ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মোঃ মাহবুবর রহমান

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এবং কিছু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ০৮:৪৯, ২৭ এপ্রিল ২০১৯

  স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এবং কিছু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত

১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে সৃষ্ট পাকিস্তান ও ভারত মৌলিক সমস্যার কোন সমাধানই করতে পারেনি বরং নতুন সমস্যার জন্ম দিয়েছিল। পাকিস্তানের ক্রীড়নক হিসেবে জন্ম হয়েছিল পূর্ব বাংলার, নতুন দাসত্বের শৃঙ্খল চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল- যা পাকিস্তান জন্মের পরপরই পূর্ব বাংলার নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে শেখ মুজিবুর রহমান কঠিনভাবে বুঝতে পেরেছিলেন। পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণ, বঞ্চনা, আধিপত্যবাদের নগ্ন থাবা, দুই অংশের মধ্যে সব আঙ্গিকেই বিশাল বৈষম্য, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প, একতরফা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র ইত্যাদি অন্য নেতৃবৃন্দের তুলনায় ভয়ঙ্কররূপে বুঝতে পেরেছিলেন আপাদমস্তক ও চিন্তা চেতনায় প্রকৃত বাঙালী অত্যন্ত সাহসী ও জনদরদী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে এ সবের চরম প্রতিবাদ করেছেন, জনমত সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন, নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। তাই পাকিস্তানের ২৩ বছরে তিনি ১৪ বার গ্রেফতার, রাজনৈতিক কারণে প্রায় ১৩ বছর কারাবাস ও দুবার ফাঁসির মঞ্চ থেকে ফিরে এসেছেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ এসেম্বলির একজন নির্বাচিত সদস্য হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকারের যুক্তফ্রন্টের একটি মন্ত্রণালয় বন্ধ করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ সংগঠিত করলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৫৫-১৯৫৮ কালীন দ্বিতীয় মেয়াদেও শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের জাতীয় সংসদে সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। কেন্দ্রীয় সরকারকে শক্তিশালী করার উদ্দেশ্য দেখিয়ে ১৯৫৬ সালে ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তান নামকরণার্থে পাকিস্তান সরকার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পশ্চিমের চারটি প্রদেশকে একত্রিত করে একটি ইউনিট হিসেবে ওয়েস্ট পাকিস্তান নামকরণ করেন। অনুরূপ চিন্তায় দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত ‘ইস্ট বেঙ্গল’-এর নাম ইস্ট পাকিস্তান রাখার সিদ্ধান্ত নিলে শেখ মুজিবুর রহমান অকাট্য যুক্তি দিয়ে ‘ইস্ট বেঙ্গল’ নাম অপরিবর্তিত রাখার দাবি জানান এবং রাষ্ট্রভাষা বাংলা সম্পর্কেও সিদ্ধান্ত হয়নি উল্লেখ করেন। একজন নির্বাচিত সদস্য হিসেবে দৃঢ়ভাবে তিনি সংসদে বলেছিলেন ‘আমি প্রথমে একজন মানুষ, অতঃপর একজন বাঙালী, সবশেষে একজন মুসলমান। আমার মূল পরিচয় আমি একজন বাঙালী। ‘ইস্ট বেঙ্গল’ শব্দটির একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট রয়েছে, এর গভীর মূল্যবোধ আছে ঐ এলাকার মানুষের কাছে। তাদের মতামত না নিয়ে এক তরফাভাবে নাম পরিবর্তন যৌক্তিক হবে না। কিন্তু তা অগ্রাহ্য করা হয়। এরূপভাবে সকল ক্ষেত্রেই পাকিস্তানীদের আধিপত্য দেখেন। এর প্রতিবাদে গণমানুষের স্বার্থে আন্দোলন করার প্রয়োজনে তিনি ১৯৫৭ সালে যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিত্ব পরিত্যাগ করেন। অতঃপর কালক্রমে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন বা স্বাধিকারের মাঝে বাঙালীর অস্তিত্ব খোঁজার চেষ্টা করেন। তাই ১৯৬৬ সালে ৬ দফা পেশ করেন। সে জন্য তাঁকে রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় দীর্ঘ কারাবাস করতে হয়। কিন্তু তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, গণযোগাযোগ, অনবদ্য দেশপ্রেমিক চরিত্র, আত্মত্যাগ তাকে এত জনপ্রিয় করে তুলেছিল যে, ছাত্র জনতার চরম আন্দোলনের চাপে পাকিস্তান সরকার তাকে মুক্তি দিতে এবং মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। ১৯৬৯ সালের সেই গণঅভ্যুত্থানে তিনি ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত হন। তারই ধারাবাহিকতায় পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন বা স্বাধিকারকে মেনিফেস্টো করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজয় অর্জন করে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের জনক, আমাদের জাতির পিতা, তিনিই বাংলাদেশের রূপকার, সোনার বাংলার বাস্তব চিন্তাবিদ। কিন্তু নিকৃষ্ট মোস্তাক-জিয়া খুনী চক্র ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে পৈশাচিকভাবে সপরিবারে হত্যা করার পর বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করার এক ধিকৃত অপচেষ্টা চালিয়েছে বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যার ষড়যন্ত্রকারী এবং হত্যাকারী দেশী-বিদেশী চক্র। ১৯৭৫ পরবর্তী দীর্ঘ ২১ বছর আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে এ মিথ্যাচারটি অনেকের মনে বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা এবং সৃষ্টির ইতিহাস সম্পর্কে অনেক ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি করেছিল। তবে দীর্ঘদিন পরে হলেও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা এবং নানাবিধ কর্মসূচী গ্রহণ এবং ১৯৯৬ সাল ও তারপর টানা তিনবার নির্বাচিত সরকার প্রধান হয়ে অভূতপূর্ব উন্নয়ন এবং বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়ন সাধনের মাধ্যমে অনেক বিভ্রান্তি দূর করতে সক্ষম হয়েছেন। এখনও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা সংক্রান্ত সেই মিথ্যা তথ্য এবং স্বাধীনতা ঘোষণার মহানায়ক এবং দিন-ক্ষণ সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশের অপপ্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। ইতোপূর্র্র্বেও বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতার ঘোষণা এবং দিক-নির্দেশনা সম্পর্কে লিখেছি। প্রমাণভিত্তিক ইতিহাস জাতির সামনে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছি। তারপরও কুচক্রীরা নতুন প্রজন্মের মাঝে প্রশ্ন তোলে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেন ৭ মার্চ তার ঐতিহাসিক ভাষণে এবং লিখিত টেলিগ্রাম বার্তায় ২৫ মার্চ সাড়ে এগারোটায়, আর স্বাধীনতা দিবস পালিত হয় ২৬ মার্চ, মুজিবনগর দিবস পালন করা হয় ১৭ এপ্রিল, এর ব্যাখ্যা কি? নতুন প্রজন্মের নিকট প্রমাণভিত্তিক এর ব্যাখ্যা প্রদান করাই আজকের আমার এ লেখার উদ্দেশ্য। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা এবং এ সংক্রান্ত তার যাবতীয় দিক নির্দেশনা ১৯৭০-এর নির্বাচনে ১৬৭ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অনুসমর্থিত ও স্বাক্ষরিত ঘোষণাপত্র এবং এ সংবলিত অডিও/ভিডিও সংরক্ষিত রয়েছে। সেগুলোর যথাযথ ব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা, ঘোষণার দিন-ক্ষণ, স্বাধীনতা ঘোষণার কারণ, স্বাধীনতা দিবস, ঘোষণাপত্রের দিন, মুজিবনগর দিবস ইত্যাদির যথাযথ ব্যাখ্যা করাই আজকের এ প্রচেষ্টা। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ১০ এপ্রিল, ১৯৭১ সাল ১৯৭১ সাল ৭ মার্চ, রেসকোর্স ময়দান, ঢাকা। বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা দিলেন- এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম/এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। তিনি নির্দেশনা দিলেন- আর যদি একটি গুলি চলে/ প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। ২৫ মার্চ ভয়াল কালরাত্রি বর্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়লে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা দিলেন: This may be my last message, from today Bangladesh is INDEPENDENT, I call upon the people of Bangladesh WHEREVER you might be and with WHATEVER you have to resist the army occupation to the last, your fight must go on until the last soldier of the PAKISTAN OCCUPATION army is expelled from the soil of BANGLADESH and final VICTORY is ACHIEVED. শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধ। ১০ এপ্রিল নির্ধারিত হলো স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, মুজিবনগর সরকার , বাংলাদেশ ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত সাড়ে এগারোটায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা যুদ্ধ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতেই ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়। ‘যেহেতু একটি শাসনতন্ত্র প্রণয়নের উদ্দেশে প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭১ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল; যেহেতু এসব নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ ১৬৯ জন প্রতিনিধির মধ্যে ১৬৭ জন আওয়ামী লীগ সদস্যকে নির্বাচিত করেছিলেন; যেহেতু একটি শাসনতন্ত্র প্রণয়নের উদ্দেশ্যে জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণকে এক সভায় মিলিত হবার জন্য ডেকেছিলেন; যেহেতু পরিষদের এই আহূত বৈঠক এক তরফা ও বে-আাইনীভাবে অনির্র্দিষ্টকালের জন্য মূলতবি রাখা হয়; যেহেতু তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষার পরিবর্তে এবং বাংলাদেশের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনারত অবস্থায় থেকেও পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ এক অন্যায় ও প্রতারণাপূর্ণ যুদ্ধ করে; যেহেতু এরূপ প্রতারণাপূর্ণ ব্যবহারের বাস্তব অবস্থা ও পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের ন্যায়সঙ্গত দাবি পূরণের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঢাকায় স্বাধীনতার এক ঘোষণা দান করেন এবং বাংলাদেশের মর্যাদা ও সংহতি রক্ষার জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আবেদন জানান; যেহেতু একটি নৃশংস ও বর্বর যুদ্ধ পরিচালনায় মেতে পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ অন্যান্যদের সাথে বাংলাদেশের বে-সামরিক ও নিরস্ত্র মানুষের ওপর অগণিত গণহত্যা ও অভূতপূর্ব নিপীড়ন চালিয়েছে এবং এখনও চালিয়ে যাচ্ছে, এবং যেহেতু পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ একটি অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে এবং গণহত্যা চালিয়ে এবং দমনমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশে জনপ্রতিনিধিদের পক্ষে মিলিত হবার বা শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করার এবং নিজেদের একটি সরকার গঠনের কাজ অসম্ভব করে তুলেছে; যেহেতু বীরত্ব, সাহস ও বিপ্লবী উদ্যমের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ বাংলাদেশ ভূখ-ের ওপর কার্যকরী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন, যাদের ইচ্ছাই সর্বোচ্চ, বাংলাদেশের সেই জনগণের দেয়া গণরায় (ম্যান্ডেট) মেনে নিতে বাধ্য বলে আমরা বাংলদেশের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা একটি গণপরিষদ গঠন করছি এবং পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা চালিয়ে এবং বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচারের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য, বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র হিসেবে গঠন ও ঘোষণা করছি এবং এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স¦াধীনতা ঘোষণার প্রতি অনুসমর্থন দান করছি। আমরা বাংলদেশের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সুনিশ্চিতভাবে ঘোষণা করছি ও অঙ্গীকার নিচ্ছি যে- ১. একটি শাসনতন্ত্র প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই থাকবেন এই প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম থাকবেন উপ-রাষ্ট্রপতি এবং রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্রের যাবতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হবেন; ক্ষমামঞ্জুর করাসহ প্রজাতন্ত্রের সর্ববিধ প্রশাসনিক ও আইন প্রণয়ণকারী ক্ষমতাসমূহ প্রয়োগ করবেন; তার হাতে একজন প্রধানমন্ত্রী এবং তার বিবেচনানুযায়ী প্রয়োজনীয় অন্যান্য মন্ত্রী নিয়োগের ক্ষমতা থাকবে; ট্যাক্স ধার্য করার ও অর্থ ব্যয়ের ক্ষমতা থাকবে, গণপরিষদ ডাকার ও ভেঙ্গে দেয়ার ক্ষমতা থাকবে; তিনি বাংলাদেশের জনগণকে একটি শৃঙ্খলাপূর্ণ ও ন্যায়সঙ্গত সরকার দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ন্যায়সঙ্গত কার্য সম্পাদন করবেন; ২. যে কোন অবস্থায় রাষ্ট্রপতি না থাকলে অথবা রাষ্ট্রপতি তার কার্যভার গ্রহণে অসমর্থ হলে বা যে কোন কারণে রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করতে না পারলে, রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত সমস্ত ক্ষমতা, কর্তব্য ও দায়িত্ব উপ-রাষ্ট্রপতির ওপর বর্তাবে এবং তিনি তা প্রয়োগ করবেন; ৩. বিশ্ব পরিবারের সদস্য হিসেবে সকল কর্তব্য এবং দায়িত্ব পালন ও বাস্তবায়িত করব এবং জাতিসংঘের সনদ মেনে চলব; ৪. স্বাধীনতার এই ঘোষণাপত্র ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে কার্যকরী হয়েছে বলে গণ্য করা হবে; ৫. এই দলিলটি কার্যকরী করার উদ্দেশ্যে অধ্যাপক ইউসুফ আলীকে যথাযথভাবে রাষ্ট্রীয় কার্য পরিচালনার ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তিরূপে নিয়োগ করা এবং রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতির কার্যভার গ্রহণের শপথ অনুষ্ঠানের কাজ পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করা হলো; ৬. বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল তারিখে গ্রহণ করা হয়; ৭. ১৯৭ ১ সালের ১৭ এপ্রিল এক গণসমাবেশে এ সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রকাশ করা হয়; ৮. এ ঘোষণাপত্রের ভিত্তিতেই নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়েই বাঙালী জাতি স্বাধীনতার লাল সূর্যকে ছিনিয়ে আনে, বাংলাদেশ নামক একটি নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে বিশ্ব মানচিত্রে; স্বাধীনতার যে স্বপ্ন বাঙালীর চোখে এনে দিয়েছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। লেখক : প্রাক্তন উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর [email protected]
×