ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

খালের মুখ সম্পূর্ণ ভরাট থাকায় নৌ চলাচল বন্ধ

দখল দূষণে বিপন্ন চাঁনখালী খাল

প্রকাশিত: ০৯:০৫, ২১ এপ্রিল ২০১৯

দখল দূষণে বিপন্ন চাঁনখালী খাল

নিজস্ব সংবাদদাতা, পটিয়া, ২০ এপ্রিল ॥ খাল ভরাট, অবৈধ দখল ও দূষণে নাব্য হারাচ্ছে চট্টগ্রামের পটিয়া চাঁনখালী খাল। খালের দুইপাড়ে অবৈধ দখল ও স্থাপনার কারণে খালটি দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে। ফলে পটিয়ার লবণ শিল্প ধংসের পথে চলেছে। একশ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যবসায়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চাঁনখালী খাল ভরাট ও খালের দুইপাড়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেছে। এসবের কারণেই কাঁচা লবণবাহী ইঞ্জিনচালিত বোট চাঁনখালী খালে চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। পটিয়া লবণ মিল মালিক সমিতির পক্ষ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে একটি লিখিত অভিযোগ দিলেও খাল ভরাট বন্ধ হচ্ছে না। অভিযোগ উঠেছে, চাঁনখালী খালের দুইপাড় দখল করে লবণ কারখানা, দোকান, বসতঘর গড়ে তোলা হচ্ছে। এদিকে ইন্দ্রপোলের সঙ্গে কিরিঞ্জাখালের যে সংযোগ রয়েছে তা দীর্ঘ দুই কিলোমিটার খাল সম্পূর্ণ এখন ভরাট। যার কারণে ওই খাল দিয়ে নৌচলাচল এখন বন্ধ রয়েছে। শুধু ইন্দ্রপোল থেকে চাঁনখালী খালের উত্তর দিকে বোয়ালখালী খাল হয়ে কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। এখানকার লবণ মিল মালিকরা কক্সবাজার, চকরিয়া, মগনামা, বাঁশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, টেকনাফ ও রাজাখালী এলাকা থেকে ইঞ্জিনচালিত বোটদ্বারা নৌপথে পটিয়া ইন্দ্রপোল শিল্প নগরীতে কাঁচা লবণ আনা হয়। চাঁনখালী ও কিরিঞ্জা খালের মুখ সম্পূর্ণ ভরাট থাকার কারণে এই পথে নৌ চলাচল করা যাচ্ছে না। তাছাড়া জোয়ার-ভাটার এই খালের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু অংশে ভরাট, অবৈধ দখল ও খালের প্রায় অংশ ময়লা-আবর্জনা ফেলানোর কারণে চাঁনখালী খালের নাব্য হারাতে চলেছে। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে শিল্প মালিকরা দাবি জানিয়েছেন। জানা গেছে, পাকিস্তান আমল থেকে পটিয়া ইন্দ্রপোল লবণ শিল্প এলাকাটি ছিল। স্বাধীনতার পর ১৯৭৮ সালে এখানে বেশ কিছু লবণ শিল্প গড়ে ওঠে। কাঁচা লবণ সংগ্রহের মাধ্যমে ক্রাসিং মিলদ্বারা লবণ পরিশোধিত করে তা দেশ-বিদেশে বাজারজাত করা হয়। আগে এখানে শতাধিক মিল কারখানা থাকলেও বর্তমানে বিভিন্ন কারণে ৫০টিতে নেমে এসেছে। খালের পাড়ে যেসব শিল্প মালিকরা রয়েছে তারা প্রতিদিন খালে বিভিন্ন ধরনের ময়লা-আবর্জনা ফেলে জোয়ার-ভাটার চাঁনখালী খাল ভরাট ও দূষণ করছে। পটিয়া লবণ মিল মালিক সমিতির সহ-সভাপতি ও জে.কে সল্ট ক্রাসিং ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ জসিম উদ্দিন অভিযোগ করেছেন, আমানত সল্টের মালিক মোঃ সাইফু, চাঁনখালী সল্টের মালিক আবু তালেব সাহেল, আল্লাই সল্টের মালিক ফজলুল হক আল্লাই, এসএ সল্টের মালিক নাজিম উদ্দিন, নাছির উদ্দিনের চায়ের দোকান, আবদুল মাবুদের দোকান, রফিক সল্টের মালিক হাজী মোঃ রফিক ইসলাম, আবদুল নবীর ভাড়া বাসা, খালের পশ্চিম পাড়ে আনোয়ারা সল্টের মালিক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, মিন্টু, মোরশেদ, আইয়ুব, মোঃ তোরাব খালের পাড়ে অবৈধ স্থাপনা বিভিন্নভাবে নির্মাণ করেছে। অবৈধ দখল ও খাল ভরাট হওয়ার কারণে কক্সবাজার ও বাঁশখালী থেকে কাঁচা লবণবাহী বোট স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না। অথচ চাষী পর্যায় থেকে লবণ সংগ্রহ করে নৌপথে পটিয়ার ইন্দ্রপোল কারখানায় আনা হয়। তাছাড়া পটিয়া পৌরসভা, হাইদগাঁও, শ্রীমতি খালের পানিসহ পটিয়ার পূর্বাঞ্চলের ড্রেন ও বৃষ্টির পানি চাঁনখালী খাল হয়ে প্রবাহিত হয়। গুরুত্বপূর্ণ এই খালের বিশেষ বিশেষ অংশে ভরাট করে ফেলায় আগামী বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী খালে ময়লা-আবর্জনা ও পাথর ফেলে খাল ভরাট করে যাচ্ছে। দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু অদৃশ্য কারণে তা কার্যকর হচ্ছে না। পটিয়া ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার আ ন ম বদরুদ্দোজা জানিয়েছেন, পটিয়া ইন্দ্রপুল খালের দুই পাড়ে যথেষ্ট অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। খাল ভরাট ও স্থাপনার কারণে জোয়ার-ভাটার এই খাল প্রকৃত নক্সার সঙ্গেও মিলছে না। উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীদের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে। দখলকারীদের মৌখিকভাবে স্থাপনা সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। যদি তারা সরিয়ে না নেন তাহলে উচ্ছেদের প্রক্রিয়া করা হবে। পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল হাসান জানিয়েছেন, চাঁনখালী খাল ভরাট ও অবৈধ স্থাপনার বিষয়টি তিনি এখনও অবগত নন। তবে শীঘ্রই তা খতিয়ে দেখে উচ্ছেদের ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।
×