স্টাফ রিপোর্টার ॥ ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির যৌন হয়রানির ঘটনা ধামাচাপা দিতে এবং তাকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হওয়ার তথ্য মিলেছে। প্রকৃতপক্ষে কী পরিমাণ অর্থের লেনদেন হয়েছে এবং কারা কিভাবে অর্থ লেনদেনে জড়িত তার তদন্ত চলছে। পুরো প্রক্রিয়াটির সঙ্গে জড়িতদের ব্যাংক লেনদেন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনসহ অভিযুক্তদের ব্যাংক হিসেব বিশেষভাবে খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহেই বিষয়টির মাঠ পর্যায়ের অনুসন্ধান চালাতে সিআইডির একটি দল ফেনীর সোনাগাজী যাচ্ছে।
সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যেই তদন্তে রাফিকে যৌন নির্যাতনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে এবং তাকে হত্যা করতে মোটা অঙ্কের টাকার লেনদেন হওয়ার তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গণমাধ্যমেও এসব তথ্য এসেছে। নুসরাত হত্যাকা-ে ব্যয় হওয়া টাকার উৎস জানতে সিআইডি অনুসন্ধান শুরু করেছে। সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম শুধু বর্তমানে মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। মোল্যা নজরুল আরও জানান, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ব্যাংক লেনদেনের হিসেব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নুসরাত হত্যার পর সোনাগাজী থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন, স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রাজনীতিবিদ হত্যার ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল। ষড়যন্ত্র করতে ওসি কয়েকজন স্থানীয় সাংবাদিককে ব্যবহার করেছেন। ষড়যন্ত্রে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ তার সহযোগীরা মোটা অঙ্কের টাকা ঢালে। এ ধরনের আরও অসংখ্য অভিযোগে গত ১০ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানা থেকে ওসি মোয়াজ্জেমকে প্রত্যাহার করা হয়। নুসরাতের সঙ্গে এই ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছু অনুসন্ধান করবে সিআইডি। অর্থ লেনদেনের ঘটনা শুরু থেকে হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে। তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেমসহ সবার ব্যাংক হিসেব দেখা হবে। এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে যাদেরই অর্থ লেনদেনের যোগসূত্র আছে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। অনুসন্ধানে লন্ডারিংয়ের তথ্য পাওয়ার পর সোনাগাজী থানায় মানিলন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করা হবে।
প্রসঙ্গত, নুসরাত জাহান রাফি সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা তাকে যৌন নিপীড়ন করে বলে অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগে নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর অধ্যক্ষকে আটক করে পুলিশ। এমন ঘটনার পর অধ্যক্ষকে মুক্ত করতে একটি কমিটি পর্যন্ত গঠন করা হয়। কমিটির লোকজন কারাগারে অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করে। এরপর অধ্যক্ষের পরিকল্পনা মোতাবেক গত ৬ এপ্রিল পরীক্ষা দিতে গেলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত ১০ এপ্রিল মারা যায় নুসরাত। এ মামলায় ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও পিবিআই। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা, কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মুকছুদ আলম, শিক্ষক আবছার উদ্দিন, সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি, মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, শাহিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষের ভাগ্নি উম্মে সুলতানা পপি, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের হোসেন, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন, মোঃ শামীম, কামরুন নাহার মনি, জান্নাতুল আফরোজ মনি, শরীফ ও হাফেজ আবদুল কাদের। এর মধ্যে চার জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: