ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

শ্রীলঙ্কায় জঙ্গী হামলা

প্রকাশিত: ১০:৩২, ২৪ এপ্রিল ২০১৯

শ্রীলঙ্কায় জঙ্গী হামলা

কিছুতেই থামছে না রক্তপাত। নৃশংস অসুর এলোপাতাড়ি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পৃথিবীর মানচিত্রের ওপর দিয়ে। এক গোলার্ধ থেকে অন্য গোলার্ধে। নিউজিল্যান্ডে মসজিদে হামলার মাত্র ৩৫ দিনের মাথায় আবার প্রার্থনারত মানুষের রক্তে ভাসল বিশ্ব। খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বীদের ‘ইস্টার সানডে’কে সামনে রেখে আটটি স্থানে ধারাবাহিক আত্মঘাতী হামলায় শ্রীলঙ্কায় তিন শতাধিক মানুষ মারা গেছেন, যাদের মধ্যে অন্তত ৩৭ জন বিদেশী। ২০০৯ সালে ২৬ বছর স্থায়ী তামিল-শ্রীলঙ্কান গৃহযুদ্ধ অবসানের পর দেশটিতে এত বড় রক্তপাত এই প্রথম। শ্রীলঙ্কায় বেড়াতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিমের মেয়ের পরিবার। দুঃখজনক হলো, শেখ সেলিমের নাতি আট বছরের শিশু জায়ান নিহত হয়েছে। শ্রীলঙ্কায় বর্বরোচিত হামলায় যারা নিহত হয়েছেন আমরা তাদের আত্মার শান্তি কামনা করি। তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা। কারা ওই হামলা চালিয়েছে এখনও তা জানাতে পারেনি সরকার। এ নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। এএফপির খবরে জানা যায়, শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভার মুখপাত্র রাজিথা সিনারতেœ বলেছেন, দেশটির সরকার মনে করছে, স্থানীয় উগ্র ইসলামপন্থী দল ন্যাশনাল তাওহিদ জামাত (এনটিজে) ভয়াবহ এই আত্মঘাতী হামলায় জড়িত। আন্তর্জাতিক কোন গোষ্ঠী এনটিজেকে সমর্থন ও সহযোগিতা করেছে কি না, তা নিয়ে তদন্ত চলছে। এএফপি বলছে, শ্রীলঙ্কার পুলিশপ্রধান ১১ এপ্রিল হামলার ব্যাপারে সতর্ক বার্তা দিয়েছিলেন। বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে এতে বলা হয়, উগ্র ইসলামপন্থী দল এনটিজে গির্জাগুলো ও শ্রীলঙ্কায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনে হামলার ফন্দি আঁটছে। পুলিশের একটি সূত্র এএফপিকে বলেছে, হামলার পর আটক হয়েছে ৪০ জন উগ্রপন্থী দলের সদস্য। এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু জানানো হয়নি। অত্যন্ত নৃশংস, ভয়াবহ ও জঘন্য হামলার ঘটনা ঘটেছিল শান্তির দেশ নিউজিল্যান্ডে। সেখানকার মসজিদে জুমার নামাজ আদায়রত মুসল্লিদের ওপর উপর্যুপরি গুলিবর্ষণ করে একদল সন্ত্রাসী। শ্রীলঙ্কায় খ্রীস্টানদের ধর্মীয় বিশেষ অনুষ্ঠানে সদ্য ঘটল আত্মঘাতী হামলা। অনেকেই এর একটা সমীকরণ মেলাতে চাইবেন যে, ধর্মাচার পালনের সময় এক ধর্মের নিরীহ ব্যক্তিদের ওপর আক্রমণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে আক্রমণকারীরা ভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা চালিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছে। এটা সত্য হোক আর না হোক, এতে কোন সন্দেহ নেই যে, বিশ্বব্যাপী সাম্প্রদায়িক সংঘাত বাড়ছে, যা গোটা বিশ্বকেই বিপন্ন করে তুলছে। ৯/১১-এর সন্ত্রাসী হামলার পর ইউরোপ-আমেরিকায় মুসলিমবিদ্বেষী মনোভাব ও প্রচারণাকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষিতে সব ধর্মের সাধারণ মানুষকেই টার্গেট করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সন্ত্রাসীকে ধর্ম-বর্ণ দিয়ে বিবেচনার পরিবর্তে কেবল সন্ত্রাসী হিসেবে দেখতে হবে। আমরা আগেও বলেছি, কোন ধর্মেরই মূল সুর ধ্বংসাত্মক নয়, বরং সব ধর্মই শান্তির কথা বলে। শান্তি ও মানবতার ললিত বাণী সৃজনশীলভাবে প্রতিটি দেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে কী উপায়ে পৌঁছানো যায় এবং উগ্রপন্থার সব ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা রোধ করা যায়Ñ সেটিই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। এজন্য ধর্মীয় গুরু, দার্শনিক ও রাষ্ট্রনায়কদের সচেতন উদ্যোগ সবচেয়ে বেশি জরুরী। নিজ নিজ দেশের সব নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ওইসব রাষ্ট্রের শাসকদের অবশ্য কর্তব্য। এক্ষেত্রে সামান্যতম শিথিলতা ও অসতর্কতার কোন সুযোগ নেই।
×