ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আবদুল মান্নান

গোয়া

প্রকাশিত: ১৩:৪৮, ১৯ এপ্রিল ২০১৯

গোয়া

গোয়ার Sun-Sand-sea, তিনটি ঝ এর গোয়া ভারতের পশ্চিম এবং আংশিক দক্ষিণ উপকূলের একটি ছোট রাজ্য-যার জনসংখ্যা ১৪ লাখ ৬০ হাজার মাত্র। সূর্য বালি বিচ সাগর গোয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অগণিত পর্যটক। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে গোয়া মৌর্য শাসকদের অধীনে থাকলেও ১৩১২ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৩৭০ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম শাসনের অবসান হয়। পরবর্তী একশো বছর গোয়ার পোতাশ্রয় জাহাজ খধহফরহম জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। বিজয়নগর ক্যাভালরির জন্য আরবের শক্তিমান ঘোড়া আনতে এই সমুদ্রবন্দর ব্যবহৃত হতো। আরব সাগর কূলবর্তী ভারতের কালিকট বন্দরে ভাসকো ডা গামা প্রথম ১৭০ জন নাবিক নিয়ে ২০ মে ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে উপস্থিত হোন। তিনি ১১ সেপ্টেম্বর ১৫২৪ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। গোয়া আদর্শ পোতাশ্রয়ে পরিণত হয়। উষ্ণ অঞ্চলীয় মশলার ব্যবসা এবং রফতানির রুট নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ১৫১০ খ্রিস্টাব্দে আরব সাগরের পোতাশ্রয় গোয়ায় পর্তুগীজ বণিকদের আগমন ঘটে। গোয়া অতি উত্তম বন্দর হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় গোয়ায় উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করেন। এ সময় ক্যাথলিক মিশনারি ঝঃ. ঋৎধহপরং ঢধারবৎ ১৫৪২ খ্রিস্টাব্দে গোয়ায় এলো পর্তুগীজদের প্রভাব কমে ঙষফ এড়ধ সীমিত হয়ে পড়ে। ১৬ শতক থেকে পর্তুগীজরা ইধৎফবু ধহফ ঝধষববষব দখল করে উপনিবেশের অন্তর্ভুক্ত করে। অতঃপর মহারাষ্ট্র ১৮ শতকে পর্তুগীজদের পরাজিত করে গোয়ার অধিকাংশ অঞ্চল দখল করে ব্রিটিশ অধিকারে অর্থাৎ ব্রিটিশ উপনিবেশের অন্তর্ভুক্ত করে। ১৯৪৭ সালে ১৫ আগস্ট ব্রিটিশ উপনিবেশের অবসান হয় এবং ভারত উপমহাদেশ স্বাধীন হলেও স্বাধীনতার ১৪ বছর পর প্রায় ৪০০ বছরের পর্তুগীজ উপনিবেশের অবসান ঘটিয়ে গোয়া ভারতের একটি রাজ্যে পরিণত হয়। গোয়া ভারতের সব চেয়ে ছোট একটি রাজ্য (প্রদেশ) মাত্র দুটি ডিস্ট্রিক্ট উত্তর গোয়া এবং দক্ষিণ গোয়া। গোয়ার সরকারি ভাষা কড়হশধহর হলেও মারাঠি, হিন্দী ও ইংলিশ প্রচলিত আছে। প্রণিধানযোগ্য ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে স্থানীয় ২২টি অফিসিয়াল ভাষা প্রচলিত আছে। (১) ঈধষধহমঁঃব ইবধপয সমুদ্র সৈকতকে সৈকতের রানী বা ছঁববহ ড়ভ ঃযব ইবধপয বলা হয়। শুধু কি তাই এই ইবধপয এড়ষফবহ খধহফ ড়ভ ঋরংযবৎসধহ বলা হয়ে থাকে। কারণ মৎস্য শিকারের বিশেষ সুবিধা রয়েছে এই ইবধপয এ (২) ঈড়হফড়ষরস ইবধপয (৩) ইধমধ ইবধপয (৪) ঈড়ষাধ ইবধপয মোটামুটি ২০টি ঝবধ ইবধপয পর্যটকদের অধিক পরিমাণে আকৃষ্ট করে। জেলেদের স্বর্গভূমি গোয়ার খাবার অন্যতম আকর্ষণ হলো সি ফিশ যেমন চৎধহি, ঞরমবৎ চৎধহি, রূপচাঁদা করহম ঋরংয ইত্যাদি সামুদ্রিক মাছ পর্যটকদের রসনা মেটায়। পানাজি গোয়ার রাজধানী এবং সরকারী অফিস আদালত ব্যবসা কেন্দ্র হোটেল ইত্যাদি। গোয়ার আইন শৃঙ্খলা বিশেষ করে সদ্য প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পারিকরের আমলে এতই উন্নতি হয়েছে যে গভীর রাতে এমনকি সারা রাত নারী-পুরুষ ইবধপয এ ক্যাসিনো ডিসকো নাইট ক্লাব প্রভৃতি বিনোদন কেন্দ্রে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পাবলিক প্লেসে পান খাওয়া বা ধূমপান নিষিদ্ধ। এলকোহল কোন নিষেধ নেই তবে পাবলিক প্লেস বাদ দিয়ে পানে কোন বাধা নেই। অসংখ্যা মদের দোকান হলেও ‘ফেনি’ কাজু এবং নারকেল থেকে তৈরি হয়। ফেনি কড়া লিকার। অভ্যস্ত মাতাল একটু খেলেই উপলব্ধি করতে পারবে। ইবধপয এ মদ পান নিষিদ্ধ তবে মদ পান করে ইবধপয সহ সব জায়গায় চলাফেরা করা যায়। পর্যটকদের গোয়ার ইবধৎ (বিয়ার) খুব টানে। ইবধপয এর সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত না দেখলে প্রকৃতির বিশেষ করে সমুদ্রের অপরূপ-রূপ উপভোগ করা যায় না। রাতে ইবধপয গুলোর বিশেষ করে ঈড়হফড়ষরস ইবধপয মানুষের আনাগোনা অব্যাহত থাকে। ইধমধ ইবধপয বা বেলাভূমির ইৎরঃঃড়ঁং জবংঃধঁৎধহঃ এ রাতে সমুদ্রের গর্জনের সঙ্গে একটি টাইগার চৎধহি খাওয়াও জীবনের স্মরণীয় ঘটনা। পৃথিবীর নামী-দামী জবংঃধঁৎধহঃ তালিকায় এই ইৎরঃঃড়ঁং জবংঃধঁৎধহঃ উজ্জ্বল হয়ে আছে। এই ইৎরঃঃড়ঁং জবংঃধঁৎধহঃ কলকাতার এক বাঙালী ওয়েটারের সঙ্গে কথা হলো তিনি পৃথিবীর খ্যাতিমান ব্যক্তি যারা এখানে খেতে এসেছেন তাদের কথা জানালেন এবং কোন কোন সামুদ্রিক ফিশ কিভাবে খেয়েছেন তাও বললেন। ঈধষধহমঁঃব ইবধপয অসাধারণ পরিবেশে ঝড়ুঁধ খড়নড় লবস্টার আর রূপচাঁদা না খেলে গোয়ার মাছের মেলার স্বাদ পাওয়া যাবে না। গোয়ার ৭ (সাত)টি পানীয় খুবই প্রসিদ্ধ (১) করহমং চষংহবৎ ইববৎ (২) ঝড়ষশশধফর(৩) অৎসধফধ(৪) টৎধশ (৫) উবংসড়হফলর চঁৎব পধহব (৬) ঋবহর (৭) কঁসশঁস ঔঁরপব/ঝযবৎনধঃ এই সাতটি পানীয় প্রস্তুত কৌশল/রেসিপি এবং ব্যবহার বা পান করার নিয়ম ব্যাখ্যা করলে লেখার কলেবর অনেক বড় হয়ে যাবে বিধায় দু’একটি পানীয় কথা বলি ঋবহর সম্পর্কে আগেই বলেছি এবার কঁসশঁস ঔঁরপব সম্পর্কে বলা যায়- এই পানীয় দিয়ে যদি এড়ধহ ঐতিহ্যবাহী খাবার শুরু করা না যায় তাহলে পর্তুগীজদের প্রায় চারশ’ বছরের উপনিবেশিক খাবারের স্বাদ পুরনো গোয়ায় বসে পাওয়া যাবে না। মন্ডোবি নদী গোয়াকে দুই ভাগে বা দুই ডিস্টিক্ট এ ভাগ করেছে। এই নদীর ওপর যে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল তার ওপর অনেক উঁচু করে আর একটি সেতু নির্মাণ সমাপ্ত হয়েছে এই সেতুর উচ্চতা যেমন বেশি তেমনি দৈর্ঘ্যও অনেক লম্বা। শৈল্পিক নির্মাণ কৌশল সবাইকে মুগ্ধ করবে। সেতুর পিলারে টেরাকোটা জাতীয় শিল্পশৈলী ছাড়া সৌন্দর্যময় করতে স্থপতি সচেষ্ট এবং সফল হয়েছেন। তাছাড়া কোন ক্রমেই যেন যানজট না হয় সে জন্য এই দুটি সেতু ছাড়াও সর্বক্ষণিক ফেরি প্রতি পাঁচ মিনিট পরপর যাতায়াত করছে। বিনা পয়সায়- মোটরসাইকেল পর্যন্ত পার করা যায়। আমি আগেই বলেছি গোয়া সাগর সৈকতের রেস্টুরেন্টে বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছের প্রিপারেশন মিললেও স্পাইস (ঝঢ়রপব এধৎফবহ) গার্ডেন অর্থাৎ মসলার বাগানের স্পাইস রেস্টুরেন্টের দুপুরে গোয়ার ঐতিহ্যবাহী খাবার এবং ঐতিহ্যবাহী আদলে পরিবেশন হয়ে থাকে। পানাজি সিটি গোয়ার প্রাণকেন্দ্র এখানে প্রশাসনিক অফিস আদালত অবস্থিত। যদিও এ্যাসেমব্লি হাউস ও রাজভবন পানাজির বাইরে। এ্যাসেমব্লি হাউস পর্তুগীজ এবং পশ্চিম উপকূল অঞ্চলের স্থাপত্যের আদলে নির্মিত। রাজভবন সাগরের কোল ঘেঁষে বিশাল অঞ্চলে অবস্থিত বিভিন্ন প্রকার গাছের বনভূমি বা বাগান রাজভবনকে দৃষ্টিনন্দন করেছে। মন্ডোবি নদীতে ঈৎঁরংব মেমন সঙ্গীত নৃত্যের সমাহার হয় তেমনি সাগরে ডলফিন রাইড চিত্ত জুড়িয়ে যায় যখন ডলফিন পানির ওপর দিয়ে ডুব দেয়। পর্তুগীজদের কোট অমঁধফধ পর্যটকদের আকৃষ্ট করে বিশেষ করে এই প্রাচীন দুর্গের বাতিঘর বা খরমযঃ ঐড়ঁংব মনোমুগ্ধকর। চার শ’ বছরের পর্তুগীজ উপনিবেশ অন্যতম আকর্ষণ অসংখ্য গির্জা এবং সিমেট্রি। ইধপরষরপধ ড়ভ ইড়স ঔবংঁং গোয়ার অন্যতম প্রাচীন জনপ্রিয় চর্চা বা সির্জা উৎসর্গ করা হয়েছে এড়ড়ফ ঔবংঁং দেশের স্থাপত্য শিল্পের অন্যতম নিদর্শন এই চার্চটি পর্তুগীজদের রোমান ক্যাথলিক স্থাপত্য বিদ্যমান। এই চার্চটি দক্ষিণ এশিয়ার সর্বপ্রথম চার্চ হিসেবে চিহ্নিত করে চড়ঢ়ব চষঁং ীরর আদেশ জারি করেছেন। এমনিভাবে ঝব ঈধঃযবফৎধষ, ঈৎঁৎপয ড়ভ ঋৎধহপরং ড়ভ অংরধ প্রভূতি উল্লেখযোগ্য। গোয়ায় এখনো পর্তুগীজ জনগোষ্ঠী রয়েছে। তাদের বাড়িঘর দেখলে চেনা যায় যে ভারতের পশ্চিম উপকূলে বসবাসকারীদের বাড়িঘর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা বিশেষ করে তারা তাদের পূর্বপুরুষদের দেশের স্থাপত্য বহন করে চলেছে-এমন একটি বাড়ি মিউজিয়ামের মতো ব্যবহার হচ্ছে। রোমান ক্যাথলিক পর্তুগীজ তাদের আসবাবপত্র জীবনধারা সব কিছুই অবিকল রেখেছে-দর্শনীর বিনিময়ে এটি দেখা যায়। এরা স্থানীয় ভাষার সঙ্গে পর্তুগীজ ভাষাও নিজেদের মধ্যে ব্যবহার করে থাকে। এই পরিবারের পারিবারিক সিমেট্রিও আছে। বঙ্গোপসাগরের উপকূলে চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার যেমন সাগর পাহাড় একই সঙ্গে মিতালি করছে তেমনি গোয়াও সাগর আর পাহাড়ের মিতালি রয়েছে। গোয়ার পর্যটকদের জন্য যেমন বিনোদন কেন্দ্র রয়েছে তেমনি উপাসনার জন্য রয়েছে গির্জা মন্দির মসজিদ। ভিন্ন ভিন্ন স্থাপত্য যা মানুষের ভিন্ন ভিন্ন বিনোদন বা জীবনের জন্য বা ভালভাবে বাঁচার জন্য অপরিহার্য এই অনাবিল আনন্দের স্বাদ পাওয়া যায় নীল আকাশের নিচে সাগরে এবং পাহাড়ে। তেমনি আমরা সঙ্গতি অনুসারে ছুটে যায় সমুদ্রে এবং পর্বতে। আমরা গভীর মমতায় আমাদের নিজেকে আবিষ্কার করতে চেষ্টা করি। ইংরেজ কবি টি এস এলিয়েট তাঁর ওয়েস্ট ল্যান্ড কবিতার শেষ দুটি চরণে হিমালয়ের মাঝে অনাবিল শান্তি খুঁজতে চেয়েছেন।
×