ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্ল্যাকহোলকে প্রথম কাছ থেকে দেখা

প্রকাশিত: ১৩:৪০, ১৯ এপ্রিল ২০১৯

ব্ল্যাকহোলকে প্রথম কাছ থেকে দেখা

ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণ গহ্বরকে প্রথম কাছ থেকে দেখার পর যেসব ছবি পাওয়া গেছে বিজ্ঞানীদের চলতি এপ্রিল মাসেই সেগুলো গত দু’বছর ধরে তোলা হয়েছে। এগুলো তুলেছে পৃথিবীর চতুর্দিকে স্থাপিত আটটি বেতার মানমন্দিরের একটি নেটওয়ার্ক যার নাম দেয়া হয়েছে ‘ইভেন্ট হরাইজোন টেলিস্কোপ।’ টেলিস্কোপ নেটওয়ার্কটি দু’বছর আগে এক জোড়া দানব ব্ল্যাকহোলের ওপর দৃষ্টিপাত করে। একটি হচ্ছে আমাদের নীহারিকা মিলকি ওয়ের কেন্দ্রভাগে থাকা অতিকায় ব্ল্যাকহোল স্যাগিটারিয়াসে এবং ৫ কোটি ৩৫ লাখ আলোকবর্ষ দূরে এম ৮৭ নীহারিকায় অবস্থিত আরও বিশাল আকারের আরেকটি ব্ল্যাকহোল। ২০১৭ সালের এপ্রিল মানমন্দিরগুলোর টেলিস্কোপ একযোগে এই দুই ব্ল্যাকহোলের ইভেন্ট হরাইজোন বা ঘটনা দিগন্তের ওপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। ঘটনা দিগন্ত হলো ব্ল্যাকহোলের এমন সীমারেখা যার বাইরে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এতই প্রচ- যে আলোও সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। প্রশ্ন হচ্ছে ব্ল্যাকহোলকে কেমন দেখায়? প্রচ- মাধ্যাকর্ষণ শক্তিসম্পন্ন এই দানবগুলো তড়িৎ চৌম্বকীয় বর্ণালীর কোন অংশে বিন্দুমাত্র আলো বিকীরণ করে না। কাজেই ওদের তেমন কোনই চেহারা নেই। তাই ওদের দেখা যায় না। কিন্তু জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাকহোলের পরিপার্শ্বের কারণেই এই বস্তুটির অস্তিত্ব টের পান বা বুঝতে পারেন। ব্ল্যাকহোলের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি গ্যাস ও ধূলিকণা টেনে নেয়। এক সময় এসব বস্তুকণা আবর্তনরত একটি চাকরির মধ্যে থিতু হয়ে বসে বা জমা হয়। এটম বা পরমাণুগুলো প্রচ- গতিতে পরস্পরের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে। এ সমস্ত ক্রিয়াকলাপের কারণে পদার্থ কণিকাগুলো অতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এক্স-রে ও অন্যান্য অতি এনার্জিযুক্ত তেজস্ক্রিয় বিকীরণ করে। মহাবিশ্বের অতি প্রোগ্রামে সবকিছু গিলে খেয়ে চলা ব্ল্যাকহোলগুলোতে এমনি প্রচ- উত্তপ্ত হয়ে ওঠে শ্বেতবর্ণ ধারণগুলো আচ্ছন্ন হয়ে যায়। সেগুলোকে তখন আর দেখা যায় না। ইভেন্ট হরাইজোন টেলিস্কোপ আমাদের ‘মিলকি ওয়ে’ নীহারিকার স্যাগিটারিয়াসে ব্ল্যাকহোলের যেসব ছবি তুলেছে তাতে ব্ল্যাকহোলটির অনুষঙ্গ উজ্জ্বল পদার্থ কণিকার চাকতির গায়ে এর ছায়া ধরা পড়েছে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। ব্ল্যাকহোলের কাছে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির তীব্রতার কারণে চাকতির আলো ঘটনা-দিগন্তের (ইভেন্ট হরাইজোন) চারপাশে পাক খেয়ে একটা বলয়ে পরিণত হবে। যার ফলে ব্ল্যাকহোলের পেছনের পদার্থ দৃশ্যমান হবে। তবে ইমেজটি সম্ভবত অপ্রতিসম তলাবে। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে চাকতির বাইরের অংশের তুলনায় এর ভেতরের অংশ থেকে পৃথিবীর দিকে নির্গতভাবে আরও প্রবলভাবে বক্র হবে যার ফলে সামঞ্জস্যহীন বলয়ের একটা দিককে উজ্জ্বলতর দেখাবে। আমাদের মিলকি ওয়ের ব্ল্যাকহোলের চারপাশে নক্ষত্ররা কিভাবে ছোটাছুটি করে ইভেন্ট হরাইজোন টেলিস্কোপের ছবি থেকে বিজ্ঞানীরা সেটাও জানার চেষ্টা করছেন। তবে সেটা পরীক্ষা করে দেখার অপেক্ষাকৃত ভাল উপায় হলো পালসার বা নক্ষত্রের লাশ। নক্ষত্র মরে গিয়ে যখন লাশে পরিণত হয়, তখন তারা তেজস্ক্রিয় আলোর দীপ্তি ছড়িয়ে পাক খেতে খেতে আকাশজুড়ে ছুটে চলে। তবে সে আলো নিয়মিত বিরতিতে বাড়ে ও কমে। অনেকটা স্পন্দনের মতো। বিজ্ঞানীরা এখন দেখার চেষ্টা করছেন এই পালসারগুলো ব্ল্যাকহোলকে ঘিরে আবর্তন করে চলে কিনা। যদি করে তা হলে সেগুলো থেকে ব্ল্যাকহোল সম্পর্কিত অনেক চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া যাবে। তবে অনেক সতর্ক অনুসন্ধান সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত কোন পালসারকে স্যাগিটারিয়াসের যথেষ্ট কাছাকাছি দেখতে পাওয়া যায়নি। সেটা অংশত এই কারণে সে নীহারিকা কেন্দ্রের গ্যাস ও ধূলিকণার কারণে তাদের দ্যুতি নিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে পড়ে বলে তাদের হদিস পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এ অনেকটা মাছ বড়শিতে ধরা পড়ার মতো অনিশ্চিত ব্যাপার। কোন কোন ব্ল্যাকহোল ক্ষুধার্তের মতো চারপাশের বিপুল পরিমাণ গ্যাস ও ধূলিকণা টেনে এনে গোগ্রাসে গিলতে থাকে। আবার কিছু ব্ল্যাকহোল খাওয়ার ব্যাপারে খুঁত খুঁতে স্বভাবের। এরা আবার বেছে খায়। কেন, তার কারণ কেউ জানে না। স্যাগিরাটিয়াসে আবার খাওয়ার ব্যাপারে বেশ খুঁত খুঁতে। যদিও এর ভর ৪০ কোটি সূর্যের ভরের সমান তথাপি এর চারপাশের চাকতি বা বলয়টা বিস্ময়কর রকমের নিষ্প্রভ। অন্যদিকে ইভেন্ট হরাইজোন টেলিস্কোপের অপর টার্গেট এম ৮৭ নীহারিকার ব্ল্যাকহোলটি ভয়ঙ্কর খাদক। এর ওজন ২৪ ট্রিলিয়ন সূর্যের সমান। এর পরিপুষ্ট চাকতিটা উজ্জ্বলই শুধু নয়, এ থেকে অতি দ্রুতবেগে বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত অতি পারমাণবিক বস্তুকণার জেট নির্গত হয় যা প্রায় ৫ হাজার আলোকবর্ষ পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত হয়ে থাকে। সূত্র : সায়েন্স নিউজ
×