ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে ৬ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হচ্ছে

প্রকাশিত: ১০:২৬, ২১ এপ্রিল ২০১৯

দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে ৬ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কর্মক্ষম জনশক্তির সংখ্যার দেশ এখন রয়েছে সর্বোচ্চ অবস্থানে। এই জনশক্তিকে সম্পদে রূপান্তর করতে প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষায় জোর দিচ্ছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে দেশের ছয় জেলায় স্থাপন করা হচ্ছে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও ইনস্টিটিউট। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতায় বস্ত্র অধিদফতর এই ছয়টি প্রতিষ্ঠানের কাজ এগিয়ে নিয়ে চলেছে। ছয়টি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও ইনস্টিটিউট হলো, মাদারীপুরের শিবচরে শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, জামালপুরের মাদরগঞ্জে শেখ রাসেল টেক্সটাইল ইনস্টিউট, বরিশালের গৌরনদীতে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে বেগম আমিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, ফরিদপুর টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট এবং লালমনিরহাট টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট। গত ১৮ মার্চ প্রকল্পগুলোর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বস্ত্র অধিদফতরে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল। ওই সভার কার্যবিবরণী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কর্মসংস্থান তৈরির বিকল্প নেই। এজন্য কারিগরি শিক্ষা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। কারিগরি শিক্ষা নিলে কাউকে বেকার বসে থাকতে হয় না। তাদের জন্য দেশে চাকরি বা আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ যেমন রয়েছে, তেমনি দেশের বাইরেও উচ্চ বেতনে চাকরির সুযোগ রয়েছে। তবে, কারিগরি শিক্ষা হতে হবে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদার ভিত্তিতে। সেক্ষেত্রে বর্তমান চাহিদা হিসেবে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও ইনস্টিটিউট স্থাপনের সিদ্ধান্ত যুগোপযোগী। ড. শামসুল আলম আরও বলেন, চলমান সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কারিগরি শিক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া তৈরি হতে যাওয়া অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাতেও এই বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। তবে, আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষার সমস্যার মূলে রয়েছে শিক্ষক ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ যন্ত্রপাতির (টুলস) অভাব। ফলে, শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে সঠিক শিক্ষা পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় যেসব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও ইনস্টিটিউট করা হচ্ছে, সেগুলোর ভবন তৈরির সঙ্গে সঙ্গে আনুষাঙ্গিক সব সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এক নজরে এই ছয়টি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও ইনস্টিটিউট প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরা হলো : শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, শিবচর, মাদারীপুর ॥ পিইসি সভায় প্রকল্প পরিচালক জানান, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রকল্পের অনুকূলে ১১ কোটি ৯১ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। প্রকল্পের ৮ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। অনুমোদিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) জমি অধিগ্রহণ বাবদ ৬৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকার সংস্থান রয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত প্রাক্কলনে জমি অধিগ্রহণ বাবদ ৭২ কোটি ১৯ লাখ ৯৫ হাজার টাকার চাহিদা পাঠানো হয়েছে। এক্ষেত্রে আন্তঃঅঙ্গ সমন্বয়ের মাধ্যমে ঘাটতি ৩ কোটি ৭৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকার সংস্থান করতে ডিপিপি সংশোধনের কাজ চলছে। দ্রুত সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদনের জন্য বস্ত্রও পাট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। পিইসি সভায় জানানো হয়, প্রকল্পের ডিপিপি দ্রুত সংশোধন করে অনুমোদনের জন্য প্রকল্প পরিচালককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। আন্তঃঅঙ্গ সমন্বয়ের মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণের জন্য ঘাটতি অর্থের সংস্থান করতে হবে। সভায় প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর প্রকৌশল প্রধান (ইঞ্জিনিয়ার-ইন-চীফ, ইইনসি) শাখার প্রতিনিধি জানান, প্রকল্পের মাস্টারপ্ল্যান পাওয়া গেছে। সয়েল টেস্টও হয়েছে। শীঘ্রই পূর্ত ও নির্মাণ কাজ কাজ শুরু হবে। শেখ রাসেল টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, মাদারগঞ্জ, জামালপুর ॥ সভায় প্রকল্প পরিচালক জানান, চলতি অর্থবছরে প্রকল্পের অনুকূলে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের ব্যয় ৩৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৩৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি ৪৫ শতাংশ। অনুমোদিত ডিপিপি সংস্থান অনুযায়ী এই প্রকল্পের জন্য ৭ একর জমি অধিগ্রহণ করে জামালপুরের গণপূর্ত বিভাগকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে পূর্ত বিভাগের কাজ চলছে। প্রিন্সিপাল কোয়ার্টার ও স্পিনিং শেডের নক্সা গণপূর্ত বিভাগে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। মাস্টারপ্ল্যান ও অন্যান্য স্থাপত্য নক্সা পর্যায়ক্রমে স্থাপত্য অধিদফতরে সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চারপাশের বাউন্ডারি ওয়ালের মধ্যে তিন পাশের বাউন্ডারি ওয়ালের কাজ শুরু হয়েছে। শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, গৌরনদী, বরিশাল ॥ প্রকল্প পরিচালক পিইসি সভায় জানান, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রকল্পের অনুকূলে ৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ব্যয় ৩৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি ৪০ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি ৪২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান। অচিরেই অবকাঠামোগুলো নির্মাণের কাজ শেষ করতে হবে। প্রকল্পের সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদনের জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পিইসি সভায় গণপূর্ত প্রতিনিধি জানান, ছাত্রী হোস্টেলের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ এবং ছাত্র হোস্টেলের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ, এখন গাঁথুনির কাজ চলছে। অধ্যক্ষের কোয়ার্টার ও সাইট ডেভলপমেন্টের দরপত্র তিনবার আহ্বান করা হয়েছে। কার্যাদেশ প্রক্রিয়াধীন। অবকাঠামোগুলো শীঘ্রই নির্মাণ করা হবে। পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিনিধি জানান, সব প্রয়োজনীয় অঙ্গ যোগ করে ডিপিপি সংশোধন করতে হবে। ডিপিপি বারবার সংশোধনের প্রবণতা এড়াতে হবে। বেগম আমিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ ॥ প্রকল্প পরিচালক জানান, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রকল্পের অনুকূলে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পে মোট ব্যয় ৩২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি ৩৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ, বাস্তব অগ্রগতি ৫৫ শতাংশ। প্রকল্পের অনুমোদিত ডিপিপিতে সংস্থান দেয়া ৫ একর জমিতে অবকাঠামোগুলোর নির্মাণ কাজ চলছে। প্রকল্পের অনুমোদিত ডিপিপি পিইসি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশোধন করে তা অনুমোদনের জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। গণপূর্তের প্রতিনিধি প্রকল্প সম্পর্কে পিইসি সভায় জানান, চলমান স্থাপনাগুলোর নির্মাণ কাজ শীঘ্রই শেষ করা হবে। ফরিদপুর টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট স্থাপন, ফরিদপুর ॥ প্রকল্প পরিচালক জানান, চলতি অর্থবছরে প্রকল্পের অনুকূলে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ব্যয় ১৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি ১৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি ২০ দশমিক ২৫ শতাংশ। তিনি জানান, প্রকল্পের অনুমোদিত ডিপিপির দ্বিতীয় সংশোধন অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রক্রিয়াধীন। প্রকল্পের অনুকূলে বাজেটের অপ্রতুলতা রয়েছে। বাজেটের ২০ কোটি টাকার মধ্যে ৪ কোটি টাকা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এই টাকার প্রয়োজন রয়েছে। ৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে ইইনসি শাখাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। ইইনসি প্রতিনিধি সভায় জানান, প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। বাউন্ডারি ওয়াল ও পাইলিং এবং অভ্যন্তরীণ রাস্তা তৈরির কাজ চলমান। লালমনিরহাট টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, লালমনিরহাট ॥ পিইসি সভায় প্রকল্পটির পরিচালক জানান, চলতি অর্থবছরে প্রকল্পের অনুকূলে ১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ব্যয় ২ কোটি ২০ লাখ ১৭ হাজার টাকা। আর্থিক অগ্রগতি ১৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি ২০ শতাংশ। অনুমোদিত ডিপিপি’র সংস্থান অনুযায়ী ৫ একর জমি অধিগ্রহণ শেষ করে তা ইইনসি শাখাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। ২০১৮ সালের রেট শিডিউল অনুযায়ী প্রাক্কলনও পাঠানো হয়েছে। সে অনুযায়ী ডিপিপি সংশোধন চলছে। সেনাবাহিনীর ইইনসি শাখার প্রতিনিধি জানান, এরই মধ্যে ডিজিটাল সার্ভে ও সয়েল টেস্ট শেষ হয়েছে। প্রকল্পের মাস্টারপ্ল্যান অনুমোদিত হয়েছে। পূর্ত ও নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরু করা হবে।
×