ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পরিবারের ভেতর রাজনৈতিক লড়াই!

প্রকাশিত: ১২:৪৭, ২৬ এপ্রিল ২০১৯

পরিবারের ভেতর রাজনৈতিক লড়াই!

রাজনীতিতে পারিবারিক প্রভাব দক্ষিণ এশিয়ায় একটি সাধারণ চিত্র। মজার বিষয় হলো, আগে কোন নির্দিষ্ট পরিবার একটি নির্দিষ্ট দলকে ঘিরে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে লিপ্ত হতেন। সেই বৃত্ত ভেঙ্গে এখন অনেক রাজনীতিক পরিবারের সদস্যরা একে অন্যের বিপক্ষ আদর্শের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। এবারের ভারতের নির্বাচনে তাদের মধ্যকার লড়াইটাও জমে উঠেছে বেশ। দুই বউ দুই দলে কংগ্রেসের রাশ প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই নেহরু-গান্ধী পরিবারের হাতে। জওহরলাল, ইন্দিরা, রাজীবের পর ভার গেছে রাজীব-পত্নী সোনিয়ার কাছে। কিন্তু ইন্দিরার আরেক পুত্র সঞ্জয়ের অকাল প্রয়াণে রাজনৈতিক আলোয় এসে পড়েন তাঁর স্ত্রী মানেকা। শ্বশুরবাড়ির মানুষের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় মানেকা প্রতিষ্ঠা করেন ‘সঞ্জয় বিচার মঞ্চ’ নামের একটি কংগ্রেস-বিরোধী দল। বর্তমানে তিনি ভারতীয় জনতা পার্টির সদস্য এবং নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী। দুই ভাইয়ের মধ্যে বিবাদ সোনিয়া, মানেকা গান্ধী পরিবারের দুই বউ। তাঁরা দু’জনেই দু’জনের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। উত্তরাধিকার মেনে নিয়ে সোনিয়া-পুত্র রাহুল বর্তমানে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় প্রেসিডেন্ট। মানেকা-পুত্র বরুণ গান্ধীও ভারতীয় জনতা পার্টি, অর্থাৎ ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ। ছবিতে বরুণ, তাঁর মা মানেকা ও স্ত্রী যামিনী? মহারাষ্ট্রেও একই চিত্র মারাঠি জাতীয়তাবাদী আদর্শে গঠিত শিব সেনার প্রতিষ্ঠাতা বালাসাহেব ঠাকরে? তাঁর পর কে পাবেন দলের দায়িত্ব, এই নিয়ে যখন পুত্র উদ্ধব ও ভাইপো রাজের মধ্যে বচসা বাধে, দলের ভার পান উদ্ধব ঠাকরে? রাজ ঠাকরে শিব সেনা ছেড়ে বেরিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন আরেকটি সম-আদর্শের দল ‘মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা’। দুই দলের মধ্যে আদর্শিক কোন দ্বন্দ্ব সেভাবে না থাকলেও, মহারাষ্ট্রের নেতৃত্ব নিয়ে রাজ-উদ্ধব দ্বন্দ্ব আলোচিত। রাজপরিবারের ভেতরেও দ্বন্দ্ব গোয়ালিয়রের রাজপরিবারের মধ্যে রয়েছে রাজনীতিতে আসার ঝোঁক। কিন্তু সদস্যদের মধ্যে নেই মতের মিল। কংগ্রেস-সদস্য ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাধবরাও-এর মা বিজয়রাজে সিন্দিয়া ছিলেন গোয়ালিয়রের শেষ রাজা জিবাজিরাও-এর স্ত্রী। প্রথম দিকে বিজয়রাজে সিন্দিয়া কংগ্রেস-বিরোধী স্বতন্ত্র পার্টিতে যোগ দিলেও পরে ভারতীয় জনতা পার্টি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন। ওপরের ছবিতে মাধবরাও-এর বোন বসুন্ধরা, যিনি মায়ের মতোই কংগ্রেস-বিরোধী। নতুন প্রজন্মও দুই দলে বিভক্ত মাধবরাও সিন্দিয়ার পথ ধরে তাঁর পুত্র জ্যোতিরাদিত্য সিন্দিয়াও কংগ্রেসে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি দলের অন্যতম জনপ্রিয় যুবনেতা। অন্যদিকে তাঁর বাবার দুই বোন, যশোধারা ও বসুন্ধরা যথাক্রমে মধ্য প্রদেশ ও রাজস্থানে ভারতীয় জনতা পার্টির সাংসদ। শুধু তাই নয়, পিসি-ভাইপো’র মধ্যে রাজনৈতিক বিবাদের জের এসে পড়েছে পারিবারিক সম্পর্কেও। সংসদেও একে অন্যের বিপক্ষে লড়তে দেখা যায় বসুন্ধরা ও জ্যোতিরাদিত্যকে। বাবার বিরোধী ছেলে বাবা মুকুল রায় ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যাবিনেটের গুরুত্বপূর্ণ এই সদস্য যখন দল বদলে বিজেপিতে যোগদান করেন, প্রশ্ন ওঠে, কী হবে তৃণমূল সাংসদ মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশুর রাজনৈতিক ভবিষ্যত? কিন্তু শুভ্রাংশু যোগ দেননি বিজেপিতে। এখনো তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ। বলিউড ও শত্রুঘত্ন সিনহা বিখ্যাত অভিনেতা শত্রুঘত্ন সিনহা সম্প্রতি ভারতীয় জনতা পার্টির সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিন্ন করে যোগ দেন কংগ্রেসে। তাঁর স্ত্রী পুনম সিনহা যখন এ বছর রাজনীতির ময়দানে আসার ঘোষণা দেন, সবার মনেই ছিল প্রশ্নÑ কোন দলে যাবেন তিনি? বিজেপি বা কংগ্রেস, দুই দলে না গিয়েই পুনম যোগ দিলেন সমাজবাদী পার্টিতে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সেই দলের হয়েই তিনি লড়বেন বিজেপির রাজনাথ সিংয়ের বিরুদ্ধে। সাত-সতেরো প্রতিবেদক
×