ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রেলের শতকোটি টাকা আয়ের উৎস অবৈধ দখলদারদের কবলে

প্রকাশিত: ০৯:৪৩, ২৩ এপ্রিল ২০১৯

রেলের শতকোটি টাকা আয়ের উৎস অবৈধ দখলদারদের কবলে

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ রেলভূমি বরাদ্দে নীতিমালা রয়েছে ঠিকই কিন্তু নীতিমালার আলোকে ভূমি বরাদ্দের জন্য আবেদনকারীরা বছরেরও বেশি সময় অপেক্ষমাণ রয়েছেন। মুষ্টিমেয় বৈধ আবেদনকারীদের ভূমি বরাদ্দ না দিয়ে বছরের পর বছর ফাইলবন্দী করে রাখা হয়েছে। কিন্তু অবৈধ দখলদাররা কোন ধরনের আবেদন না করেই ভাড়া বাণিজ্য চালাচ্ছে রেলের জায়গায়। বছরে প্রায় শতকোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকার। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে এ ধরনের ক্ষতি গুনতে হচ্ছে সরকারকে। ২০১৫ সালের অক্টোবরে রেল মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে বছরের পর বছর অপেক্ষমাণ থাকা আবেদনকারী ও ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে রেল ভূমি ব্যবহারকারীদের তালিকা প্রণয়নের নির্দেশনা দেয়া হয়। এ বিষয়ে তখন মন্ত্রণালয়ের একান্ত সচিব, মহাপরিচালকের একান্ত সচিব ও জিএম পূর্ব এবং পশ্চিমকে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছিল। এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ২০১৬ সালের মে মাসের বৈঠকে রেল ভূমিতে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণসহ সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদ-ে দ-িত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, নীতিমালা অনুযায়ী বৈধভাবে আবেদনকারীদের লাইসেন্স প্রণয়নের বিষয়ে কোন ধরনের সিদ্ধান্ত না নেয়ার বিষয়টি। অভিযোগ রয়েছে, রেল ভূমিতে প্রণয়নকৃত মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় থাকা আবেদনকারী ও ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায়কারীদের তালিকা প্রণয়নের জন্য স্টেশনভিত্তিক ও বিভাগওয়ারী ভূসম্পত্তি বিভাগকে তখন তিন মাসের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হলেও উপেক্ষিত হয়েছে। কোন ধরনের তালিকা প্রণয়ন না করায় ভূমি ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে, জনবল সঙ্কটের কারণে ভূসম্পত্তি বিভাগগুলো তালিকা প্রণয়ন করতে পারেনি। ২০১৫ সালের ২ নবেম্বর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তার দফতর থেকে বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তার দফতরে এ ধরনের তালিকা প্রণয়নের জন্য চিঠি প্রেরণ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘ সাড়ে তিন বছরেও তালিকা প্রেরণ করা হয়নি । জানা গেছে, এর আগে ২০১২ সালের ১৯ ডিসেম্বর মহাপরিচালকের দফতরে পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তার দফতর থেকে রেল ভূমি ব্যবহারে ক্ষতিপূরণ আদায় ও লাইসেন্স প্রদানের জন্য চিঠি প্রেরণ করা হয়। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৬ সালের ১৫ মার্চ জারিকৃত ও প্রচলিত নীতিমালায় ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিধান রাখা হয়নি। কিন্তু রেলভূমি বরাদ্দের নির্দেশনা রয়েছে। ফলে পূর্বাঞ্চলীয় বিভিন্ন স্টেশনসংলগ্ন এমনকি বিভাগীয় শহরে অনুমোদিত মাস্টারপ্ল্যানভুক্ত ভূমিতে অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছে অনেকেই। আবার নীতিমালা অনুযায়ী আবেদনকারী ও ক্ষতিপূরণদাতা ব্যবসায়ীরা অনেক বছর ধরে ব্যবসা পরিচালনা করলেও বৈধতার জন্য লাইসেন্স দাবি করলেও তা দেয়া হয়নি। বরং ক্ষতিপূরণ আদায় বন্ধ রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে পরামর্শ দেয়া হয়েছে মাস্টারপ্ল্যান অনুমোদন করে টেন্ডার আহ্বান করা হলে প্রায় শতকোটি টাকা রাজস্ব আদায় সম্ভব। অভিযোগ রয়েছে, কিছু কিছু এলাকায় মাস্টারপ্ল্যান অনুমোদন করে টেন্ডার আহ্বান করা হলে ওই টেন্ডারের বিরুদ্ধে অবৈধ দখলদাররা উচ্চ আদালতে মামলা দিয়ে স্থগিতাদেশ জারি করে টেন্ডার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়াও কিছু কিছু ভূমি উচ্ছেদ করা হলেও কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় পুনরায় বেদখল হয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের ঘটনায় অবৈধ দখলদারদের চক্রান্তে পড়ে বৈধ লাইসেন্সধারীরাও রাজস্ব পরিশোধে অনীহা প্রকাশ করছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের অক্টোবরে রেল মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, রেল ভূমিতে থাকা ও মাস্টারপ্ল্যানের আওতাভুক্ত জায়গায় অবৈধভাবে বসবাসকারীদের তালিকা প্রণয়নের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। সে নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১৫ সালের ২৫ অক্টোবর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে এক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় পূর্বাঞ্চলে এখতিয়ারভুক্ত সকল স্টেশন এলাকায় বৈধ ও অবৈধ দখলদারের তালিকা প্রণয়ন করে মাস্টারপ্ল্যান চিহ্নিতকরণ এবং অবৈধ দখলদারদের তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশনা দেয়া হয়। মাস্টারপ্ল্যানভুক্ত জায়গায় যারা অবৈধভাবে ব্যবসা করছে তাদের তালিকা প্রণয়নেরও নির্দেশনা দেয়া হয়। মাত্র তিন মাস সময় বেঁধে দেয়া হলেও সাড়ে তিন বছরেও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে বৈধ আবেদনপত্রের ভিত্তিতে লাইসেন্সের অপেক্ষাকৃতরা যেমন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে, তেমনি ক্ষতিপূরণ প্রদানকারীরাও চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে ব্যবসা পরিচালনা করছে। মূলত রেলের নীতিমালা অনুযায়ী বাংলাদেশী নাগরিককে ভূমি বরাদ্দের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু মুষ্টিমেয় স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে নীতিমালা যেমন উপেক্ষিত হচ্ছে, তেমনি হয়রানির শিকার হচ্ছে বৈধভাবে লাইসেন্সের আবেদনকারীরা।
×