ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইরানে ফিরলেই গ্রেফতার!

প্রকাশিত: ১২:০৭, ১৯ এপ্রিল ২০১৯

ইরানে ফিরলেই গ্রেফতার!

জিএম মোস্তফা ॥ ইরানে ফিরতে ভয় পাচ্ছেন সে দেশের প্রথম মহিলা বক্সার সাদাফ খাদেম। পশ্চিম প্যারিসের রোয়ানে গত শনিবার প্রথম এ্যামেচার বক্সিংয়ে নেমেছিলেন তিনি। জিতে ইতিহাসও গড়েছেন। তারপর ইচ্ছে ছিল গর্বের সঙ্গে দেশে ফিরবেন। কিন্তু ইরানের সরকারের পরোয়ানাতে তিনি ভীত। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। সাদাফের প্রতিনিধি বুধবার সাংবাদিকদের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি জানান। যে কারণে প্যারিসেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সাদাফ খাদেম। কেন গ্রেফতারি পরোয়ানা? ইরানে মেয়েদের পোশাক-বিধি ভেঙ্গেছেন খাদেম। ছোট প্যান্ট পরে বক্সিং লড়তে নেমেছিলেন। গায়ে ছিল বক্সিং শার্ট। যে শার্টের পুরোটাতেই ইরানের জাতীয় পতাকার রংয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। কিন্তু সেখানেও আপত্তি ইরানের। যদিও ইরান সরকারের কেউই স্বীকার করেনি। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে। কিন্তু খাদেম রীতিমতো শঙ্কায়। তার কথায়, ‘আমি সরকারী ম্যাচ খেলেছি। গোটা বিশ্বের মেয়ে বক্সাররা যে পোশাক পরে খেলে সেই পোশাক পরেছি। হ্যাঁ, মাথায় হিজাব পরিনি। সেটাই কি আমার অপরাধ?’ খাদেমের এই কথার উত্তর দেয়ার অবশ্য কেউই নেই। প্যারিসে ম্যাচ শেষ হওয়ার পর ট্রেইনারকে সঙ্গে নিয়ে তেহেরান যাওয়ার কথা ছিল। বিমানের টিকেটও কেটে ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু এর মধ্যেই খবর এসেছে, তেহেরানের বিমানবন্দরে নামলেই খাদেমকে গ্রেফতার করা হবে। তার ট্রেইনার মাহিয়ার মনসিপুর জন্ম ইরানে। বিশ্ব লাইটওয়েট ক্যাটাগরিতে তিনি চ্যাম্পিয়নও। ইরান ছেড়ে প্যারিসেই থাকেন। তিনিই সরকারী ম্যাচের আয়োজন করেছিলেন তার শিষ্য খাদেমের জন্য। কিন্তু তিনিও ইরান সরকারের চোখে ফৌজদারি অপরাধী। ইরানের মেয়েদের পোশাকবিধির মধ্যে রয়েছে নয় বছরের উর্ধে প্রত্যেক মেয়েকে মাথায় হিজাব রাখতে হবে। হিজাব নিয়ে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সঙ্গে কম বিতর্ক হয়নি ইরানের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইরানের যুক্তি মেনে অলিম্পিকেও ইরানের মেয়েদের টিমকে মাথায় হিজাব পরে খেলার অনুমতি দিতে বাধ্য হয়েছে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি। ৩৫ বছর লড়াই করার পর ছেলেদের ফুটবল ম্যাচের গ্যালারিতে মেয়েদের প্রবেশ ঘটেছিল। ফলে খাদেমের এই পোশাক ইরান যে খুব সহজেই মেনে নেবে না তা বোঝা গিয়েছিল। এ বিষয়ে খাদেমের ট্রেইনার বলেন, সরকারী ম্যাচ জিতে ও ঘরে ফিরতে চেয়েছিল। ভেবেছিল তেহরানে বীরের সম্মান পাবে। কিন্তু তা আর হচ্ছে না। প্যারিসে ইরানের দূতাবাস থেকে খাদেম সম্পর্কে কোন কথা জানাতে অস্বীকার করেছে। ভাল-মন্দ কোন কথাই বলেনি দূতাবাস থেকে। এ অবস্থায় বর্তমানে প্যারিসেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খাদেম। যতদিন ইরান সরকার তার ওপর থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা তুলে না নেয়। ইরানের আইন অনুযায়ী নয় বছরের উর্ধে কোন নারীকে যদি জনসম্মুখে মাথায় কোন কাপড় ছাড়া দেখা যায় তবে ১০ দিন থেকে দুই মাসের জেল বা জরিমানার শাস্তির বিধান রয়েছে। দেশটির নারী খেলোয়াড়দের চুল, ঘাড়, বাহু এবং পা পুরোপুরি ঢেকে রাখার নিয়ম। প্যারিসের এই টুর্নামেন্টের আগ পর্যন্ত খাদেম অফিসিয়াল বক্সিং ম্যাচে হিজাব এবং পুরো শরীর ঢেকে রাখে এমন পোশাক ছাড়া অংশ নেয়ার অনুমতিই পেত না। কিন্তু আন্তর্জাতিক বক্সিং এ্যাসোসিয়েশন এর অপেশাদার বক্সিংয়ের গভর্নিং বডি এই পোশাকের নিয়ম শিথিল করে গত ফেব্রুয়ারির শেষের দিক থেকে।
×