ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মানব গুপ্ত

ভিন্ন স্বরের কবিতা

প্রকাশিত: ১২:৫২, ২৬ এপ্রিল ২০১৯

ভিন্ন স্বরের কবিতা

পৃথিবীর কোন বিপ্লব একদিনে সংগঠিত হয়নি। মানবসভ্যতা অন্যায়ভাবে নিষ্পেষিত হতে হতে দ্রোহের দানা বাঁধতে থাকে। মুক্তির নেশায় ভেতর-বাহির উন্মুখ হয়ে ওঠে। স্বাধীনতা প্রত্যাশীরা ক্ষিপ্র থেকে ক্ষিপ্রতর হয়। পরাধীনতা স্বর্গেও কাম্য নয়। আর এই পরাধীনতার যন্ত্রণা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ সুসংগঠিত বিপ্লব। এ পর্যন্ত পৃথিবীর ইতিহাসে যত বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে তার পেছনে দূরদর্শী নেতৃত্ব, দক্ষ সৈনিক বা যোদ্ধা, পরিকল্পিত রণকৌশল, শাণিত বুদ্ধিমত্তা, সমৃদ্ধ অস্ত্রাগার ছাড়াও সাহসিকতার মনস্তত্ত্বকে উস্কে দিয়ে বিপ্লবের দামামা মুক্তির চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে দিতে ওই ভূখ-ের সাহিত্য বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। তেমনিভাবে আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা ও স্পেনের কবিগণ বিপ্লবপূর্ব এবং মুক্তি-পরবর্তী সময়ে কবিতার মধ্য দিয়ে বিপ্লবের শরীরকে স্পন্দিত করে পৃথিবীর তাবত শোষিত মানুষকে মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়েছেন। এ কথা পরীক্ষিত সত্য যে, পৃথিবীর ইতিহাসে বিপ্লব সংগঠিত হওয়া এবং সেই বিপ্লবের দীর্ঘতাকে উজ্জীবিত রেখে মুক্তির চূড়ান্ত স্বাদে নিয়ে যেতে বিপ্লব-সংশ্লিষ্ট আর সবকিছুর থেকে কবিতা কোন অংশেই কম ভূমিকা রাখেনি। তাই পৃথিবীর সকল বিপ্লবী কবি ও কবিতাকে একত্রীকরণের প্রয়াসের প্রথম প্রকাশিত রূপ ‘বিপ্লবের কবিতা’। বইটি গ্রন্থনা ও সম্পাদনা করেছেন বাবলু ভট্টাচার্য। ভূগোলে আফ্রিকার অবস্থান মোটামুটি নির্দিষ্ট। কিন্তু মিশর এবং আংশিকভাবে ইথিওপিয়াকে বাদ দিলে এই বিরাট মহাদেশ মানবসভ্যতার ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত তার যথাযোগ্য পরিচয় লাভ করেনি। আফ্রিকার অধিবাসীদের বিচিত্র সমাজ-সংস্কৃতি, ভাষা-সাহিত্য, ধর্ম, শিল্পকলা, চিত্তসম্পদ নিয়ে কিছু অধ্যবসায় এবং গুরুত্বপূর্ণ চর্চা হয়েছে বটে, কিন্তু শিক্ষিত সাধারণের কাছে এই সীমাবদ্ধ জ্ঞানও পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ এখনও প্রায় কোন দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। অধিকাংশ মানুষের কাছে আফ্রিকা এখনও পর্যন্ত অন্ধকার মহাদেশ। সর্ব-আফ্রিকীয় জাতিতত্ত্বের চৌহদ্দী মহাদেশের সীমারেখায় আবদ্ধ থাকেনি। আগ্রাসী ইউরোপ একদিকে আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলকে শোষণ এবং শাসন করেছে। অন্যদিকে লাখ লাখ আফ্রিকাবাসীকে ক্রীতদাস বানিয়ে জাহাজে করে চালান দিয়েছে আমেরিকায়, ওয়েস্ট ইন্ডিজে। চামড়ার কালো রঙের জন্য তাদের সাধারণ আখ্যা হয় ‘নিগ্রো’। আফ্রিকা মহাদেশের সাহিত্য, বিশেষ করে কবি এবং কবিতা সম্পর্কে বাঙালী মনে সশ্রদ্ধ আগ্রহ সঞ্চারিত করার উদ্দেশ্যেই এই পর্ব। এ পর্বের শুরুতেই আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘আফ্রিকা’ কবিতাটি। এছাড়াও এ অধ্যায়ে যেসব কবির কবিতা অনূদিত হয়েছে, তাঁরা হলেনÑ ঘানার কবি এ্যালবার্ট কাইপার মেনশা, দক্ষিণ আফ্রিকার ব্রেটেন ব্রেটেনবাখ, সেখানকার আরেক কবি অসওয়াল্ডি জোসেফ মিটশালি, উগান্ডার কবি ডেভিড রুবাদিরি, কেনিয়ার কবি জন মবিতি, সেনেগালের কবি ডেভিড দিওপ সেখানকার অন্য দুই কবি নিওপলদ সেদার সাঁগর এবং বিরাগো দিয়প, কেনিয়ার যোসেফ কারিউকি, মার্তিনিকে’র কবি এমে সেজেয়ার, নাইজেরিয়ার কবি গ্যাব্রিয়েল ওকারা, সেখানকার আরেক কবি পিটিকা নটুলি, সুদানের সাধারণ মানুষের কবি মাহজোব মহম্মদ শেরিফ, মালাবির অগ্রণী কবিদের অন্যতম ফ্র্যাঙ্ক চিপাসুলা, মোজাম্বিকের কবি নেয়োমিয়া ডি সুজা, দক্ষিণ আফ্রিকার কবি ডি সেপ্টেম্বর, নাইজেরিয়ার কবি ওয়ে সোয়েঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকার কবি মাজিসি কিউনেন, মালাবির অগ্রগণ্য কবিদের মধ্যে অন্যতম ইনোসেন্ট বান্ডা, সেখানকার আরেক কবি লুপেঙ্গা মফান্দে প্রমুখ। আফ্রিকার কবিতাগুলো অনুবাদ করেছেন : শিবনারায়ণ রায়, নরেণ গুহ, চৈতালী চট্টোপাধ্যায়, রাজলক্ষ্মী দেবী, উত্তম দাশ, মন্দিরা রায়, রাহুল রায়, লোকনাথ ভট্টাচার্য, নমিতা চৌধুরী, অশোক কুমার সেনগুপ্ত, অর্ধেন্দু চক্রবর্তী প্রমুখ কবি। দ্বিতীয় পর্বে আছে স্পেনের কবিতা। যে কোন দেশের সাহিত্যধারা গড়ে ওঠার পেছনে সে দেশের ইতিহাসের প্রভাব বা ঐতিহ্যকে কিছুতেই অস্বীকার করা যায় না। বিশেষ করে সে ইতিহাসের সঙ্গে যদি জড়িয়ে থাকে অসংখ্য যুদ্ধের রক্তক্ষয়ী স্মৃতি। ইউরোপের এক নির্জন প্রান্তে পড়ে থাকা অনাদৃত স্পেন অনাদিকাল থেকে প্ররোচনা জুগিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের লোলুপ বণিকদেরÑ যার স্মৃতি আজও অক্ষয় হয়ে আছে প্রাচীন হিস্পানি শিল্প-সাহিত্য-লোকগাথা আর প্রাণোচ্ছল সঙ্গীতে। তারপর অগণিত আঙুরবাগান আর জলপাই বনে ঘেরা, অনাবিল সূর্যালোকে ধোয়া স্পেন একদিন দাঁড়িয়েছে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মুখোমুখিÑ যা একদিন গাঢ় ছায়া ফেলেছিল সে দেশের মানুষের মনে। তার মধ্যে থেকেই জন্ম নিয়েছে স্পেনের নতুন এক সাহিত্যের ধারা। সেই ধারারই সামান্য একটা অংশকে এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। এই পর্বে অনূদিত হয়েছে পাবলো পিকাসো, লুই পেরেজ ইনফান্তি, হুয়ান রামন হিমেনেথ, লিও ফেলিপ, জোসে মোরেনো ভিলা, ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা, মিগুয়েল হেরনান্দেজ, এমিলিও প্রাদোস, ভিসেন্ত আলেকজান্ডার, র‌্যাফায়েল আলবের্তি, লুই থের্নুদা, কারমেন কন্দে এবেলান, গাব্রিয়েল ক্লেয়া, দিওনিসিও রিদ্?রুয়েজো, রামন দ্য গার্থিয়াসল, এ্যাঞ্জেল গোঞ্জালেজ মানিজ, গারমান ব্লেইবার্গ, জোসে লুই হিদালগো, জোসে হিয়েরো, মার্কোস আনা, মারিয়া বেনিতো, আন্তোনিও মাকাদো, ম্যানুয়েল আলতোলাগির প্রমুখ কবির কবিতা। কবিতাগুলো অনুবাদ করেছেন : বিষ্ণু দে, দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়, পূর্ণেন্দু পত্রী, অসিত সরকার, রণজিৎ ঘোষ, সুপর্ণা সেন, আলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, তরুণ সান্যাল, প্রবাল গুপ্ত। স্পেনের প্রত্যক্ষ ঔপনিবেশিক অধিকার থেকে ১৯২০ সালে মুক্ত হয় লাতিন আমেরিকা এবং তখন থেকেই এখনকার নতুন ইতিহাস নিজস্ব নিয়মেই শুরু করে তার পথচলা। প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতার সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত লাতিন আমেরিকান কবিরা কোন বিশেষ দেশের সীমানায় নিজেদের আবদ্ধ রাখেননি, গোটা মহাদেশটিকে কল্পনায় রেখেই তাঁরা কবিতা রচনা করেছেন। এই কবিতা শেষপর্যন্ত হয়ে উঠেছে ‘লাতিন আমেরিকার কাব্য মেলা’। স্বপ্নের মধ্য দিয়ে এক-একজন কবি দেখতে পান তাঁদের নিজের নিজের পৃথিবীকে। কেমন সেই পৃথিবী? আর কেমন সেই স্বপ্ন- গত এক শতাব্দীর লাতিন আমেরিকান সেইসব কবির স্বপ্ন এবং তাঁদের স্বপ্নের পৃথিবী থেকে একগুচ্ছ নির্বাচিত রচনা নিয়েই এই পর্ব। এ পর্বে অনুবাদ করা হয়েছে আর্জেন্টিনার বিপ্লবী চে গুয়েভারা, চিলির প্রধান কবি পাবলো নেরুদা, সেখানকার আরেক কবি বিসেন্তে উইদোরো, আর্জেন্টিনার অন্যতম লেখক হোর্হে লুইস বোরহেস, পেরুর কবি আন্তোনিও থিসনেরাস, আর্জেন্টিনার কবি আলেহানন্দ্রা পিসারনিক এবং রাউল গুস্তাভো আগুয়েরে, চিলির কবি গাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল, পেরুর কবি সেসার ভাইয়েহো, চিলি আলোচিত কবি নিকানোর পা?ররা, মেক্সিকোর কবি এইমে সাবিনেস, পেরুর কবি হাভিয়ের হেরোদ, নিকারাগুয়ার কবি।
×