ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

নদী বাঁচাতে মাস্টারপ্ল্যান

প্রকাশিত: ০৮:২২, ২৩ এপ্রিল ২০১৯

নদী বাঁচাতে মাস্টারপ্ল্যান

চট্টগ্রামের কর্ণফুলীসহ রাজধানীর চারপাশের নদ-নদী সর্বোপরি দেশের সব নদী ও শাখা নদীকে দখল-দূষণমুক্ত করে সারা বছর ধরে নাব্য রাখার জন্য সরকার একটি মাস্টারপ্ল্যান তথা মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এতে একদিকে যেমন নদীমাতৃক বাংলাদেশের আবহমান চিরায়ত প্রকৃতি ও রূপ ফিরে আসবে, তেমনি নৌযান চলাচলের মাধ্যমে ব্যবসাবাণিজ্য সম্প্রসারণসহ মানুষের যাতায়াতের পথ সহজ, সুগম ও সুলভ হবে। এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান করা হয়েছে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীকে। এই কমিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হবে। প্রাথমিকভাবে এর জন্য সময়সীমা ধরা হয়েছে ১০ বছর, যা বাড়তে পারে আগামীতে। উল্লেখ্য, লন্ডনের বিখ্যাত টেমস নদীও এক সময় গার্বেজ ডাম্পিং সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল এর নাব্যাবস্থা। সেই টেমসকে বর্তমান নাব্য ও পূর্বাবস্থায় ফেরাতে সময় লেগেছে ৫০-৫৫ বছর। বর্তমান সরকার যে দেশের নদ-নদীকে সারা বছর ধরে নাব্য, দখল ও দূষণমুক্ত রাখতে সচেষ্ট ও আন্তরিক তা ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে। তুরাগ, বুড়িগঙ্গা, বালু ও শীতলক্ষ্যায় প্রায় নিয়মিতই চলছে উচ্ছেদ অভিযান। নদী দখল ও দূষণ প্রতিরোধে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। সারাদেশে নদীর নাব্য ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য দুই হাজার ৩৬৮ কিলোমিটার নৌপথ উদ্ধারে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০১২ সালে একনেক কর্তৃক অনুমোদিত ১১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। ৫৩টি নৌরুটের ১২ হাজার নৌপথ খননের প্রথম পর্যায় ২৪টি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ২৯টি নদী খননের পরিকল্পনা রয়েছে। এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে নৌপথ সচলের পাশাপাশি সারা বছর নদীর নাব্য রক্ষাসহ সেচ সুবিধা ও চাষাবাদ অপেক্ষাকৃত সহজ ও সম্প্রসারিত হবে নিঃসন্দেহে। ইলিশসহ মাছের উৎপাদনও বাড়বে। প্রতীয়মান হয় যে, এবার সত্যিই আটঘাট ও দৃঢ় সংকল্প হয়ে সরকার নেমেছে দেশের নদ-নদীর সুরক্ষায়। তবে এর পাশাপাশি নদীর নাব্য রক্ষায় প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান এমনকি চীন-মিয়ানমারকেও সংযুক্ত করতে হবে আগামীতে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ৮ শতাধিক নদ-নদী এবং ৫৭টি আন্তঃদেশীয় সংযোগ নদী রয়েছে। এগুলোর সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান, সিকিম, এমনকি চীনও জড়িত। সুতরাং আন্তঃদেশীয় পানি ব্যবস্থাপনা ও সুসম বণ্টনের ক্ষেত্রেও এসব দেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য। পানিসম্পদের সুষ্ঠু ও সমন্বিত ব্যবস্থাপনার জন্য উন্নয়ন সহযোগী ১২টি দেশের সহযোগিতায় ‘বাংলাদেশে ডেল্টা প্ল্যান (বিডিপি) ২১০০’ নামে যুগান্তকারী একটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত এই পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় আগামী এক শ’ বছরে পানির প্রাপ্যতা, এর ব্যবহারসহ প্রতিবেশ ও পরিবেশগত বিষয়সমূহ বিবেচনায় রাখা হয়েছে। আন্তঃদেশীয় সীমান্ত পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ‘যৌথ নদী কমিশন জেআরসি’ গঠনের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালে ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদী পানি চুক্তির মাধ্যমে গঙ্গা নদীর পানি সমস্যার সমাধান হলেও তিস্তা, ফেনী নদীর পানিসহ গঙ্গ ব্যারাজ পরিকল্পনাটি ঝুলে আছে দীর্ঘদিন থেকে। অথচ দু’দেশের জনসাধারণের অভিন্ন স্বার্থে ভারতের এক্ষেত্রে ইতিবাচক মনোভাব দেখানো বাঞ্ছনীয়। এর পাশাপাশি সুদূরপ্রসারী পানি ব্যবস্থাপনার জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় ভারতসহ নেপাল, ভুটান, সিকিম, চীন ও মিয়ানমারকে অন্তর্ভুক্ত করা বর্তমান সময়ের অন্যতম দাবি। মনে রাখতে হবে যে, নদী না বাঁচলে বাঁচবে না বাংলাদেশও।
×