ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

টিআইবির রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান ॥ সাংবাদিকদের তোপের মুখে এমডি

‘ওয়াসার পানির প্রতিটি ফোঁটাই সুপেয়’

প্রকাশিত: ১১:০১, ২১ এপ্রিল ২০১৯

‘ওয়াসার পানির প্রতিটি ফোঁটাই সুপেয়’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ টিআইবির (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) গবেষণা প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে ঢাকা ওয়াসা। টিআইবির প্রতিবেদন মনগড়া হিসেবে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। ওয়াসার এমডি প্রকৌশলী তাকসিম এ খান টিআইবির প্রতিবেদন নিয়ে বলেছেন, ওয়াসার পানি ফুটিয়ে খাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ওয়াসা যে পানি উৎপাদন করে তার প্রতিটি ফোঁটাই সুপেয়। টিআইবি একপেশে মনগড়া একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদনের কোন ভিত্তি নেই। এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করে ঢাকা ওয়াসাকে মানুষের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করেছে। শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। টিআইবির প্রতিবেদনের প্রতিবাদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা ওয়াসার পরিচালক আবুল কাশেম, একেএম শহিদ উদ্দিন, বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক উত্তম রায় উপস্থিত ছিলেন। ওয়াসার এমডি বলেন, গত ১৭ এপ্রিল টিআইবির পক্ষ থেকে ‘ঢাকা ওয়াসা : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানে অভিযোগ করা হয়েছে, ঢাকা ওয়াসার পানি ফুটিয়ে পান করতে গ্রাহককে প্রতি বছর ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাস পোড়াতে হয়। ৯১ শতাংশ গ্রাহক ওয়াসার পানি ফুটিয়ে পান করেন। ওয়াসার সেবা নিতে হলে সাড়ে ৩৭ শতাংশ গ্রাহককে ঘুষ দিতে হয়। এ ছাড়া ঢাকা ওয়াসায় সুশাসনের অভাব, এমডির একনায়কত্ব, অনিয়ম, জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয় ওই প্রতিবেদনে। টিআইবির প্রতিবেদনের জবাব দিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তাকসিম এ খান তার দায়িত্ব পালনের বিগত প্রায় এক দশক সময়ে ওয়াসার সফলতার চিত্র তুলে ধরেন। বিদেশী গণমাধ্যমে ঢাকা শহরের পানি ব্যবস্থাপনার সফলতা সংবলিত বিভিন্ন প্রতিবেদনও সাংবাদিকদের হাতে পৌঁছে দেন। টিআইবির গবেষণাপত্রের ধরন, কৌশল ও উপস্থাপন দেখে এটা সহজেই দৃষ্টিগোচর হয় যে মনগড়া তথ্য দিয়ে ঢাকা ওয়াসাকে নগরবাসীর কাছে হেয় প্রতিপন্ন করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। এটি কোন প্রফেশনাল গবেষণা নয়, এটি একটি একপেশে প্রতিবেদন। এটি তাদের মন গড়া। এই প্রতিবেদনের ফলে ওয়াসা সম্পর্কে জনমনে একটি ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হবে। যাতে জনমনে কোন ভ্রান্ত ধারণা না থাকে সেজন্য আজকের এই সংবাদ সম্মেলন। ওয়াসার উৎপাদিত প্রতিটি পানির ফোঁটাই সুপেয় হিসেবে উল্লেখের পরই সাংবাদিকদের প্রশ্রবাণে জর্জরিত হতে শুরু করেন তাকসিম এ খান। একজন সাংবাদিক তার বাসার ট্যাপ থেকে দুই গ্লাস পানি পানের অনুরোধ জানান। আরেকজন সাংবাদিক বলেন, এখানে যারা আছেন তারা ওয়াসার পানি না ফুটিয়ে পান করেন কিনা। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা হাত তুলে জানান তারা প্রত্যেকেই পানি ফুটিয়ে পান করেন। ওয়াসার পানির মানের প্রতি তাদের কোন আস্থা নেই। আরেকজন সাংবাদিক বলেন, সংবাদ সম্মেলনে ওয়াসার দু’জন পরিচালক মঞ্চে বসে আছেন, যাদের ওয়াসার জনবল কাঠামোকে অবজ্ঞা করে অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আর ওয়াসার বর্তমান যিনি প্রধান প্রকৌশলী তাকে জ্যেষ্ঠ ছয়জনকে সুপারসিড করে পদোন্নতি দিয়ে প্রধান প্রকৌশলীর পদে বসানো হয়েছে। এ রকম নানা অনিয়ম নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে অনেক প্রশ্নই তিনি এড়িয়ে যান। এক পর্যায়ে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের সদস্য সাংবাদিক শাবান মাহমুদ বলেন, আজ ওয়াসার এমডিকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে হচ্ছে। তবে আগে কি হয়েছে তা আমি জানি না। আমি বোর্ডের সদস্য হওয়ার পর থেকে কোন অনিয়ম হয়নি। অনেক সিদ্ধান্ত বোর্ডের আপত্তির কারণে বাস্তবায়িত হয়নি। টিআইবিকে উদ্দেশ্য করে ওয়াসার এমডি বলেন, পানির সংযোগ এবং গভীর নলকূপ স্থাপনের জন্য অনলাইনে আবেদনের নিয়ম চালু করায় অনিয়ম ও দুর্নীতির কোন সুযোগ নেই। মিটার রিডার যাতে বাড়ির মালিকদের সঙ্গে যোগসাজশ করতে না পারে সে জন্য ইতোমধ্যে মিটার অটোমেশন পাইলটিং সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। অল্পদিনের মধ্যে পানির মিটার অটোমেশনের আওতায় আনা হবে। এছাড়া সিস্টেম লস ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে আনা হয়েছে। রাজস্ব আয় অনেক বেড়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা কমছে। কিন্তু টিআইবি গ্যাস পোড়ানো বাবদ যে ৩৩২ কোটি টাকার হিসাব দিয়েছে সেটা মনগড়া। কারণ বাসাবাড়িতে গ্যাসের দাম ফিক্সড। গ্রাহক যাই ব্যবহার করুক না কেন তাকে আটশ টাকাই বিল দিতে হয়। কাজেই গ্রাহকের অতিরিক্ত খরচের কোনো প্রশ্নই আসে না। তবে কিছু গ্রাহক ফুটিয়ে পানি পান করেন। এটা না করলে দেশের গ্যাস সম্পদের কিছু সাশ্রয় হতো। আর ৯১ শতাংশ গ্রাহক যদি পানি ফুটিয়েই খাবে তাহলে বাজারে এত পানির জার ও বোতল পানি বিক্রি হয়, সেগুলো কারা পান করেন- এ প্রশ্ন রাখেন তিনি। এমডি বলেন, ওয়াসার পানি সুপেয়। তবে পাইপলাইনে দু-একটি লিকেজ ও বাসাবাড়ির পানির ট্যাঙ্ক ঠিকমতো পরিষ্কার না করার কারণে পানি দূষিত হয়ে থাকতে পারে। এ বিষয়ে ওয়াসা বিভিন্ন সময় নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষাও করেছে। কিন্তু টিআইবি কোনো পরীক্ষা না করেই মনগড়া প্রতিবেদন দিয়েছে। ওয়াসা টিআইবির প্রতিবেদনের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
×