ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাপ্তাই হ্রদে অস্বাভাবিক ভাবে পানি শুকানোর ফলে নৌচলাচল বন্ধ

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৩ এপ্রিল ২০১৯

কাপ্তাই হ্রদে অস্বাভাবিক ভাবে পানি শুকানোর ফলে নৌচলাচল বন্ধ

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাঙ্গামাটি ॥ প্রখর রোদ্রে কাপ্তাই হ্রদের পানি অস্বাভাবিক ভাবে শুকিয়ে যাওয়ায় রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার ৬টি উপজেলার নৌপথ বন্ধ হয় গেছে। এর ফলে ওই উপজেলা গুলোর প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ চলাচলের ক্ষেত্রে চরম দূর্ভোগে পড়েছে।একই সঙ্গে কাপ্তাই জল বিদ্যুত কেন্দ্রে ও বিদ্যুত উৎপাদনে ধস নেমেছে। গত সোমবার বিকাল পর্যন্ত লংগদু ও বিলাইছড়ি উপজেলায় কোন রকমে সচল থাকলেও আজ মঙ্গলবার থেকে কাপ্তাই হ্রদ বেষ্টিত ৬ টি উপজেলা বিলাইছড়ি-লংগদু-বরকল-জুরাছড়ি-বাঘাইছড়ি- নানিয়ারচরসহ সব কয়টিতে নৌ রুটে পানি একেবারে কমে যাওয়ায় লঞ্চ ও ইঞ্জিন বোট চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। হ্রদে অতিরিক্ত পানি কমে যাওয়ায় কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদনে মারাত্মক ধস নেমেছে। ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্রে বর্তমানে রেশনিং পদ্ধতিতে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। হ্রদ দিয়ে বিভিন্ন রুটে বিগ্ন ঘটছে নৌযান চলাচলে। হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় শহরে পানি সরবরাহ ব্যবস্থাও যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়বে। হ্রদ থেকে পানি উত্তোলন ও সরবরাহ নিয়ে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। মঙ্গবার কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প ব্যবস্থাপক এটিএম আবজ্জুর জাহের জানান, হ্রদে পানির স্থর এখন অনেক নিচে নেমে গেছে। বর্তমানে লেকে পানি রয়েছে ৭৯.৪৩ দশমিক থাকার কথা ছিলো ৮৩.৮০ এমএসএল (মীন সী লেভেল) বর্তমানে কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে রেশনিং পদ্ধতিতে ২টি ইউনিট দিয়ে ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে। সন্ধ্যায় আরেকটি ইউনিট চালু করে রেশনিং পদ্ধতিতে উৎপাদন চালু রাখা হচ্ছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্তএ অবস্থার উন্নতি হবে না বলে তিনি জানান । বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান স্থানীয় সাংবাদিকে জানান, কাপ্তাই হ্রদের যে সকল লঞ্চ চলাচল করে সেই গুলোকে আমরা লঞ্চ চলাচলে পারমিট দেই। এই লঞ্চ চলাচলে যে ব্যাঘাত সৃষ্ট হয়েছে তা খুবই দুঃখ জনক। তিনি বলেন, ১৯৬০ সালে বাঁধ দেয়ার পর থেকে এই হ্রদ ড্রেজিং করা হয়নি। হ্রদে নাব্যতা রক্ষার জন্য ড্রেজিং করা দরকার। উল্লেখ্য, কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনে ১৯৬০ সালে খরস্রোতা কর্ণফুলি নদীর উপর দিয়ে নির্মিত হয় কাপ্তাই বাঁধ। সৃষ্টির পর বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি মৎস্য উৎপাদন, নৌ যোগাযোগ, জলেভাসা জমিতে কৃষি চাষাবাদ, সেচ, ব্যবহার্য পানি সরবরাহ, পর্যটনসহ বিভিন্ন সুযোগ ও সম্ভাবনা গড়ে ওঠে কাপ্তাই হ্রদ ঘিরে। কিন্তু সৃষ্টির পর গত ৫৯ বছরে কাপ্তাই হ্রদের কোনো সংস্কার, ড্রেজিং বা খনন করা হয়নি। ফলে বছরের পর বছর ধরে নামা পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই হ্রদে পলি জমে হ্রদের নাব্যতা নষ্ট হয়ে গেছে। নাব্যতার সংকটের কারণে এই বিশাল কাপ্তাই হ্রদ অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়েছে।
×