ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার

৯ মাস কিস্তি অনাদায়ী থাকলে ঋণখেলাপী বলা হবে

প্রকাশিত: ১১:৪৬, ২৪ এপ্রিল ২০১৯

৯ মাস কিস্তি অনাদায়ী থাকলে ঋণখেলাপী বলা হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ একের পর এক ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন ঋণ খেলাপীরা। এবার ছাড় দেয়া হলো খেলাপী ঋণ হিসাবায়নে। অর্থাৎ খেলাপী ঋণ হিসাবায়নের তিনটি পর্যায়েই সময় বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে ঋণ পরিশোধে আগের চেয়ে প্রায় ছয় মাস বাড়তি সময় পাবেন ঋণগ্রহিতারা। এতে প্রভিশন সংরক্ষণে বাড়তি সময় পাবে ব্যাংকগুলোও। রবিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করেছে; যা চলতি বছরের ৩০ জুন থেকে কার্যকর হবে। সার্কুলারে বলা হয়েছে, সব ধরনের নিয়মিত ঋণ, চাহিদা ঋণ, মেয়াদী ঋণ অথবা যেকোন ঋণের কিস্তি তিন মাসের বেশি, কিন্তু ৯ মাসের কম অনাদায়ী থাকলে তা সাব-স্ট্যান্ডার্ড বা নিম্নমানের খেলাপী ঋণ হিসেবে হিসাবায়ন করা হবে। আগে তিন মাসের বেশি অনাদায়ী থাকলে সাব-স্ট্যান্ডার্ড হিসাবে হিসাবায়ন করা হতো। অন্যদিকে, ৯ মাসের বেশি কিন্তু ১২ মাসের কম অনাদায়ী থাকলে তা ডাউটফুল লোন বা সন্দেহজনক ঋণ হবে। আগে ৬ মাসের বেশি ৯ মাসের কম অনাদায়ী ঋণকে ডাউটফুল লোন বা সন্দেহজনক ঋণ বলা হতো। আর ১২ মাসের বেশি অনাদায়ী ঋণ ব্যাড লোন বা মন্দ ঋণ হবে। আগে ৯ মাসের বেশি অনাদায়ী ঋণ মন্দ ঋণ হিসেবে বিবেচিত হতো। তবে সার্কুলারে সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণের একটা অংশ খেলাপী ঋণ হিসেবে দেখাতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণ খেলাপী ঋণ হিসেবে গণ্য করা হতো না। এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের সুবিধা দেয়ার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। এটার কোন প্রয়োজন ছিল না। এর মাধ্যমে ঋণ খেলাপীদের আরও উৎসাহিত করা হলো। এতে খেলাপী ঋণ আরও বাড়ার আশঙ্কা থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ এ ধরনের সুবিধা দেয়াকে মন্দের ভাল হিসেবে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আগে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন ব্যবসায়ীদের ১২ বছরের জন্য ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দেয়া হবে। তার চাইতে ছয় মাস সময় বাড়িয়ে দেয়ার এ সিদ্ধান্ত ভাল। এ সময় দিয়ে যদি ব্যবসায়ীদের উদ্ধার করা যায় তাতে কোন সমস্যা দেখি না। বাড়তি সময় দেয়ার ফলে ঋণটি ফেরত আসবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো যদি যথাযথ মনিটরিং করে তবে ঋণ ফেরত আসবে বলে আশা করা যায়। কিন্তু সময় দিয়ে ব্যাংকগুলো যদি চুপচাপ বসে থাকে তবে হিতে বিপরীত হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে তার বেশির ভাগই আমানতকারীদের অর্থ। আমানতকারীদের অর্থ যেন কোন প্রকার ঝুঁকির মুখে না পড়ে সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। এর একটি হলো প্রভিশন সংরক্ষণ। নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণীকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংকের আয় খাত থেকে অর্থ এনে এ প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়। খেলাপী ঋণ বাড়লে, আর সে অনুযায়ী ব্যাংকের আয় না হলে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শেয়ারহোল্ডাদের জন্য কোন লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। নতুন নীতিমালা কার্যকর হলে একদিকে ঋণ খেলাপীরা বাড়তি সুবিধা পাবে। অন্যদিকে ব্যাংকগুলো প্রভিশন রাখতে বাড়তি সময় পাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ১১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপী ঋণের পরিমাণ ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা, যা ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খেলাপী ঋণ বেড়েছে ১৯ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। এদিকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে সরকারী-বেসরকারী ১০টি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ছিল। এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকগুলোকে মামলা ছাড়াই ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অবলোপনের সুযোগ করে দিয়ে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া তাদের ৩ বছরের মন্দমানের খেলাপীঋণ অবলোপনের সুযোগ করে দেয়া হয়। এছাড়া এ মাসের শুরুতে খেলাপী ঋণ অবলোপনে একই ধরনের ছাড় দেয়া হয়েছে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপীদেরও। উল্লেখ্য, বছরের পর বছর ধরে মন্দ মানে শ্রেণীকৃত খেলাপী ঋণ স্থিতিপত্র (ব্যালান্স সিট) থেকে বাদ দেয়াকে ঋণ অবলোপন বলে।
×