ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সতর্ক হওয়ার সময় এখনই

প্রকাশিত: ০৯:১৭, ২০ এপ্রিল ২০১৯

 সতর্ক হওয়ার সময় এখনই

আমাদের সুদীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১০ জানুয়ারি তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলায় ফিরে আসেন। ১২ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তারই অব্যবহিত পর সম্ভবত ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরে যান এবং পশ্চিম বাংলার কলকাতা গড়ের মাঠে প্রায় ২৫ লাখ মানুষের জনসমুদ্রে ভাষণ দেন। তাঁর সফরসঙ্গীদের কাছ থেকে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা শেষ করেন কবিগুরুর কবিতা থেকে আবৃত্তি করে- ‘নাগিনীরা চারিদিকে ফেলিতেছে/বিষাক্ত নিঃশ্বাস/শান্তির ললিতবাণী/শোনাইবে ব্যর্থ পরিহাস/ বিদায় নেবার আগে তাই/ডাক দিয়ে যাই/দানবের সাথে যারা/সংগ্রামের তরে প্রস্তুত/হতেছে ঘরে ঘরে/...’ তখন বক্তৃতামঞ্চে বঙ্গবন্ধুর পাশে বসা ছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মহীয়সী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী। তাকে পাশে রেখেই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘আমরা বাংলাদেশের মাটি থেকে সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলে দিয়েছি। ভারতের মাটিতে আজও সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ পাই।’... শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী যিনি আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে সার্বিক সহায়তা করেন; ভারতে আশ্রয় প্রার্থী এক কোটি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছেন। খাদ্য, ওষুধ যা-যা দরকার অকাতরে বিলিয়েছেন, তার উপস্থিতিতে এমন কথা কেবল বঙ্গবন্ধুই বলতে পারেন। আর কেউ নন। যেমন প্রথম সাক্ষাতেই কোন ভূমিকা না রেখেই বলতে পারলেন- `Accillency madam prime minister of India when you are going to withdrwa your force from the independent and soverign soil of Bangladesh. ১. এটা বঙ্গবন্ধুর পক্ষেই সম্ভব হয়েছিল যার ফলশ্রুতিতে মিসেস গান্ধী বায়াত্তরের মার্চে বাংলাদেশ সফরের আগেই ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশ ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন। অথচ আমাদের স্বাধীনতার প্রশ্নে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে ভারতেরও ১৩ হাজার সৈন্য শহীদ হয়েছিলেন। তারপরও বঙ্গবন্ধুর যুগান্তকারী কূটনীতির কারণেই তারা হাসিমুখে বাংলাদেশ ত্যাগ করে। জাপানের কিছু এলাকা আজও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আমেরিকান বা রাশিয়ান সেনা ঘাঁটি রয়েছে। কবি গুরুর ঐ কবিতা আবৃত্তির পেছনে একটা লক্ষ্য আছে এবং তা হলো, জাতির পিতা কলকাতা গড়ের মাঠে ‘সাম্প্রদায়িকতা’ প্রশ্নে আবৃত্তিটি করেন, যে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তিনি আজীবন লড়াই করেছেন। ১৯৭৫ সালে তাঁকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার পর মিলিটারি জিয়া-এরশাদ আর খালেদার ছত্রছায়ায় সাম্প্রদায়িক শক্তি আবার গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে এবং বিষাক্ত নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ তা মেনে নেয়নি। একে একে তাদের পরাভূত করে আবার বঙ্গবন্ধুর কন্যার হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দেয়। তিনি তার ৪র্থ মেয়াদী শাসনের ক্যারিসমায় একদিকে দেশকে আর্থ-সামাজিক-রাজনীতিকভাবে অবিশ্বাস্যভাবে এগিয়ে নেন এবং একই সঙ্গে সাম্প্রদায়িক ও দেশবিরোধী অপশক্তিকে পরাভূত করে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মূলধারায় এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। এবার আমাদের জিডিপি হচ্ছে ৮ পয়েন্ট ৩ শতাংশ, মাথাপিছু আয় ১৯০৯ মার্কিন ডলার। আজ বাংলাদেশে একজন মানুষও না খেয়ে থাকেন না। গ্রামে-গঞ্জে কাজের লোক পাওয়া দুষ্কর। ফকিরের দেখা মেলে শহরের সিগন্যাল পয়েন্টে। তাও কেউ বিকলাঙ্গ, কেউ অন্ধ অসহায় নারী। আর রয়েছে (শহরে) কিছুসংখ্যক যাযাবর বেদে সম্প্রদায়ের নারী। যদিও তাদের এখন আর নৌকায় খুব কম দেখা যায়। আরও একটি সম্প্রদায় রয়েছে যাদের বলা হয় হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গ। অবশ্য এদের ব্যাপারে সমাজ এখনও নির্দয়। এমনকি জন্মদাতা বাবা-মাও তাদের সংসারে জায়গা দেয় না। ক’দিন আগে আমার এলাকায় একটি রাজনৈতিক কর্মসূচী পালনকালে একজন হিজড়াকে দেখলাম আমাদের মিছিলে। আমি তাকে কিছু টাকা দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন হিজড়া জিহ্বায় কামড় দিল। তারা পোশাকে-আশাকে সাধারণ নাগরিক মনে হলো। অথচ এই লোকগুলো একবারও ভাবল না এই হিজড়ারাও মানব সন্তান। মানব দেহের হরমনজনিত অস্বাভাবিকতায় পুরুষও নয় নারীও নয়- বিধাতার এক অদ্ভুত সৃষ্টি। এই সৃষ্টিতে তাদের কোন হাত নেই। আমি টাকা দিলে বলছিল- ‘আমরা পয়সা চাই না, আমরা ভালবাসার কাঙ্গাল। আমাদের কেউ ভালবাসে না ...’। সত্যি তো এদের কেউ ভালবাসে না। এদের আয়-রোজগারের উপায়ও ভিক্ষা। অবশ্য ভিক্ষাও বলা যাবে না। মানুষ বাধ্য হয়ে তাদের পয়সা দেয়। আজ বাংলাদেশে হিজড়াদেরও বাঁচার অধিকার রয়েছে। ভারতে হিজড়াদের একজন বিচারক পর্যন্ত হয়েছেন। আমাদের এখানে আজও হিজড়াদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জায়গা নেই। বরং রাস্তায় চলার পথে নোংরা ইঙ্গিত হজম করতে হয়। বাংলাদেশ আজ এগিয়ে চলেছে। জাতির পিতার হত্যার বিচার হয়েছে; জাতীয় ৪ নেতার হত্যার বিচার হয়েছে; যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে; বিচারহীনতার কালচার ধীরে ধীরে সমাজ থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হচ্ছে। এসব- : সুখের কথা। : আশার কথা। : সোনার বাংলা নির্মাণের পথে উল্লাসের কথা। কিন্তু... : মাদকাশক্তির ব্যাপকতা : নারীর প্রতি সহিংসতা : সড়কের নৈরাজ্য আমাদের বিচলিত করে বলেই উচ্চারণ করি- ‘নাগিনীরা চারিদিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস...’ নইলে বাস-ট্রাকের চাকায় ছাত্র-ছাত্রী প্রাণ হারায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীর শ্লীলতাহানি হয়। এমনকি কচি কন্যা শিশুও সিরাজ-উদদৌলাদের মতো আলেম নামধারী জালিম, শিক্ষক নামধারী ধর্ষকদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। ওরা এখন উলঙ্গ পশুর মতো যত্রতত্র যৌনাচারে লিপ্ত হয়। পশু তবুও জবরদস্তি করে না। যৌনাচারীরা তাও করে, যৌনতা কী বোঝার আগেই শিশুটির ওপর নির্যাতন চালায়। : এবার আমি মনে করি স্যাবোটাস। : নাশকতা। : মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র! : বৃহস্পতিবার দৈনিক জনকণ্ঠের একটি খবর ছাপা হয়েছে, শিরোনাম- ‘সাজা হয়নি কারও।’ আজ থেকে ৬ বছর আগে বগুড়ায় একটি মসজিদের মাইক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয় ‘সরকার সাঈদীকে (জামায়াতের ২নং নেতা যুদ্ধাপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত) গোপনে ফাঁসি দিয়েছে, অথচ তাকে চাঁদে দেখা যাচ্ছে।’ মানুষকে বিশেষ করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের রাজপথে নামার উস্কানি দেয়া হয়। এতে করে শত সহস্র মানুষ পথে নেমে আসে এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বাড়ি, দোকানপাট ভাঙচুর করে, এমনকি পুলিশ ফাঁড়িও রেহাই পায়নি। এ ঘটনায় মামলা হয়েছিল। এক পর্যায়ে চার্জশীট হয়েছে এবং চার্জশীটভুক্ত আসামিরা প্রায় সবাই ছিল জামায়াত-শিবির-বিএনপিকর্মী, আর তাদের টার্গেট ছিল প্রধানত আওয়ামী লীগ তথা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ এবং মুক্তিযোদ্ধা। যেসব টকশোর বুদ্ধিজীবী বিচারহীনতার সংস্কৃতি করে চিৎকার করেন এখন তারা কী বলবেন? এটাও কি শেখ হাসিনা বা তার সরকার করেছেন? মির্জা ফখরুল বা রুহুল কবির রিজভী এরই মধ্যে কোন প্রেস ব্রিফিং ডেকেছেন কিনা শুনিনি। ডাকবেন না, কারণ- ঐ মামলায় আসামি প্রায় সবাই জামায়াত এবং বিএনপি। বরং শেখ হাসিনা রাষ্ট্রনেতা হিসেবে যে ঁহরয়ঁব বীধসঢ়ষব সৃষ্টি করেছেন বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের বাইরে বিশ্বব্যাপী, তাকে মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে দেশদ্রোহীরা এখন নাশকতার পথ ধরেছে। আমার এ বক্তব্য কতখানি তথ্যভিত্তিক তা মাপার ফিতা আমার কাছে নেই, চোখ-কান খোলা রাখলে যে কেউ বুঝতে পারবেন কি দিয়ে কোন পথে কি হচ্ছে! কারা করছে! পেছনেই বা কারা! দেশে রাজাকারের তালিকা প্রণয়ন শুরু হয়েছে। আর তাই সিরাজ-উদদৌলারা আশ্রয় খুঁজছে, খুঁজবে, যে কিছুর বিনিময়ে। মাদ্রাসার সো-কলড্ অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ-উদদৌলার অতীত হলো জামায়াত। পরে বিএনপি-জামায়াত এবং সম্প্রতি নষ্ট-ভ্রষ্ট আওয়ামী লীগ নেতাদের সুহৃদ। কিসের বিনিময়ে? নিশ্চয়ই এর পেছনে রয়েছে অর্থ লেনদেন! নইলে সিরাজ-উদদৌলার পক্ষে থানার ওসি, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এবং মেয়েরা নামবে কেন? একটা ব্যভিচারী লোকের পক্ষে তো কারও নামার কথা নয়। তবুও নামছে। আমাদের এখনই সতর্ক হতে হবে। স্যাবোটাসদের চিহ্নিত করে অথরিটির হাতে তুলে দিতে হবে নইলে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের ‘তিনকন্যা’ শত শত কন্যার রূপ ধরে মরিচের গুঁড়া হাতে পথে নামবে! তবে আমি বিশ্বাস করি, শেখ হাসিনা যখন রাষ্ট্রনেতা তখন জঙ্গী দমনের মতো নারীর প্রতি সহিংসতা, মাদকের বাড়াবাড়ি, রাস্তার বিশৃঙ্খলাও দমন হবে। ঢাকা ॥ ১৯ এপ্রিল, ২০১৯ লেখক : সংসদ সদস্য এবং সাবেক সভাপতি জাতীয় প্রেসক্লাব [email protected]
×