ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সরকার রোজার আগে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রনে ব্যর্থ : রিজভী

প্রকাশিত: ০৮:৪২, ২৪ এপ্রিল ২০১৯

সরকার রোজার আগে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রনে ব্যর্থ  : রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকার রোজার আগে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রনে ব্যার্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বুধবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। রিজভী বলেন, দেশে অনাচার, বিচারহীনতা, নারী ও শিশু নির্যাতনসহ অপরাধ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বেড়েই চলছে। তা প্রতিকারে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না সরকার। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীরা যা বলেন, সঙ্গে সঙ্গে তার উল্টোটা ঘটে। রিজভী বলেন, ক’দিন আগে বাণিজ্যমন্ত্রী ঘটা করে সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেছিলেন রমজান সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়বে না। অথচ তার পর দিন থেকেই হু হু করে দাম বেড়েছে প্রায় সব পণ্যের। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবারও বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল প্রতি কেজি ২৫ টাকা। এর এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ২০ টাকায়। মঙ্গলবার সবকটি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৬ থেকে ২৭ টাকা দরে । একইভাবে এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়। এখন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। প্রতি কেজি আলু ১৬টাকা থেকে বেড়ে ২০ টাকা হয়েছে। প্রতি কেজি চিনি ৫২ থেকে বেড়ে ৫৬ টাকা হয়েছে। প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ৯০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯৮ টাকায়। এভাবে বেড়েছে ছোলা, ডাল, আদা, ময়দা, কাঁচামরিচসহ সবরকম নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। পবিত্র রমজানের আগে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারকে ধিক্কার জানাই। রিজভী বলেন, নিত্যপণ্য কিনতে গিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন ক্রেতারা। মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। অল্প আয়ের মানুষ রমজানের আগে দিশেহারা। তিনি বলেন, দেশের মানুষের সামাজিক বন্ধ ভেঙ্গে পড়ার কারণে নৈরাজ্য চরম আকার ধারণ করেছে। অপরাধপ্রবণতার এই বেপরোয়া রূপের একমাত্র কারণ ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের দখল ও লুটের ক্ষুধার র অতিমাত্রার আতিশয্য। রুহুল কবির রিজভী বলেন, জনগণের ভোট ছাড়া ক্ষমতায় আসা সরকার কখনোই জনস্বার্থ দেখে না, জনকল্যান করতে পারে না। সারা ঢাকা শহরে ওয়াসার দুষিত পানির সরবরাহে জনজীবন এখন সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নির্বিকার। তাই দূষিত পানি পান করে বাড়ীতে বাড়ীতে টাইফয়েড, ডায়রিয়া, জ¦র মহামারী আকার ধারণ করেছে। এখন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’র মতো গরীব মানুষদের অবস্থা। ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিজে ওয়াসার পানি পান করেন না, অথচ তিনি বলছেন ওয়াসার পানি ১০০ ভাগ বিশুদ্ধ। আমরা সরকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াসার মানববিধ্বংসী নীতির নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার আহবান জানাচ্ছি। রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীন সরকারের গঠন যদি হয় জনসম্মতিহীন তাহলে সেখানে শুধু রাজনৈতিক নয়, সামাজিক অপরাধপ্রবণতাও বৃদ্ধি পায় জ্যামিতিক হারে, সে কারণেই দেশে ধর্ষণ, হত্যা ও অপহরণ বাড়ছে। শিক্ষকের দ্বারা ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা দেশে এক বীভৎস চেহারায় আবির্ভূত হয়েছে। এই সামাজিক অপরাধের পেছনে যারা জড়িত তারা অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের লোক। রিজভী বলেন, দেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া রক্তঝরা ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে লোমহর্ষক ঘটনা হচ্ছে ১৯ এপ্রিল বি.বাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি বাশারের নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র ব্যক্তি এলাকার দরিদ্র মানুষ কালা মিয়ার পা কেটে নেয়। শুধু এখানেই ক্ষান্ত হয়নি, কালা মিয়ার পুত্র বিপ্লবের দু’পায়ের রগও কেটে দিয়েছে তারা। প্রথমে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার দলবল কালা মিয়া ও তার ছেলেকে ধরে নিয়ে গিয়ে তাদের পায়ে টেটা বিদ্ধ করে। এরপর কালা মিয়াকে মাটিতে ফেলে দিয়ে কয়েকজন তার পা চেপে ধরে চাপাতি দিয়ে হাঁটু বরাবর কুপিয়ে পা আলগা করে দেয়। এই ঘটনায় শিউরে উঠেছে দেশবাসী। স্থানীয় থানার ওসি বলেছেন অনেক বড় এলাকা তাই কালা মিয়ার কাটা পা পাওয়া যাচ্ছে না। কালা মিয়ার স্ত্রী জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সেই সহ-সভাপতির ভয়ে তারা গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় চলে এসেছেন। পুলিশ দুস্কৃতিকারীদের টিকিটিও এখন পর্যন্ত ছুঁতে পারেনি। এই পৈশাচিক ঘটনা বিচারের মুখ দেখবে কি কোনদিন? রিজভী বলেন, শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী বোমা হামলা মানবতা ও মানবজাতির বিরুদ্ধে এক ভয়ঙ্করতম অপরাধ। এই বোমা হামলা দেশ-কাল ও সভ্যতার জন্য এক বড় ধরনের কলঙ্ক। শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলায় বাংলাদেশি যারা নিহত হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি, যারা আহত হয়েছেন তাদের আশু সুস্থতা কামনা করছি, তাদের পরিবার-পরিজনকে সমবেদনা জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাব হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন প্রমুখ।
×