ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

কলড্রপের বিড়ম্বনা

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ২৪ এপ্রিল ২০১৯

কলড্রপের বিড়ম্বনা

দেশের ১৫ কোটি মোবাইল ফোন গ্রাহকের কলড্রপের ভোগান্তি তথা বিড়ম্বনা কমেনি একটুও, বরং বেড়েছে। আর এর বিপুল ফায়দা নিচ্ছে সেলফোন অপারেটর কোম্পানিগুলো। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, কোম্পানিগুলো ইচ্ছা করেই এই কাজ করছে আর অহেতুক কলড্রপের ভোগান্তিতে ফেলছে গ্রাহকদের। কলড্রপের বিড়ম্বনা কমাতে গত বছরের নবেম্বরে সরকার তথা বিটিআরসি চারটি কোম্পানিকে মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার অবকাঠামো ভাগাভাগি তথা শেয়ারিং লাইসেন্স দেয়। দুঃখজনক হলো, লাইসেন্স পাওয়ার ৬ মাস অতিবাহিত হলেও টাওয়ার নির্মাণে হাত দেয়নি কোন কোম্পানিই। সরকারী আদেশ-নির্দেশ-অনুরোধ উপেক্ষা করে অজুহাত দিচ্ছে পুঁজি বিনিয়োগ ও অর্থ সঙ্কটের। এরকম চলতে থাকলে আগামী বছরখানেকের মধ্যে বিপর্যয় নেমে আসবে দেশের মোবাইল নেটওয়ার্কে। মোবাইলের কিছু নেতিবাচক দিক থাকলেও বলতেই হয় যে, সেলফোন ব্যবহারের ইতিবাচক দিকই অনেক বেশি। তবে মোবাইলের একটি বড় বিড়ম্বনা বা ভোগান্তি ‘কলড্রপ’। মোবাইল গ্রাহকরা প্রতিদিন সেলফোনে যখন তখন ‘কলড্রপ’ নিয়ে বিরক্ত ও বিব্রত হয়ে থাকেন। বিগত জাতীয় সংসদে সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী বিষয়টি তোলায় এ নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়েছে। মন্ত্রী মহোদয় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটি কলে ৪ থেকে ৫ বার কলড্রপ হয়। এটা কোন অবস্থাতেই মেনে নেয়া যায় না। বিশেষ একটি কোম্পানির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেছিলেন, প্রতিষ্ঠানটি নিছক বাণিজ্যের জন্য কলড্রপ করে থাকে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অতঃপর নড়ে-চড়ে বসে বিটিআরসি বা টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষ। তারা দেশীয় চারটি সেলফোন অপারেটর কোম্পানিকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছে, কেন ঘন ঘন কলড্রপ হচ্ছে? কোম্পানিগুলো কলড্রপ বন্ধে আদৌ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে কিনা? গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার হলেও কলড্রপের জন্য আদৌ কোন ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন কিনা! ইত্যাদি ইত্যাদি। এর উত্তর পেতে বিটিআরসি সময়ও বেঁধে দিয়েছিল পাঁচ দিন। তবে পরিস্থিতির আদৌ উন্নতি হয়নি, বরং অবনতি হয়েছে। নিকট অতীতের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, অপারেটর কোম্পানিগুলো বিটিআরসিকে প্রায়ই পাত্তা দেয় না। কলড্রপের ভোগান্তি ও ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে বিটিআরসি-এর আগেও চিঠি দিয়েছিল ৪টি কোম্পানিকে। গত বছরের শেষে মাত্র একটি কোম্পানি বছরে ৬০ লাখ মিনিট কলড্রপের হিসাব দিয়েছিল। তবে কোন ক্ষতিপূরণ দেয়নি। বাকি তিনটি অপারেটর কোম্পানি আদৌ কোন হিসাব দেয়নি। অথচ বিটিআরসি বলছে, প্রতিদিন মোবাইল অপারেটরদের গড়ে ২২২ কোটি মিনিট কলড্রপ হচ্ছে। সে অবস্থায় সীমাহীন কলড্রপে গ্রাহকের অন্তহীন ভোগান্তি ও বিড়ম্বনার বিষয়টি সহজেই অনুমেয়। অন্যদিকে এর জন্য গ্রাহকরা আদৌ কোন ক্ষতিপূরণ পান না। বিটিআরসি গ্রাহকদের কলড্রপের টাকা বা টকটাইম ফেরত দেয়ার লিখিত নির্দেশ দিলেও তাও বাস্তবায়িত হচ্ছে না। কলড্রপের হিসাব বিটিআরসিতে জমা দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয় না কোন কোম্পানিই। মোট কথা, প্রতিদিন কলড্রপ থেকে কয়েক শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো। এর ফলে গ্রাহকদের পাশাপাশি সরকারও বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে। এর যথাসত্বর অবসান হওয়া দরকার। মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো যখন তখন কারণে অকারণে ক্ষুদে বার্তা বা এসএমএস পাঠিয়েও অযথা বিরক্ত ও হয়রানি করে থাকে গ্রাহকদের। এ নিয়ে বিরক্ত সংসদ সদস্যরাও। কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও আদৌ কোন ফল মেলেনি। সম্প্রতি এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি। বিটিআরসিকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতেও বলা হয়েছে। অতঃপর সঙ্গত কারণেই আশা করা যায় যে, অতি শীঘ্রই কলড্রপ ও এসএমএস পাঠানোজনিত ভোগান্তির অবসান হবে। মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো ব্যবসা করতে হবে স্বচ্ছতা, নিয়মনীতি ও প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের ভিত্তিতে।
×