ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

এনবিআরের বাজেট আলোচনা

২০৩০ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি চান পোল্ট্রি উদ্যোক্তারা

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ২৪ এপ্রিল ২০১৯

২০৩০ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি চান পোল্ট্রি উদ্যোক্তারা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সাশ্রয়ী মূল্যে নিরাপদ ডিম ও মুরগির মাংস উৎপাদনের মাধ্যমে আপামর মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং পোল্ট্রি পণ্য রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন- এই প্রধান তিন লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগুতে চায় বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প। আর সে লক্ষ্য অর্জনে সামগ্রিকভাবে পোল্ট্রি শিল্পের জন্য ২০৩০ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি’র দাবি জানিয়েছে পোল্ট্রি সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো। মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘বাজেট প্রস্তাব’ বিষয়ক আলোচনায় এ দাবি জানানো হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান জনাব মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। বৈঠকে উপস্থিত পোল্ট্রি সংশ্লিষ্ট এ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা বলেন- বিশ্বের বড় বড় দেশগুলোতে যেখানে পোল্ট্রি ও ফিস ফিড তৈরির অত্যাবশ্যকীয় কাঁচামাল নিজ দেশে উৎপাদিত হওয়ার পরও খামারিদের ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে; সেখানে আমাদের দেশে ভুট্টা, সয়াবিন মিল, ওষুধসহ বেশিরভাগ কাঁচামাল আমদানি-নির্ভর হওয়া সত্ত্বেও এ খাতের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। শিল্প সংশ্লিষ্টরা যেহেতু ২০২৫ সালের মধ্যেই রফতানি শুরু করতে চান এবং ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্ববাজারে একটা শক্ত অবস্থান তৈরি করতে চান, তাই ২০৩০ সাল পর্যন্ত সব ধরনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর থেকে অব্যাহতি জরুরী বলে মনে করছেন তারা। পোল্ট্রি উদ্যোক্তারা বলেন- সরকারী হিসাব মতে দেশে বর্তমানে মাথাপিছু ডিমের বার্ষিক কনজাম্পশন ৯০টি এবং মুরগির মাংসের কনজাম্পশন প্রায় ৬.৫ কেজি। জাতিসংঘের হিসাব মতে দেশের জনসংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১৬ কোটি ৭৭ লাখের ওপরে। সে হিসাবে দেশের ডিম ও মুরগির মাংসের উৎপাদন ব্যয় প্রায় ২.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দেশীয় পোল্ট্রি শিল্প গড়ে না উঠলে প্রতিবছর এই বিশাল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হতো ডিম ও মুরগির মাংস আমদানির পেছনে। বাজার দরের তুলনামূলক চিত্র উপস্থাপন করে তারা বলেন- ২০০৭ সালে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল প্রতি কেজি ১০০ টাকা, ডিম প্রতি হালি ১৬.৮০ টাকা, গরুর মাংস প্রতি কেজি ১৫০ টাকা এবং খাসির মাংস ২০০ টাকা। বিগত ৬ মাসে ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি গড়ে ১৩০ টাকা, ডিম প্রতি হালি ৩০-৩২ টাকা, গরুর মাংস প্রতি কেজি ৫২৫ -৫৫০ টাকা, খাসির মাংস ৮০০-৮৫০ টাকা। কাজেই দেখা যাচ্ছে প্রাণিজ আমিষের অপরাপর উৎসের তুলনায় ডিম ও ব্রয়লার মাংসের দাম অত্যন্ত সহনীয় এবং স্থিতিশীল। পোল্ট্রি এ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা বলেন- সরকার চাচ্ছেন ২০২১ সালের মধ্যে মাথাপিছু ডিমের বার্ষিক কনজাম্পশন ৯০ থেকে বাড়িয়ে নূন্যতম ১০৪টিতে এবং মাংসের কনজাম্পশন ৬.৫ কেজি থেকে বাড়িয়ে ৭.৫ কেজিতে উন্নীত করতে। সেটি করতে হলে ঠিক এই মুহূর্তে চাহিদা ও যোগানের যে চিত্র তাতে বছরে অন্তত ঃ ২৩৪ কোটি ৮২ লাখ ডিম এবং ১ লাখ ৮৫ হাজার টন মুরগির মাংসের উৎপাদন বাড়াতে হবে। আর যদি রফতানিতে যেতে হয় তবে বছরে অন্তত ঃ ১২০০ কোটি ডিম ও ৮ লাখ টন মুরগির মাংসের উৎপাদন বাড়াতে হবে। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সাশ্রয়ীমূল্যে ডিম ও মুরগির মাংসের উৎপাদন কিংবা রফতানি শুরু করার অন্যতম প্রধান শর্তটি হচ্ছে উৎপাদন খরচ কমাতে হবে। তারা বলেন- আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের উর্ধগতির কারণে কেজি প্রতি উপকরণের দাম ক্ষেত্র বিশেষে ২৭ শতাংশ থেকে শুরু করে ৩১৬ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। পণ্য হ্যান্ডেলিং-এ বন্দরের অদক্ষতা ও দুর্বল ব্যবস্থাপনার প্রতি টন ভুট্টা আমদানি করতে ২০-২৫ ডলার অর্থাৎ ৫২ হাজার টনের একটি কনসাইমেন্টের ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১৩ লাখ ডলার বা প্রায় ১০ কোটি ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত খরচ গুণতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরে কোন ফিড সাইলো না থাকায় আমদানিকৃত পণ্য দিনের পর দিন খোলা জায়গায় পড়ে থাকছে। এতে গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে। আমদানিকৃত কাঁচামাল পরীক্ষার জন্য দেশে মাত্র একটি টেস্টিং ল্যাব আছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। র‌্যান্ডম স্যামপ্লিং এর পরিবর্তে প্রতিটি ব্যাচের টেস্টিং বাধ্যতামূলক করায় সময় ও অর্থ উভয়ই বেশি খরচ হচ্ছে। মিট এ্যান্ড বোন মিলের আমদানি বন্ধ হওয়ায় ভেজিটেবল সোর্স থেকে উৎপাদিত প্রোটিন মিল ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে খরচ বাড়ছে। তাই সব ধরনের ভেজিটেবল প্রোটিন ও ভেজিটেবল সোর্স থেকে উৎপাদিত প্রোটিন মিল/প্রোটিন কনসেনট্রেট, সি-ফুড মিল, ক্র্যাব মিল, পোল্ট্রি মিলের আমদানি শুল্ক শূন্য করার দাবি জানান তারা। ভুট্টা আমদানির ওপর থেকে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর; সয়াবিন অয়েল কেক আমদানির ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি; কাসাব আমদানিতে ১৫ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি, ১০ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ এআইটি ও ৫ শতাংশ এটিভি; কটনসিড মিল ও পাম কারনেল মিল ওপর ৫ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি ও ৫ শতাংশ হারে অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার এবং ওষুধ, প্রিমিক্স, মিনারেল, প্রোবায়োটিক প্রভৃতি উপকরণগুলো শূন্য শুল্কে আমদানির সুবিধা দাবি করা হয়। কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে ফিড মিলগুলোর মতোই আমদানিকারকদেরও শুল্কমুক্ত সুবিধার দাবি জানান তারা। বৈঠকে জানানো হয়- মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশ, চীন ও আফ্রিকার বেশ কিছু দেশ থেকে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের পোল্ট্রি কোম্পানিগুলোর কাছে চাহিদাপত্র আসা শুরু হয়েছে কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক দরে টিকতে না পারায় পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে। ২০৩০ সাল পর্যন্ত পোল্ট্রি সেক্টরকে কর অব্যাহতি সুবিধা প্রদান করা হলে উৎপাদান খরচ কমিয়ে এনে রফতানি শুরু করতে পারবেন বলে আশাবাদী পোল্ট্রি সংশ্লিষ্টরা। বৈঠকে অন্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এহতেশাম বি. শাহজাহান, সিনিয়র সহ-সভাপতি ফজলে রহিম খান শাহরিয়ার, সাংগঠনিক সচিব মোঃ আনোয়ারুল হক, ব্রিডার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আসিফুর রহমান, আহকাব সভাপতি ডাঃ নজরুল ইসলাম, বিপিআইএ’র মহাসচিব ডাঃ এমএম খান, বিপিআইসিসি’র সচিব দেবাশিস নাগ, উপদেষ্টা শ্যামল কান্তি ঘোষ, প্রমুখ।
×