ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মানবিকতায় শিল্পের আহ্বান ‘আর্ট ফর অটিজম’

প্রকাশিত: ০৯:১৯, ২০ এপ্রিল ২০১৯

মানবিকতায় শিল্পের আহ্বান ‘আর্ট ফর অটিজম’

মনোয়ার হোসেন ॥ শিল্পই পারে মানবিকতাকে ছুঁয়ে যেতে। সে লক্ষ্যেই যেন সকাল থেকে সচল হয় শিশু শিল্পীর চিত্রপট। রেখার বিন্যাস আর রঙের স্ফুরণে ক্যানভাসে উদ্ভাসিত হয় বিবিধ বিষয়। প্রকৃতির নিষ্ঠুরতার শিকার বিশেষ শিশুরা অক্ষমতাকে ছাপিয়ে প্রদর্শন করে আপন সক্ষমতাকে। তাদের সেই আঁকাআাঁকির ভুবনে কর্মযজ্ঞে রঙিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের লিচুতলার চারপাশ। আর মানবতার আহ্বানে সেই শিশুদের সঙ্গে দিনভর সৃজনে মেতে ওঠে প্রখ্যাত থেকে প্রতিষ্ঠিত শিল্পীরা। শুক্রবার চারুকলা অনুষদে অনুষ্ঠিত হলো ‘আর্ট ফর অটিজম’ শীর্ষক আর্ট ক্যাম্প। আঁকাআঁকির শিশুদের মন ভোলানো পাপেট শোতে আয়োজনটি হয়ে ওঠে আরও বেশি প্রাণবন্ত। মানসিক বা শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হওয়া বিশেষ শিশুদের অনুপ্রাণিত করতে চারুকলা অনুষদের সহযোগিতায় এ আর্ট ক্যাম্পের আয়োজন করে চাইল্ড ফাউন্ডেশন। শুক্রবার সকালে ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পীদয় হাশেম খান ও রফিকুন নবী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন চাইল্ড ফাউন্ডেশনের তাহরিন আমান। শুক্রবার সকাল থেকে নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলে এ আর্ট ক্যাম্প। প্রথম ধাপে ছবি আঁকে ৮৩ জন বিশেষ শিশু শিল্পী। তাদের সৃজনযজ্ঞ সমাপ্ত হলে নবীন-প্রবীণ, প্রতিষ্ঠিত ও প্রখ্যাত ৪৯ জন শিল্পী অংশ নেন ক্যাম্পে। আজ শনিবার আয়োজনের দ্বিতীয় দিনে শিশু শিল্পীদের আঁকা ছবি নিয়ে অনুষদের লিচুতলা সংলগ্ন ভবনে নিচে অনুষ্ঠিত হবে প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর পাশাপাশি শিশু চিত্রকরদের বিক্রিও হবে। চিত্রকর্ম বিক্রির সেই অর্থ তুলে দেয়া হবে বিশেষ শিশুদের অভিভাবদের হাতে। দ্বিতীয় দিনে আয়োজনে থাকবে ‘শিল্পের আশ্রয়ে সামাজিক অভিঘাত উপলব্ধি’ ও ‘শিল্পের অন্তর্ভুক্তি’ শীর্ষক দুটি গোলটেবিল বৈঠক। এছাড়া পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের চিত্রিত চিত্রকর্ম নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে আরেকটি প্রদর্শনী। সেই প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম বিক্রির অর্থও তুলে দেয়া প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে নিরন্তর কাজ করা চাইল্ড ফাউন্ডেশনে। আয়োজনটি প্রসঙ্গে নিসার হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, মূলত মানবতার আহ্বানেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ আর্ট ক্যাম্প। কয়েক বছর আগেও ভীষণভাবে উপেক্ষিত ছিল এই বিশেষ শিশুরা। বর্তমানে প্রাকৃতিকভাবে প্রতিবন্ধকতার শিকার এই শিশুদের প্রতি নজর দিয়েছে রাষ্ট্র ও সমাজ। জাগ্রত হয়েছে তাদের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি। বিকশিত হয়েছে মূল্যবোধ। আর শিল্পীরা সব সময়ই অবস্থান নিয়েছে মানবতাবাদী চেতনার অগ্রভাগে। এ কারণেই এই আর্ট ক্যাম্পে বিপুলসংখ্যক শিল্পীর স্বতঃস্ফূর্ত সমাগম ঘটেছে। মনের টানেই তারা অংশ নিয়েছেন এই আর্ট ক্যাম্পে। তাহরিন আমান বলেন, সাধারণত আমরা সব সময় বিশেষ শিশুদের অক্ষমতা নিয়ে কথা বলি। নজর দেই না তাদের সক্ষমতার দিকে। তাদের ভেতর যে গুণাবলী আছে সেগুলো উপলব্ধি করতে পারি। সেই প্রেক্ষাপটে এই শিশুদের ভেতরে সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করা ও উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এ ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছে। বিশেষ শিশুদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৮৩ জন শিশু শিক্ষার্থী অংশ নেয় ক্যাম্পে। নবীন-প্রবীণ ও প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের মধ্যে দিনভর আঁকাআঁকিতে মগ্ন ছিলেন মুস্তাফা মনোয়ার, রফিকুন নবী, হাশেম খান, মনিরুল ইসলাম, অলকেশ ঘোষ, রোকেয়া সুলতানা, কালিদাস কর্মকার, শিশির ভট্টাচার্য, মোহাম্মদ ইউনুস, শেখ আফজাল, মিনি করিম, বিপাশা হায়াতসহ ৪৯ জন শিল্পী।
×