ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আইএসের দায় স্বীকার ॥ শ্রীলঙ্কায় আত্মঘাতী হামলা

প্রকাশিত: ১০:৪৯, ২৪ এপ্রিল ২০১৯

আইএসের দায় স্বীকার ॥ শ্রীলঙ্কায় আত্মঘাতী হামলা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ শ্রীলঙ্কায় তিন গির্জা এবং চার হোটেলে ভয়াবহ সিরিজ বোমা হামলায় ৩২১ জন নিহত হওয়ার ঘটনার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। মঙ্গলবার নিজেদের সংবাদ সংস্থা ‘আমাক নিউজ এজেন্সি’তে জঙ্গী সংগঠনটি দাবি করে বলেছে, ‘শ্রীলঙ্কার এই কাজ ইসলামিক স্টেটের যোদ্ধাদের ছিল।’ তবে এই দাবির পক্ষে কোন প্রমাণ উপস্থাপন করেনি সংগঠনটি। শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, নিউজিল্যান্ডে মসজিদে হামলার প্রতিশোধ নিতেই চার্চ ও হোটেলে হামলা চালানো হয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, শ্রীলঙ্কা হামলার পেছনে প্রধান সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করতে পেরেছে তারা। হামলায় নিহতদের স্মরণে মঙ্গলবার জাতীয় শোকদিবস পালন করেছে শ্রীলঙ্কা। সোমবার বর্বর এ হামলার দায় স্বীকার করে জঙ্গী সংগঠন জামায়াত আল-তাওহিদ আল-ওয়াতানিয়া। রবিবার খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বীদের বড় ধর্মীয় উৎসব ইস্টার সানডে উদযাপনের সময় দেশটির রাজধানী কলম্বো ও এর আশপাশের তিনটি গির্জা ও চারটি হোটেলসহ মোট আট স্থানে ভয়াবহ বোমা হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩২১ জন নিহত হয়েছেন। পাঁচ শতাধিক আহত আছেন। নিহতদের মধ্যে ৩৫ বিদেশী নাগরিকও রয়েছেন। হামলাটির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত ৪০ জনকে আটক করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। তাদের বর্তমানে হামলার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তারা সবাই শ্রীলঙ্কার নাগরিক। নিউজিল্যান্ডের প্রতিশোধ নিতে ইস্টার সানডের হামলা - শ্রীলঙ্কার মন্ত্রী ॥ খ্রিস্টীয় পর্ব ইস্টার সানডেতে শ্রীলঙ্কাজুড়ে গির্জায় ও পাঁচ তারা হোটেলে বোমা হামলা নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে চালানো হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ঘটানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন শ্রীলঙ্কার এক মন্ত্রী। মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টে এ মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী রাভন বিজয়বর্ধনে। ‘প্রাথমিক তদন্তে বের হয়েছে এটি নিউজিল্যান্ডের মসজিদে চালানো হামলার প্রতিশোধ হিসেবে করা হয়েছে,’ বলেছেন রাভন। শ্রীলঙ্কার হামলায় ঘটনায় দুটি স্থানীয় ইসলামী সংগঠন দায়ী, এমন ধারণা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ‘জেএমআইয়ের সঙ্গে মিলে ন্যাশনাল তাওহীদ জামায়াত এ হামলা চালিয়েছে,’ বলেছেন তিনি। জেএমআই বলতে তিনি স্থানীয় আরেকটি ইসলামী গোষ্ঠী জমিয়াতুল মিল্লাতু ইব্রাহিমকে বুঝিয়েছেন। প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রীর পর প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেও নিউজিল্যান্ড হামলার সঙ্গে শ্রীলঙ্কা হামলার যোগসূত্র খুঁজছেন। এক দশক আগে বিচ্ছিন্নতাবাদী তামিল টাইগাররা উৎখাত হওয়ার পর এমন ভয়াবহ হামলা আর দেখা যায়নি শ্রীলঙ্কায়। শ্রীলঙ্কার সন্দেহভাজন হামলাকারীকে শনাক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ॥ শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ সিরিজ বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করতে পেরেছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনটাই মনে করছেন দেশটির কর্মকর্তারা। যুক্তরাষ্ট্রের দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তির সঙ্গে আইএসসহ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোর যোগসাজশ রয়েছে। সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তির জাতীয়তা, নৃতাত্ত্বিক পরিচয়সহ তার বিষয়ে বিশদ তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তাদের প্রত্যাশা, বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেলে সেটি হামলার বিষয়ে আরও নতুন নতুন সূত্র উন্মোচন করবে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাস, আইএস দ্বারা অনুপ্রাণিত গোষ্ঠীই শ্রীলঙ্কায় এই হামলা চালিয়েছে। দেশটি এখন খুঁজে বের করতে চাইছে এই হামলার সঙ্গে আইএস কীভাবে যুক্ত হয়েছে। কীভাবে তারা এর পরিকল্পনা, অর্থায়ন, বোমা তৈরির সরঞ্জাম সরবরাহের কাজগুলো সম্পাদন করেছে। লঙ্কান হামলাকারীদের সঙ্গে আইএস কোথায় বৈঠক করেছে? এ সংক্রান্ত প্রাথমিক পর্যালোচনার সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আমরা এখনও সম্ভাব্য যোগসূত্রগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। গির্জায় ঢোকার আগে শিশুর মাথা স্পর্শ করে হামলাকারী ॥ সিএনএন-এ প্রচারিত একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে হামলাকারীদের একজন ভারি ব্যাগ বহন করছে পিঠে। সেন্ট সেবাস্তিয়ান গির্জায় প্রবেশের আগে সে একটি শিশুর মাথা স্পর্শ করছে। ওই গির্জায় অনেকেই বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন। ব্যবসায়িক পরিচয়ে হোটেলে ওঠে হামলাকারী ॥ শ্রীলঙ্কার একটি হোটেলে হামলাকারী খাবারের লাইনে দাঁড়িয়ে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। কলম্বোর সিনামন গ্র্যান্ড হোটেলের ম্যানেজার বলেন, ওই হামলাকারী যখন বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়, তখন রেস্তরাঁ উপচেপড়া ভিড় ছিল। সিনামন গ্র্যান্ড হোটেলে হামলাকারী ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে ওই হোটেলে উঠেছিল। হোটেলের ম্যানেজার জানান, মোহামেদ আজম মোহামেদ নামে হোটেলে ওঠা ওই ব্যক্তি ব্যবসায়িক কাজে এসেছেন বলে জানিয়েছিলেন। গণশেষকৃত্য ॥ রবিবারের হামলায় নিহতদের স্মরণে মঙ্গলবার তিন মিনিটের নীরবতা পালন করেছে শ্রীলঙ্কা, বহাল আছে জরুরী অবস্থাও। এরই মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে নিহতদের জন্য গণশেষকৃত্য। মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শোক ও শেষকৃত্যের অনুষ্ঠান শুরু হয়। নিহতদের মধ্যে প্রায় সবাই শ্রীলঙ্কার নাগরিক যদিও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন কমপক্ষে ৩৫ বিদেশী নাগরিক নিহত হয়েছেন বিস্ফোরণে। বিদেশীদের মধ্যে ব্রিটেন, ভারত, ডেনমার্ক, সৌদি আরব, চীন, তুরস্ক এবং বাংলাদেশের নাগরিকরা রয়েছেন। গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়ে তালগোল পাকিয়েছে শ্রীলঙ্কার প্রশাসন ॥ রবিবারের বোমা হামলার আগাম সতর্কবার্তা পাওয়ার খবর নিয়ে এখন তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে শ্রীলঙ্কার নেতৃত্বের মধ্যকার বিরোধ। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো জিহাদি গ্রুপ ন্যাশনাল তাওহীদ জামায়াতের দিকে নজর দিচ্ছে বলে খবর আসছে। যদিও আগেই পুলিশকে সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে তথ্য দেয়া হয়েছিল। মন্ত্রিপরিষদ মুখপাত্র রাজিথা সেনারত্নে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন নিরাপত্তা বিষয়ক আগাম তথ্য সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। মূলত প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার সঙ্গে তার গত বছরের বিরোধের জের ধরেই এটা ঘটেছে। মুসলিমরা আতঙ্কিত ॥ শ্রীলঙ্কায় গির্জা ও হোটেলে রবিবারের হামলার সঙ্গে ন্যাশনাল তৌহিদ জামায়াত (এনটিজে) নামে একটি জঙ্গী ইসলামী গোষ্ঠীর নাম আসার পর শ্রীলঙ্কার মুসলিমরা নতুন করে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। অনেকেই তাদের ভাবমূর্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। কলম্বোতে মুসলিম সংগঠন ন্যাশনাল শূরা কাউন্সিলের এক কর্মকর্তা আজমান আব্দুল্লাহ বলেন, আতঙ্কের চেয়ে মুসলিমরা ক্ষুব্ধ, ব্যথিত। সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য মুসলিদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। শ্রীলঙ্কার জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ মুসলিম।
×