক মুদ্রা ও পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব টাস্কফোর্সের অভিযানে গত ১২ জানুয়ারি উত্তরা থেকে চয়েজ রহমান নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। তিনি আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। উত্তরা পশ্চিম থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। মামলার পর ছায়া তদন্তে মাঠে নামে র‌্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাবের টাস্কফোর্সের এক কর্মকর্তা বলেন, গত ১৪ ডিসেম্বর ও ৩১ ডিসেম্বর শ্রীলঙ্কার কলম্বোর মাউন্ট লাভিয়ানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে সূর্য মনি, জামাল উদ্দিন ও দেওয়ান রফিউল ইসলামকে ২৭২ কেজি হেরোইন ও ৫ কেজি কোকেনসহ গ্রেফতার করে। ১ মাসের মধ্যেই এত বিপুল পরিমাণে হেরোইন ও কোকেনসহ বাংলাদেশী গ্রেফতারের ঘটনায় দেশে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। পরে আন্তর্জাতিক মাদক ব্যবসায়ী চয়েজ রহমানকে আটক করে টাস্কফোর্স। জিজ্ঞাসাবাদে আটক ৫ জন স্বীকার করেছে, তারা সংঘবদ্ধ একটি আন্তর্জাতিক মাদকপাচারকারী সিন্ডিকেটের সদস্য। বাংলাদেশে তাদের প্রধান নিয়ন্ত্রক মোঃ আরিফ উদ্দিন। তার আল-আমিন ফ্যাশন বায়িং হাউস নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই ব্যবসার নামে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে মেয়েদের নিয়োগ দেয়া হতো। এই ব্যবসার আড়ালে তিনি আন্তর্জাতিকভাবে মাদকের ব্যবসা করতেন। তার এই সিন্ডিকেটে ১৫ থেকে ২০ জন যুক্ত রয়েছে। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা আরও জানায়, আরিফ, রেহানা ও আটক রুহুল আমিন রিক্রুটিং (নিয়োগ) করত। রিক্রুটিংয়ে মূলত স্বল্পশিক্ষিত ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত স্মার্ট মেয়েদের প্রাধান্য দেয়া হতো। প্রথম ব্যবসার কাজে নিয়োজিত করলেও বিশ^স্ত হয়ে উঠলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাদের দিয়ে মাদক সংগ্রহ, সরবরাহ কাজে ব্যবহার করা হতো। পারদর্শী হয়ে উঠলে তাদের বিদেশে মাদক পাচার কাজে পাঠানো হত কথিত স্মার্ট মেয়েদের। তাদের মাদক সিন্ডিকেটের আফগানিস্তান, পাকিস্তান, চীন, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কায় নেটওয়ার্ক রয়েছে। মাদক পরিবহনে তারা বিভিন্ন পথ ব্যবহার করে। র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা জানান, যেভাবে স্মার্ট মেয়ে শিরোনামের বিজ্ঞাপন দেখে বায়িং হাউসে নিয়োগ পেয়ে দেশী ও আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানী চক্রের সদস্য হয়েছেন তার এক নেপথ্য কাহিনী বর্ণনা করেছেন আটক এক নারী। এই নারীর নাম ফাতেমা। শরীয়তপুরের মেয়ে আটক ফাতেমা এ চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয় ২০১৬ সালে। ওই চক্রের সঙ্গে যুক্ত ওয়ার পর তিনি ভারতে গিয়েছে দুইবার, তিনবার গেছেন চীনে। আর ৮ থেকে ১০ বার মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ করেছেন। শ্রীলঙ্কায় মাদক ব্যবসার জন্য তাদের ৪টি ভাড়া বাসা রয়েছে। আটক অন্যরাও মাদক পাচারে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছেন। তবে ফাতেমা সবচেয়ে বেশিবার বিদেশে গেছেন। আটক অপর নারীদের বর্ণনায় ফুটে উঠেছে একই চিত্র।
×