স্কুলের প্রশ্নপত্রে পর্নো তারকার নাম ॥ শোরগোল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে পর্নো তারকা অভিনেত্রী সানি লিয়ন ও মিয়া খলিফার নাম যুক্ত করে রীতিমতো শোরগোল ফেলে দিয়েছে রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশন উচ্চ বিদ্যালয়। তবে কেবল নাম যুক্ত করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। নবম শ্রেণীর বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষার প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়েছে, ‘বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতার নাম কি?’ প্রশ্নের সম্ভাব্য যে চারটি উত্তর দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে পর্নো তারকা মিয়া খলিফার নাম! বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি উপন্যাসের প্রশ্নে লেখক হিসেবে রাখা রয়েছে সানি লিয়নের নাম! এদিকে ঘটনায় তীব্র সমালোচনার প্রেক্ষাপটে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। শুক্রবার মহাখালীর তিতুমীর কলেজে ১৫তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের মন্ত্রী এ কথা জানান। তিনি বলেন, রামকৃষ্ণ মিশন উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর বাংলা প্রথম পত্রে দুটি প্রশ্নে সম্ভাব্য উত্তরে দুই পর্নো তারকার নাম ছাপার ঘটনা অনাকাক্সিক্ষত। সরকার বিষয়টি খতিয়ে দেখবে এবং দায়ী ব্যক্তির বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন, এনটিআরসিএ এর চেয়ারম্যান এস এম আশফাক হুসেন প্রমুখ। জানা গেছে, নবম শ্রেণীর বাংলা প্রথম পত্রের বহু নির্বাচনী অংশের দুটি প্রশ্নে উত্তরে চারটি অপশনের একটিতে দুই পর্নো স্টার সানি লিওন এবং মিয়া খলিফার নাম ব্যবহার করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্রে এমন অসংলগ্নতায় সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। প্রশ্নপত্রে কীভাবে পর্নো তারকার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়, তা দেখে রীতিমতো হতবাক অভিভাবকরা। একটি বহু নির্বাচনী প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়েছে, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতার নাম কি? এই প্রশ্নের সম্ভাব্য যে চারটি উত্তর দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে পর্নো তারকা মিয়া খলিফার নাম! তবে তার নাম লেখা হয়েছে ‘মিয়া কালিফা’। আরেকটি প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়েছে, ‘আম-আটির-ভেঁপু’ কার রচিত? এই প্রশ্নের সম্ভাব্য চারটি উত্তরের একটি নাম সানি লিয়ন। এমন প্রশ্নেœই গত বুধবার পরীক্ষা নিয়েছে ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন উচ্চ বিদ্যালয়। প্রশ্নপত্রটির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা জন্ম দিয়েছে তুমুল সমালোচনার। এছাড়া এই প্রশ্নপত্রে রয়েছে এমন আরও অদ্ভুত বিষয়। চতুর্থ প্রশ্নটিতে প্রমথ চৌধুরীর পৈত্রিক নিবাস কোথায় এমন প্রশ্নের সম্ভাব্য উত্তরে রাখা হয়েছে রাজধানীর বলধা গার্ডেনের কথা। তবে নামটি লেখা হয়েছে ‘বলদা গার্ডেন’। ২২ নম্বর প্রশ্ন শেষে যতীন্দ্রমোহন বাগচীর বিখ্যাত ‘কাজলা দিদি’ কবিতার প্রথম দুটি লাইন উদ্দীপক হিসেবে দেয়া হলেও তাতে ‘শোলোক’ শব্দটিকে ভুল করে লেখা হয়েছে ‘শ্লোক’। প্রশ্নপত্রের ১২ নম্বর প্রশ্নের শেষে ‘উদ্দীপক পড়ে ১৩ ও ১৪ সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দাও’ লেখা হলেও সেখানে কোন উদ্দীপকের উপস্থিতিই নেই। আবার ৯ নম্বর প্রশ্নটিই পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে ১৯ নম্বর প্রশ্নে। এছাড়া বেশকিছু বানান ভুল তো আছেই। বিষয়টি নিয়ে রামকৃষ্ণ মিশন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয় প্রকাশ বলেছেন, এটি অনিচ্ছাকৃত ভুল। আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলাম না। তাছাড়া আমি ফেসবুক ব্যবহার করি না বলে বিষয়টি প্রথমে জানতে পারিনি। অভিযুক্ত শিক্ষককে নিয়ে আমরা মিটিং করেছি। শীঘ্রই তার বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে। জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির বাংলা বিষয়ের শিক্ষক শংকর চক্রবর্তী প্রশ্নপত্রটি তৈরি করেছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি মানবিক ভুল। আমি বুঝতেই পারিনি এটি এমন বিতর্ক তৈরি করবে। প্রধান শিক্ষকের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। আর কখনও এমন ভুল হবে না। এই ভুলের জন্য যে কোন শাস্তি মাথা পেতে নিতে রাজি আছেন বলেও জানান তিনি।