ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে এসেছে আরেকটি এলএনজি টার্মিনাল

প্রকাশিত: ১১:০২, ২১ এপ্রিল ২০১৯

দেশে এসেছে আরেকটি এলএনজি টার্মিনাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে আরও একটি ভাসমান তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল এসে পৌঁছেছে। শনিবার সকাল ৯টায় মহেশখালীর ৬ কিলোমিটার দূরে টার্মিনালটি এসে নোঙর করে। দেশের বিদ্যুতখাতে বেসরকারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে সব থেকে বড় কোম্পানি সামিট গ্রুপ নতুন এই ব্যবসার সম্প্রসারণ করল। চলতি মাসের শেষে আগামী ২৮ বা ২৯ এপ্রিল জাতীয় গ্রিডে আরও ১০০ থেকে ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যোগ হবে। অন্যদিকে বাকি গ্যাস জাতীয় গ্রিডে আনতে জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান বলেন, সামিট টেকসই উন্নয়নে প্রতিশ্রুতবদ্ধ। এতদিন আমরা বিদ্যুতখাতে সুনামের সঙ্গে কাজ করছি। আশা করছি জ্বালানি সরবরাহে আমাদের সেই ধারা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, সরকার উন্নত দেশ গড়তে সাহসী নেতৃত্ব দিচ্ছে। বদলে যাওয়া বাংলাদেশের প্রত্যাশায় সামিট সরকারের সেইসব উদ্যোগের সঙ্গে রয়েছে। সামিট বলছে, গত ৬ এপ্রিল কাতার থেকে সামিট এলএনজির রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) টি বাংলাদেশের উদ্দেশে যাত্রা করে। টার্মিনালটি প্রথম ধাপে এক লাখ ৩৭ হাজার ঘনমিটার এলএনজি নিয়ে এসেছে। টার্মিনাল প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করারর ক্ষমতা সম্পন্ন। সামিট এলএনজি টার্মিনাল আনলেও বাংলাদেশ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি জিটিসিএল কতটা প্রস্তুত জানতে চাইলে একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে ইন্টারকানেশনটি শেষ হবে। শনিবার সন্ধ্যায় তিনি বলেন, এই সংযোগ হলে ১০০ থেকে ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আনা সম্ভব। অন্যদিকে সমান্তরাল দুটি নির্মাণাধীন পাইপলাইন শেষ করতে আগামী মাসেও জিটিসিএলকে কাজ করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করছি মে মাসের শেষ নাগাদ পাইপলাইনের কাজ শেষ হবে। সামিট সূত্র বলছে, পেট্রোবাংলা চাইলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তারা এলএনজি সরবরাহ করতে পারবে। তবে এলএনজি সরবরাহের আগে সাবসি পাইপলাইনের (সাগরের তলদেশ দিয়ে নির্মাণ করা পাইপলাইন) চাপ পরীক্ষা করতে হবে। গত বছর এক্সিলারেট এনার্জির পাইপলাইনে এই চাপ পরীক্ষার সময় বিপত্তি হয়। এজন্য টার্মিনাল আসার তিন মাস পর থেকে এলএনজি সরবরাহ শুরু হয়। এর আগে গত ১৮ আগষ্ট থেকে এলএনজি সরবরাহ শুরু করে মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি। কিন্তু এর আগে মহেশখালি থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত যে পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে তা দিয়ে সর্বোচ্চ ৬৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ সম্ভব। সঙ্গত কারণে সামিটের সঙ্গে চুক্তি করার পর আরও একটি পাইপ লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। যদিও আশঙ্কা রয়েছে এই পাইপ লাইনের কাজ শেষ করতে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সামিটও এক্সিলারেট এনার্জির মতোই শুধু রিগ্যাসিফিকেশন চার্জ নেবে। পেট্রোবাংলা এলএনজি ক্রয় করে আনলে শুধু এলএনজিকে গ্যাসে রূপান্তর করে দেবে সামিট এলএনজি। প্রসঙ্গত ২০১৭ সালের ২০ এপ্রিল এই টার্মিনাল নির্মাণ এবং এর ব্যবহারে সামিট গ্রুপের সঙ্গে পৃথকভাবে দুটি চুক্তিতে সই করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং পেট্রোবাংলা। চুক্তি অনুযায়ী সামিট সমুদ্রে তলদেশে নয় কিলোমিটার গ্যাস পাইপলাইনসহ দেশের দ্বিতীয় ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের নির্মাণ, মালিকানা, পরিচালনা ও হস্তান্তর করবে। টার্মিনালটি ১৫ বছর ধরে পরিচালনার পর পেট্রোবাংলার কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে সামিট। এজন্য পেট্রোবাংলাকে প্রতি মিলিয়ন বিটিইউ গ্যাসের বিনিময়ে ৪৫ সেন্ট (যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৩৭ টাকার মতো) সামিটকে পরিশোধ করতে হবে। আর ওই গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করবে জিটিসিএল। টার্মিনালে এলএনজি রিগ্যাসিফিকেশনের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন টন (এমপিটিএ)। প্রসঙ্গত সামিটের সঙ্গে প্রকল্পটির ২৫ ভাগ অংশীদার জাপানের মিতসুবিশি।
×