ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রিমিয়ার ক্রিকেটে আবাহনীর টানা দ্বিতীয় শিরোপা

প্রকাশিত: ১২:০৯, ২৪ এপ্রিল ২০১৯

প্রিমিয়ার ক্রিকেটে আবাহনীর টানা দ্বিতীয় শিরোপা

মিথুন আশরাফ ॥ ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগের এবারের আসরের শিরোপা ফয়সালা হলো লীগের শেষদিন মঙ্গলবার। দেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি করা সৌম্য সরকারের ধামাকা ব্যাটিংয়ে শিরোপা জিতল আবাহনী লিমিটেড। সৌম্যের অপরাজিত ২০৮ রানের সঙ্গে জহুরূল ইসলাম অমির ১০০ রানের ইনিংসে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবকে ৯ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা উৎসবে মাতলেন আবাহনীর ক্রিকেটাররা। প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে ৮৮ রানে জিতেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারল না লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। আবাহনীর সমান ২৬ পয়েন্ট পেয়েও রানরেটে পিছিয়ে থাকায় আবাহনীর পরেই থাকল রূপগঞ্জ। আবাহনী ও রূপগঞ্জ নিজ নিজ ম্যাচে হারলে কিংবা জিতলে আবাহনীই শিরোপা জিতবে তা আগেই নিশ্চিত ছিল। পয়েন্ট সমান ছিল। হেড টু হেডেও দুই দল সমান ছিল। রানরেটে আবাহনী এগিয়ে ছিল। তাই আবাহনীর হারা এবং রূপগঞ্জের জেতা ছাড়া রূপগঞ্জের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কোন সম্ভাবনাই ছিল না। আবাহনী ও রূপগঞ্জ জিতল। তাতে আবাহনীই আবারও চ্যাম্পিয়ন হলো। নিয়ম রক্ষার ম্যাচে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে ৩ রানে হারাল প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব। ২০১৩-১৪ মৌসুম থেকে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে প্রবেশ করে ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ। সেই থেকে তিনবারই চ্যাম্পিয়ন হয় আবাহনী। ২০১৫-১৬ মৌসুমে প্রথমবার, গত মৌসুমে আরেকবার, এবারও শিরোপা জিতে আবাহনী। টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জিতে আবাহনী। আবাহনী-শেখ জামাল ম্যাচ, বিকেএসপি জিতলেই চ্যাম্পিয়ন। অথবা মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে রূপগঞ্জ-প্রাইম ব্যাংক ম্যাচে রূপগঞ্জ হারলেও চ্যাম্পিয়ন। সেক্ষেত্রে আবাহনী হারলেও শিরোপা ঘরে তুলবে। এমন সমীকরণের সামনে পড়ে শেখ জামালের বিশাল রানেও চাপা পড়ে যায় আবাহনী। শেখ জামাল যখন তানভির হায়দারের ১১৫ বলে ১০ চার ও ৬ ছক্কায় করা অপরাজিত ১৩২ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ৩১৭ রান করে তখনই আবাহনী হারের সম্ভাবনায় পড়ে যায়। মাশরাফি বিন মর্তুজা (৪/৫৬) আর কোন বোলারই নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। ৮৫ রানে ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর তানভিরই হাল ধরেন। বড় স্কোর গড়েন। দলকেও অনেক বড় স্কোরে নিয়ে যান। যদিও আবাহনী দলটিতে ব্যাটসম্যানের অভাব নেই। রূপগঞ্জের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচটিতেই তা প্রমাণ করেছেন আবাহনী ব্যাটসম্যানরা। প্রায় চার শ’ (৩৭৭ রান) রানের কাছাকাছি করেছিল। তাতে আবার ভরসাও ছিল। সেই ভরসা সত্যিও হলো। প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে বিশাল রান করে রূপগঞ্জ জিততে চলেছে এমন মহাচাপের মুখে পড়েও দুই ওপেনার জহুরুল ইসলাম অমি ও সৌম্য মিলে স্কোরবোর্ড মজবুত করায় অবিচল থাকলেন। দুইজন মিলে ৩১২ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়লেন। রেকর্ডের খাতায় নিজেদের নাম যুক্ত করলেন। ১২৮ বলে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ১০০ রান করে অমি আউটের পর সৌম্য ও সাব্বির রহমান রুম্মন মিলে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। ১ উইকেট হারিয়ে ৪৭.১ ওভারে ৩১৯ রান করে জিতে আবাহনী। গত ম্যাচের ঝড়ো ইনিংস খেলে সেঞ্চুরি করেন সৌম্য। এবার টর্নেডো গতিতে ১৫৩ বলে ১৪ চার ও ১৬ ছক্কায় শেখ জামাল বোলারদের বলগুলো তুলোধুনো করে অপরাজিত ২০৮ রান করে ম্যাচ জেতান সৌম্য। স্কোর ॥ শেখ জামাল ইনিংস- ৩১৭/৯; ৫০ ওভার (তানভির ১৩২*, ইলিয়াস ৪৫, মেহরাব ৪৪, ফারদিন ৩৪; মাশরাফি ৪/৫৬)। আবাহনী ইনিংস- ৩১৯/১; ৪৭.১ ওভার (সৌম্য ২০৮*, জহুরুল ১০০)। ফল ॥ আবাহনী ৯ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ সৌম্য সরকার (আবাহনী)। রূপগঞ্জ-প্রাইম ব্যাংক ম্যাচ, মিরপুর ॥ জিতলেই শুধু হবে না আবাহনীর হারও লাগবে। এমন কঠিন পরিস্থিতির মুখেও নিজেদের খেলাটা ঠিক খেলে গিয়েছেন রূপগঞ্জ ব্যাটসম্যানরা। আবাহনী-শেখ জামাল ম্যাচে কি হচ্ছে সেদিকে নজর না দিয়ে নিজেদের নৈপুণ্য দেখিয়ে গেছেন। রূপগঞ্জ আগে ব্যাটিং করে যখন ৪ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ৩১৭ রান করে ফেলে তখনই রূপগঞ্জের জেতার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। মোহাম্মদ নাঈমের ১৩০ বলে ১৯ চারে করা ১৩৬ রানের অসাধারণ ইনিংসের সঙ্গে মেহেদী মারুফের ৫৪ ও মুমিনুল হকের ৫২ রানে এত বিশাল স্কোর গড়া সম্ভব হয়। জবাব দিতে নেমে ৪২.১ ওভারে ২৩৯ রান করতেই গুটিয়ে যায় প্রাইম ব্যাংক। নাহিদুল ইসলাম ৭৪ রান করেন। মোহাম্মদ শহীদ ৪ উইকেট নেন। স্কোর ॥ রূপগঞ্জ ইনিংস- ৩২৭/৪; ৫০ ওভার (নাঈম ১৩৬, মারুফ ৫৪, মুমিনুল ৫২; মোহর ১/৫৩)। প্রাইম ব্যাংক ইনিংস- ২৩৯/১০; ৪২.১ ওভার (নাহিদুল ৭৪, রুবেল ৩৭; শহীদ ৪/২২)। ফল ॥ রূপগঞ্জ ৮৮ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ মোহাম্মদ নাঈম (রূপগঞ্জ)। দোলেশ্বর-মোহামেডান ম্যাচ, ফতুল্লা ॥ দুই দলের মধ্যকার নিয়মরক্ষার ম্যাচ ছিল। এই ম্যাচে দোলেশ্বরই জিতল। ম্যাচটিতে হেরে সুপার লীগে পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই হারল মোহামেডান। আগে ব্যাটিং করে ৬ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ২৭৪ রান করে দোলেশ্বর। ফরহাদ হোসেন ৮৯ রান করেন। সৈকত আলী (৬৫) ও সাইফ হাসান (৫৫) হাফ সেঞ্চুরি করেন। জবাব দিতে গিয়ে জয়ের কাছাকাছিই পৌঁছে যায় মোহামেডান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মোহাম্মদ আশরাফুলের ৭৬ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ২৭১ রান করতে পারে মোহামেডান। তাইবুর রহমান ৩ উইকেট শিকার করেন। স্কোর ॥ দোলেশ্বর ইনিংস- ২৭৪/৬; ৫০ ওভার (ফরহাদ ৮৯, সৈকত ৬৫, সাইফ ৫৫; শফিউল ২/৩৯)। মোহামেডান ইনিংস- ২৭১/৯; ৫০ ওভার (আশরাফুল ৭৬; তাইবুর ৩/৩৪)। ফল ॥ দোলেশ্বর ৩ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ ফরহাদ হোসেন (দোলেশ্বর)। লিস্ট ‘এ’ চ্যাম্পিয়নরা মৌসুম চ্যাম্পিয়ন ২০১৩-১৪ গাজী ট্যাংক ক্রিকেটার্স ২০১৪-১৫ প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ২০১৫-১৬ আবাহনী লিমিটেড ২০১৬-১৭ গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ২০১৭-১৮ আবাহনী লিমিটেড ২০১৮-১৯ আবাহনী লিমিটেড
×