ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লাইসেন্স পাওয়ার ৬ মাসেও টাওয়ার নির্মাণ শুরুই করেনি চার কোম্পানি

১৫ কোটি মোবাইল ফোন গ্রাহক কলড্রপের শিকার হচ্ছেন

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ২০ এপ্রিল ২০১৯

  ১৫ কোটি মোবাইল ফোন গ্রাহক কলড্রপের শিকার হচ্ছেন

ফিরোজ মান্না ॥ লাইসেন্স পেয়েও কাজ শুরু করতে পারেনি ৪ টাওয়ার কোম্পানি। ৬ মাস হয়ে গেলেও তারা টাওয়ার নির্মাণে হাত দেয়নি। বিটিআরসি ও মন্ত্রণালয় তাগিদ দিলেও লাইসেন্স পাওয়া এসব কোম্পানি তা উপেক্ষা করে যাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, মোবাইল ফোন অপারেটরদের অনীহার কারণে টাওয়ার নির্মাণ শুরু হচ্ছে না। এতে বন্ধ রয়েছে টাওয়ার সেবার সব ধরনের কার্যক্রম। ফলে দেশের ১৫ কোটি মোবাইল ফোন গ্রাহক কলড্রপের শিকার হচ্ছেন। দেশের সবচেয়ে বড় অপারেটর গ্রামীণফোন গ্রাহকদের ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। অন্য অপারেটরদের কলড্রপ বাড়ছে। চার কোম্পানিকে লাইসেন্স দেয়ার সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছিলেন, মোবাইল টাওয়ার শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে দেশে মোবাইল প্রযুক্তির বিকাশে আরও একটি নতুন মাইলফলক যুক্ত হয়েছে। এটা নিয়ে কোন অপারেটর অনিয়ম করতে চাইলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিটিআরসি জানায়, গত বছর নবেম্বরে চারটি কোম্পানিকে মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার অবকাঠামো ভাগাভাগি সংক্রান্ত টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্স দিয়েছে সরকার। যে চারটি প্রতিষ্ঠান টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্স পেয়েছে সেগুলো হলো ইডটকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড, সামিট পাওয়ার লিমিটেড, কীর্তনখোলা টাওয়ার বাংলাদেশ লিমিটেড ও এবি হাইটেক কনসোর্টিয়াম লিমিটেড। সম্প্রতি রাজধানীর ১৫ এলাকায় বিটিআরসি কোয়ালিটি অব সার্ভিস (কিউওএস) পরীক্ষা চালায়। এতে যান্ত্রিকভাবে ৯০ সেকেন্ডে ৩ হাজার ৩শ’ কল করা হয়। পরীক্ষায় দেখা গেছে গ্রামীণফোনের কলড্রপ হার ৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ, রবির ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ, বাংলালিংকের শূন্য দশমিক ৫৮ শতাংশ ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিটকের ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। বিটিআরসির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রামীণফোনে সংযোগের জন্য গড়ে ১০ দশমিক ১৪ সেকেন্ড সময় লেগেছে। পাশাপাশি রবিতে ৬ দশমিক ১৫ সেকেন্ড, বাংলালিংকে ৭ দশমিক ৬৯ সেকেন্ড ও টেলিটকে ৭ দশমিক ১১ সেকেন্ড অপেক্ষা করতে হয়েছে। ডায়াল করা নম্বরে সংযোগ পাওয়ার জন্য বিটিআরসির আদর্শ অপেক্ষা সময় ৭ সেকেন্ড। লাইসেন্সের শর্ত ছিল প্রথম বছর প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেশের সব বিভাগীয় শহরে সেবা সম্প্রসারণ করতে হবে। দ্বিতীয় বছর জেলা শহর, তৃতীয় বছর ৩০ শতাংশ উপজেলা, চতুর্থ বছর ৬০ শতাংশ উপজেলা ও পঞ্চম বছর দেশের সব উপজেলায় টাওয়ার সেবা দিতে হবে। টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্সের জন্য লাইসেন্স ফি ২৫ কোটি টাকা, বার্ষিক নবায়ন ফি ৫ কোটি টাকা এবং দ্বিতীয় বছর থেকে বিটিআরসির সঙ্গে রাজস্ব ভাগাভাগি হবে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হারে। এ ছাড়া সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলে জমা দিতে হবে ১ শতাংশ হারে। লাইসেন্সের মেয়াদকাল ১৫ বছর। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অর্থ সংকটে দীর্ঘদিন ধরে মোবাইল ফোন অপারেটররা তাদের নেটওয়ার্কে বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে পারেনি। এই অবস্থায় টাওয়ার বিক্রি থেকে যে অর্থ পাবে তা যদি নতুন টেকনোলজি ও নেটওয়ার্কে বিনিয়োগ করে তাহলে গ্রাহক ভোগান্তি অনেক কম হবে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ১ বছরের মধ্যে মোবাইল নেটওয়ার্কে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসবে। এতে গ্রাহক সেবায় ব্যাঘাতসহ সরকারের ডিজিটাল কার্যক্রমও ভেস্তে যাবে। বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ এর আগেও অপারেটরদের কারসাজিতে নম্বর পরিবর্তন না করে অপারেটর পরিবর্তন অর্থাৎ এমএনপি সেবা চালু করতেও দীর্ঘদিন সময় লেগেছে। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের হস্তক্ষেপে চালু করা সম্ভব হয়। লাইসেন্স পাওয়ার ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও কোন টাওয়ার কোম্পানি তাদের কার্যক্রম এখনও শুরু করেনি। আইন অনুযায়ী লাইসেন্স দেয়ার পর দিন থেকেই মোবাইল ফোন অপারেটররা আর টাওয়ার ব্যবসা করতে পারবে না। তাদের নিজস্ব টাওয়ারও লাইসেন্স পাওয়া ৪ টাওয়ার কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দিতে হবে। এরপর তাদের কাছ থেকে ভাড়া বা বৈধ পন্থায় টাওয়ার সেবা নিতে হবে। কিন্তু বিক্রি দূরের কথা এখন পর্যন্ত টাওয়ারের মূল্য পর্যন্ত নির্ধারণ করে দিতে পারেনি বিটিআরসি। এ সুযোগে বিদেশী একটি কোম্পানির দখলে চলে গেছে টাওয়ার ব্যবসার পুরো নিয়ন্ত্রণ। লাইসেন্স পাওয়া এক অপারেটর জানিয়েছে, ইতোমধ্যে তারা গড়ে প্রতিটি কোম্পানি ৪৫ থেকে ৫০ কোটি টাকা খরচ করে ফেলেছেন। এই বিনিয়োগ ইডটকোর আরও বেশি। পুঁজি নিয়ে অপেক্ষা করছে ৩ কোম্পানি। কিন্তু সরকার ও অপারেটরদের কাছ থেকে কোন ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছে না। মোবাইল ফোন অপারেটরদের সঙ্গে তাদের একাধিক বৈঠক হয়েছে। অপারেটররা কালক্ষেপণের জন্য বিদ্যমান টাওয়ারের দাম হাঁকা হচ্ছে আকাশছোঁয়া। বিটিআরসি সূত্রমতে, মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ ও অবকাঠামো ব্যবস্থাপনায় বিপুল ব্যয়ের পাশাপাশি টাওয়ারের অনিয়ন্ত্রিত সংখ্যা, ভূমি ও বিদ্যুতের সংকট ছাড়াও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাবের বিভিন্ন দিক বিবেচনায় মানসম্মত টেলিযোগাযোগ সেবা দেয়ার লক্ষ্যে এ লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল। মোবাইল টাওয়ার লাইসেন্স রোলআউটের ওপর ভিত্তি করে মোবাইল ফোন অপারেটররা কোন নতুন টাওয়ার স্থাপন করতে পারবে না। এ ছাড়া এক অপারেটর আরেক অপারেটরের কাছে আর টাওয়ার ভাড়া দিতে পারবে না। তবে লাইসেন্স পাওয়া টাওয়ার কোম্পানির কাছেও তাদের টাওয়ার বিক্রি করতে পারবে।
×