ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আবু সাইদ কামাল

বসন্তের এক পসলা বৃষ্টি

প্রকাশিত: ১৩:৪৭, ১৯ এপ্রিল ২০১৯

বসন্তের এক পসলা বৃষ্টি

পূর্ব প্রকাশের পর -এত সামান্যতেই এ রকম...? -সামান্য কোথায়, দেখছেন না রীতিমতো রক্ত বের হচ্ছে। -মেয়েরা তো ফুলের ঘায়ে মুর্ছা যায়। -আহা-হা রে, নিজের হলে বুঝতেন! -তাহলে-এই দেখুন! একথা বলেই অনন্ত সুক্ষাগ্র একটি আলপিন নিয়ে তার বাম হাতের মধ্যমার আগায় নির্দ্বিধায় সামান্য বসিয়ে দেয়। অতঃপর পিনটা টেনে তুলে। অমনি এক ফোঁটা তরতাজা রক্ত উঠে আসে। এবার অনন্ত চেয়ার ছেড়ে উঠে শিখার সামনে আসে। তারপর নাটকীয় ভঙ্গিমায় রক্ত স্রাত আঙ্গুলটা শিখার সিঁথির কাছাকাছি নিয়ে বলে, সিঁথিতে পরিয়ে দিই- রক্ততিলক সিঁদুর? হতবাক শিখা এবার হতভম্ব। অপ্রত্যাশিত এ ঘটনার আকস্মিকতায় কিছুক্ষণ সে কথার জট খুলতে পারে না। এবার চেতনা ফিরে পেয়ে শিখা বলে, এতটুকু ছেলের কা- দেখো! -কী বললেন, আমি এখনো কচি খোকা! -না-কচি খোকা না, সুপুরুষ। এমন একটা রোমান্টিক মুহূর্তেই অফিসে ঢুকতে থাকে বৈকালিক অফিসের লোকজন। অনন্ত-শিখা দ্রুত প্রসঙ্গ পাল্টায়। অনন্ত নিজের কক্ষে গিয়ে অফিসের কাজে মন দেয়। এভাবে অনন্তের সংস্পর্শ শিখার সমস্ত মনোজগতে যেন আবার বসন্তের জোয়ার জলে বান ডেকে যায়। ধীরে ধীরে শীতের রুক্ষতা যেন উবে যেতে থাকে। বসন্তের এক পসলা বৃষ্টিতে সমস্ত মনোভূমির সুপ্ত মাটি যেন কে জাগিয়ে তুলে। কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের বিষণœতা কাটিয়ে বসন্তের চিত্ত-চাঞ্চল্যে সে যেন আবার সেই প্রথম যৌবনে পুনঃপ্রত্যাবর্তন করতে সচেষ্ট হয়। অনেকদিন পর সে আবার মনের মাধুরী মিশিয়ে প্রসাধনী ব্যবহার করতে শুরু করে এবং সেজেগুঁজে হাসিমুখে অফিসে আসে। খোঁপায় কখনো গুঁজে দেয় একগুচ্ছ ফুল। অনন্তও সেদিন সকাল সকাল অফিসে এসেছে। নিজের আসনে বসে ব্যাকুল হয়ে শিখার জন্য অপেক্ষা করছে। বুনো পাখির মতই অকস্মাৎ শিখা অনন্তের কক্ষে ঢুকে। অন্য কেউ যাতে না শুনে তেমন কাছাকাছি গিয়ে অনন্তের কানের কাছে মুখ নিয়ে অনুচ্চস্বরে বলে, দেখুন তো! আজ আমায় কেমন লাগছে? -ওহ! খুব রোমান্টিক। যেনো রবীন্দ্রনাথের উর্বশী। -তাই! -একটুও বাড়িয়ে বলিনি। অনন্তের এমন কথা শুনে সারা মুখে আকর্ষণীয় হাসির দীপ্তি ছড়িয়ে শিখা নিজের আসনে গিয়ে বসে। এমন সুসজ্জিত হয়ে শিখার অফিসে আসাকে অনন্ত অভিনন্দন জানায়। সে জানে তার জন্যই শিখার সাজগোজের এমন আয়োজন। এতে অনন্তের মনেও এক ধরনের অনির্বচনীয় পুলক দোলা দেয়। তাই প্রতীক্ষায় থাকে কখন আসবে সেই কাক্সিক্ষত দুপুর। অনন্ত ভাবে, যেন প্রায় শুকনো একটা নদী ধীরে ধীরে নাব্যতা ফিরে পাচ্ছে। যে জীবন থেকে বসন্ত প্রায় বিদায় নিয়েছিল, সেখানে যেন ফের আসছে ফাগুন। শিখা যেন এখন বহতা নদী। সেদিন অফিসে কাজের অনেক চাপ। আগামী দিন বড় কর্তা অফিস পরিদর্শন করবেন। সবাই নিজেদের বকেয়া কাজ হালনাগাদ করতে ব্যস্ত। শাখার কর্তা ব্যক্তিগণ নিচ্ছিদ্র তদারকি করছে। তবু এক ফাঁকে অনন্ত শিখার টেবিলের পাশে গিয়ে ঘুরঘুর করে। দুয়েকবার পাশেও বসে। শিখার শাড়ির আঁচলের ছোঁয়ায় পুলকিতও হয় অনন্ত। কিন্তু শাখা কর্মকর্তার সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য চুটিয়ে গল্প করার সুযোগ আর হয়নি। সুযোগ খুঁজেছে শিখাও। তখনো তো মুঠোফোন আসেনি। কাজেই টেলিফোন করার ছুতোয় সেও বারবার এসেছে অনন্তের কক্ষে। অনন্তের চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলেছে। কিন্তু অফিসে দারুণ ব্যস্ততা। এখানেও সুযোগের অভাব। দিনের শেষে ছুটি হলে অনন্ত অফিসের গেট পার হয়ে রমনা ভবনের কাছে গিয়ে একটা রিকশায় বসেছে কেবল। পিছু পিছু শিখাও অমনি রিকশার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। ঠোঁটে তার বাঁকা হাসি। রমণীয় চাঞ্চল্যের এক অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ক্রীড়ারত যেনো সে হাসিতে। শিখা বলে, সরে বসুন, আমিও যাব। -কোথায়...? -আপনার সাথে। -আ-মা-র সাথে...? সত্যি সত্যিই শিখা রিকশায় উঠে অনন্তের পাশে গিয়ে বসে। অনন্তের মনে তখন রাজ্যের দ্বিধা, ভয় এবং সংশয়। তবু তো একজন তন্বী-তরুণীর ঘনিষ্ঠ আবেশের স্পর্শ পেয়ে সেও পুলকিত না হয়ে পারে না। তার দেহযন্ত্র যেনো মুহূর্তে উষ্ণ হয়ে উঠে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত অদ্ভুত এক শিহরণের বিদ্যুৎ খেলা করে। ততক্ষণে জড়তা-দ্বিধা আর লোকলজ্জার ভয়ের রসায়নে অনন্ত ঘেমে নেয়ে উঠে। রিকশা ছুটে চলছে। গুলিস্তান পার হয়ে তখন মতিঝিলের পথে। অনন্ত আমতা আমতা করে বহু কষ্টে বলে, আমি তো মেসে থাকি। -জানি তো আপনি ৩৮ নং মুগদাপাড়ায় থাকেন। -কিন্তু... -কোন কিন্তু না, আমি আপনার সাথেই যাচ্ছি। -দেখুন... -আহা রে আমার সুপুরুষ! ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে না? -না-মানে... -ভয় পাবেন না। আমি এসে গেছি। মতিঝিল পত্রিকা অফিসে আমার বড় ভাই কাজ করেন। তাকে নিয়ে একসাথে বাসায় ফিরব। -ও তাই...! আমি আরও... -অন্যকিছু ভাবতেছিলেন, তাই না? একথা বলতে বলতেই মতিঝিল মোড়ে শিখা নেমে যায়। অনন্ত রিকশা নিয়ে এগিয়ে চলে। মতিঝিল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক হয়ে কমলাপুর। তারপর মুগদাপাড়ার দিকে এগিয়ে যায় রিকশা। অনন্তের দৃষ্টি দূর আকাশে। তার ভেতর রাজ্যে তখন দুটি পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। একটি পক্ষ শিখার বিপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলে, একটা সন্তান সমেত স্বামী পরিত্যক্তা মেয়ে শিখা। কাজেই আর যাই হোক, তাকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখার প্রশ্নই উঠে না। সাথে সাথে সরব হয় অন্য পক্ষ। বলে, শিখাও একজন মানুষ। তারও একটা জীবন আছে। কাজেই তারও একটা স্বপ্ন থাকা উচিৎ। কেনো সে বঞ্চিত থাকবে? এভাবে দুটি পক্ষের মাঝে প্রবল পরাক্রমে যুদ্ধ চলতেই থাকে। ততক্ষণে রিকশা গিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে। অনন্ত চেতনা ফিরে পায়। রিকশা থেকে নেমে সে মেসে ঢুকে। বিষয়টা অনন্তকে বেশ ভাবিয়ে তোলে। কিন্তু ভেবে ভেবে সে কোনো কূল-কিনারা পায়না। বরং একটু একটু করে সে শিখার দিকেই ঝুঁকে যাচ্ছে। আর ভাবছে, থাকলই বা শিখার একটি সন্তান। নিজের মেয়ের মতো কাছে টেনে নিলেই তো ঝামেলা চুকে যায়। তাছাড়া এর মাঝেই তো একদিন শিখার মেয়েটিকেও সে দেখেছে। বড় মায়া জড়ানো শিশু মেয়েটির মুখ। সন্ধ্যায় মেসের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু অনন্তকে দুটি টিকিট দিয়ে বলে, এই নেন। এখানে দুটি টিকিট আছে। আগামীকাল আমাদের ব্যাংকের বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠান। যাবেন কিন্তু। -ঠিক আছে। টিকিট দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। এই বলে বন্ধুকে বিদায় দেয়। অনন্ত পরদিন টিকিট দুটি নিয়ে অফিসে যায়। দুপুরের খাবারের সময় শিখাকে বলে, আমার এক বন্ধু দুটি টিকিট দিল। আজ সন্ধ্যায় নাট্যানুষ্ঠান। যাবেন নাকি আমার সাথে...? -নিশ্চয়তা দিতে পারি না। মেয়েটা ঝামেলা বাঁধিযে বসবে। তাছাড়া ...এখনো সময় আসেনি। -সময় তো হাতের নাগালে। ধরলেই পারেন। -জানেন না তো আমার মেয়েটা ভীষণ একরোখা। -তাই নাকি! -হ্যাঁ। এই তো এক বছর আগের কথা। আমার ছোটবোন নিপা, ভিন্ন সম্প্রদায়ের এক সহপাঠীর সাথে হুট করে এঙ্গেজমেন্ট করে চলে গেল। বাসার কেউ জানে না। সন্ধ্যায় আমি খুঁজতে গেলাম। আমার মেয়েটা বাসা তোলপাড় করে ছাড়ল। এরপর থেকে সন্ধ্যায় আমি আর বাসার বাইরে যাই না। -আপনার বোনের ব্যাপারটা আপনাদের পরিবার কি সহজে মেনে নিল? -আমাদের পরিবার একটু অগ্রসর চিন্তা-চেতনার। সে জন্য সহজে মেনে নিতে পেরেছে। -হ্যাঁ, মানুষ এখন চিন্তা-চেতনায় বেশ অগ্রসর। বর্ণ, বংশ বা সম্প্রদায়গত দেয়াল তার কাছে এখন একটা আলপথের মতো। আমাদেরও তেমন হওয়া উচিত। -কিন্তু, রূঢ় বাস্তব ঢের উষর। -আমি সেই উষরভূমিতেই সবুজের বন্যা দেখতে চাই। সন্ধ্যার আগেই যে কুপি বাতিতে টইটুম্বুর জ্বালানি তেল ভরা হলো, কোনো কারণে সলতেটা নিচে ফেলে রেখে সে বাতিটা নিষ্প্রভ রাখার কোনো মানে হয় না। বরং সলতেটা উসকে দিয়ে তার দীপশিখাকে আপন ঔজ্জ্বল্যে উদ্ভাসিত করাই পুণ্যের কাজ। আমি চাই আপনার জীবনে ফের বসন্ত ফিরে আসুক। -ওভাবে বলবেন না প্লিজ! আমার ভীষণ কষ্ট হয়। এ পর্যন্ত বলেই শিখা চুপসে যায়। যেনো নিজের আবগকে সামলে নিতেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে সে। আর তা আঁচ করে অনন্তও উঠে তার কক্ষে চলে আসে। নিজের আসনে বসে ভাবে, একটা উর্বর ভূমিকে কৃত্রিম মরুভূমিতে পরিণত করে রাখা সৃষ্টির স্বাভাবিক গতিকে বাধাগ্রস্ত করারই নামান্তর। অনন্ত সুপ্ত শিখাকে জাগাতে চায়। তাকে জাগিয়েই যেন জীবনের স্বার্থকতা খুঁজে পেতে চায়। সে তার ভেতর রাজ্যের স্বার্থান্বেষী প্রতিপক্ষকে প্রবল পরাক্রমে মানবিক অনুভূতির দ্বারা পরাস্ত করে শিখাকে নিয়ে ঘর বাঁধার সিদ্ধান্তে উপনীত হতে চায়। ঠিক এমন এক মুহূর্তে হঠাৎ একটা বিপত্তি দেখা দেয়। বিকেলে ডাকযোগে অনন্তের অফিসের ঠিকানায় একটা চিঠি আসে। সেদিন শিখা একটু সকাল সকাল বিদায় নিয়ে চলে গেছে। অনন্ত চিঠিটা খুলে। দেখে একটা নিয়োগপত্র। কিছুদিন আগেই আরও মর্যাদা সম্পন্ন একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিয়েছিল। অনন্ত ভাবতেই পারেনি এ চাকরিটা তার হবে। বলা যায়, ভাগ্য সুপ্রসন্ন না হলে বিনা তদবিরে এমন চাকরি হয় না। পোস্টিং ময়মনসিংহ জেলা অফিসে। পরদিন একরাশ বিমর্ষতায় ভারাক্রান্ত হয়ে একটু বিলম্বে অফিসে আসে অনন্ত। কিছু ভালো লাগছে না তার। তাই অফিসে ঢুকেই সোজা শিখার পাশের চেয়ারে গিয়ে ধপ করে বসে। তারপর একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে। শিখা উদ্বেগের স্বরে বলে, কোনো সমস্যা...! -একটা দুঃসংবাদ। -দুঃসংবাদ...? -হ্যাঁ, এই নেন। খুলে দেখুন। কাউকে কিছু বলা যাবে না। যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করিনি তো... শিখা খামটা খুলে এক নজর চোখ বুলিয়েই উচ্ছ্বাসে বলে, এ তো দেখছি সুখবর! তাহলে দুঃসংবাদ বলছেন কেনো! -আপনাদের ছেড়ে যেতে হবে যে... -পাগল আর কাকে বলে। এ রকম সৌভাগ্য ক’জনের হয়! -আমার যেতে মন চাইছে না। -ক্ষণিকের আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। পারলে কালই আপনি চলে যান। যাবার আগে একদিনের ছুটি নিয়ে যাবেন। পরে রিজাইন লেটার পাঠিয়ে দিবেন। এখানে আমি সব ব্যবস্থা করব। -আপনি কি তাহলে যেতে বলছেন আমাকে...? -অবশ্যই। আগে যোগদান করলে তার ভিত্তিতেই জ্যেষ্ঠত্ব গণনা করা হবে। এ জন্য আগামীকালই যেতে বলছি আমি। -ঠিক আছে। কাল না, আগামী পরশু যাব। আগামীকাল ছুটির আবেদন করে অফিস থেকে বিদায় নিব এবং কাগজপত্র গোছাবো। কাল আসছেন তো আপনি! -হ্যাঁ। একটা চোরা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে শিখা। পরদিন সকালে অফিসে আসে অনন্ত। ইচ্ছে ছিল শিখাকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্নের কথাটা বলবে। কিন্তু দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরও শিখা আসেনি। দুপুর অবধি না। অন্যদিনের মতো লাঞ্চের সময় হয়। অফিসের লোকজন নামাজ ও লাঞ্চে চলে গেছে। ঠিক তখনি হঠাৎ একটা টেলিফোন। অনন্ত রিসিভার তুলে। মেয়েলি কন্ঠ। অনন্ত বলে, হ্যালো। জবাবে ওপাশ থেকে শিখা বলে, আমি জানি, আমার অপেক্ষায় এখনো বসে আছেন। -অফিসে এলেন না যে...? -শরীরটা ভালো নেই। -নিজেকে লুকোবার চেষ্টা করবেন না। বলুন, মনটা ভালো নেই। -সেসব কথা থাক। অন্য কোনো কথা থাকলে বলুন! -সেসবও তো গুরুত্বপূর্ণ কথা। আর এ জন্যই তো এতক্ষণ বসে আছি একা। অফিস ফাঁকা। যাবার বেলায় আপনি নেই, চারদিকে হাহাকার...। -আজ নেই, কাল তো আসব। -তাহলে আপনি চান, কালও আমি অফিসে আসি! -না-না। ও কথা বলবেন না। কালই আপনাকে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে হবে। -তাহলে আজ এলেন না কেনো? -বিদায়ের কষ্টটা দুঃসহ হবে বলে। কাছে থেকে বিদায় দিতে গিয়ে নিজেকে সামাল দেয়া কঠিন হতো হয়তো। তাছাড়া লুকিয়ে কাঁদতে চাই আমি।...-মানুষকে জানাতে চাই না। বলতে বলতে কণ্ঠরুদ্ধ হয় শিখার। তখন অনন্ত বলে, বিশ্বাস করুন! আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাই না। কিছুক্ষণ নীরবতা। উভয়েই আবেগজড়িত। শিখাই স্তব্ধতা ভেঙে বলে, কাল যাচ্ছেন তো! -আপনার সাথে দেখা না করে যাবনা আমি। -পাগলামু করবেন না প্লিজ! কালই ভোরের ট্রেনে আপনি যাবেন। এ আমার শেষ অনুরোধ। যতদিন আপনি না যাবেন, ততদিন আমিও অফিসে আসব না। -আপনার বাসার ঠিকানাটা দিবেন দয়া করে! -না, তাও না। -আচ্ছা বলুন তো, আমাকে জোর করে সরাতে চাচ্ছেন কেনো? শিখা নিরুত্তর। অনন্ত আবার বলে, আমি কোনোভাবে কি আপনার বিরুক্তির বা উত্ত্যক্তের কারণ হয়েছি? -আপনি আমার...। আপনাকে আমি পাই কোথায়...? -তাহলে আপনি আমার শুভ কামনা করেন। আমিও আপনাকে ছেড়ে যেতে চাই না। বলুন তো এমন হয় কেনো...? - জানি না...। তবে... -তবে? -আমি এতটা স্বার্থপর নই যে, আপনার সম্ভাবনাময় এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ জীবনকে এলোমেলো করে দেব। কথাটা বলা শেষ না হতেই ওপাশ থেকে রিসিভার রাখার শব্দ হয়। এপাশ থেকে অনন্ত বলতে থাকে, শিখা, শিখা-শিখা! আমার কথা বলা তো শেষ হয়নি। ওপাশ থেকে কোনো উত্তর নেই। অনন্ত বুঝতে পারে, শিখার আর কোনো কথা বলার ইচ্ছে নেই। অনন্তও আস্তে আস্তে রিসিভার রাখে।
×