ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘বিএনপির সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল আছে’

জাহিদের শপথ নিতে সরকারের চাপ আছে ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০৯:৩৭, ২৭ এপ্রিল ২০১৯

 জাহিদের শপথ নিতে সরকারের চাপ আছে ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিএনপির জাহিদুর রহমান শপথ নিলেও এ বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কোন আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়া হয়নি। তবে শুক্রবার এক অনানুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপির নির্বাচিতদের শপথ নিতে সরকারের চাপ রয়েছে। তবে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যারা শপথ নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। শপথ না নেয়া এবং সংসদে না যাওয়ার দলীয় সিদ্ধান্ত এখনও বহাল আছে। এ বিষয়ে কারও মধ্যে কোন দ্বিমত থাকার কথা নয় উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। গত বৃহস্পতিবার ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে নির্বাচিত বিএনপির এমপি জাহিদুর রহমান জাহিদ দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেন। এ বিষয়ে শুক্রবার রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের মির্জা ফখরুল এ বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। বলেন, সংসদে না যাওয়ার বিএনপির সিদ্ধান্ত বহাল আছে। এ বিষয়ে কারও মধ্যে কোন দ্বিমত নেই। যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ সময় তিনি আরও উল্লেখ করেন দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে নির্বাচিত সদস্য জাহিদুর রহমান জাহিদের সংসদে যোগদানের বিষয়ে দ্বগ্ন নয় বিএনপি। জাহিদুর রহমান শপথ নিয়েছেন দলের সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করে। এটা তিনি অত্যন্ত গর্হিত কাজ করেছেন, অন্যায় করেছেন, অপরাধ করেছেন। এজন্য তার বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেবে যেটা আমরা বলি সাংগঠনিক ব্যবস্থা, সেই ব্যবস্থা অবশ্যই নেয়া হবে। গত ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মাত্র ৬ সদস্য নির্বাচনে জয় লাভ করেন। কিন্তু নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এসে শপথ গ্রহণ ও সংসদে যাওয়া থেকে বিরত থাকে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরপরই বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয় বিএনপি এই কারচুপির নির্বাচন মানে না। এই নির্বাচনে তাদের দলে যারা বিজয় লাভ করেছেন তাদের শপথ নেয়ার প্রশ্ন আসেই না। কিন্তু শপথ নেয়ার ডেটলাইন শেষ হওয়ার আগেই দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে জাহিদুর রহমান শপথ নেন। একই সঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া বাকি চারজন শপথ নেয়ার পক্ষে। তবে জাহিদুর রহমানের শপথের পর বিএনপি পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোন প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়নি। অনানুষ্ঠানিকভাবে দলের মহাসচিব এবং এর আগে গয়েশ্বরচন্দ্র রায় এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেখান। গয়েশ্বর রায় বলেন যারা দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে শপথ নিচ্ছে তারা গণদুশমন। তবে বিএনপির এক সদস্য শপথ নেয়ার পর আওয়ামী লীগ একে স্বাগত জানিয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ নিতে সরকারে চাপ থাকার বিষয়টি উল্লেখ করলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি নাকচ বলে দিয়েছেন। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন বিএনপির কোন বিষয়ে সরকারের চাপ নেই। এদিকে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আমরা মনে করি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এটা জনগণের দল। একজন ব্যক্তি বা একটা গোষ্ঠীর যদি কেউ কোন সিদ্ধান্ত নেয় তাতে দলের বড় কোন ক্ষতি হয় না। এই ধরনের ঘটনায় দলে কোন বিশৃঙ্খলা নেই, এই ধরনের ঘটনা অতীতেও ঘটেছে এবং এতে আমরা খুব বেশি উদ্বিগ্ন নই।’ দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে একজন সদস্য শপথ গ্রহণ করলে তার সংসদ সদস্য পদের বৈধতা নিয়ে বিএনপি স্পীকার অথবা নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি দেবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। দলের আরও যারা নির্বাচিত হয়েছেন দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেয়ার পক্ষে ইতিবাচক কথা বলছেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, এখানে এমপিরা বলতে তো কেউ নেই। এখন পর্যন্ত একজন গেছেন। বাকি যারা আছেন নির্বাচিত সংসদ সদস্য যাদের ইঙ্গিত করছেন, তাদের সিদ্ধান্ত আমরা জানি না বা তারা জানায়নি এখনও। এ বিষয়ে দল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটাই বহাল আছে। আমরা শপথ গ্রহণ করব না এ বিষয়ে কোন দ্বিমত থাকার কথা নয়। শপথ নেয়ার বিষয়ে সরকারের চাপ সম্পর্কে বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন নিঃসন্দেহে চাপ আছে। যে সরকারই আসুক-এই ধরনের সরকার যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয় না তাদের এই ধরনের ভিন্ন অগণতান্ত্রিক কৌশল নিতে হয় ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। এটা তো অস্বাভাবিক যে, দেশের রাজনীতিতে এটা কোন অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। বরাবরই এ ধরনের দল ভাঙার চেষ্টা হয়েছে, ভেঙেছে। কিন্তু বিএনপিকে এভাবে ভেঙে বা দল থেকে ছুটিয়ে নিয়ে গিয়ে কোন লাভ হয়নি। বিএনপি সবসময় তার নিজের পায়ে ফিরে এসে দাঁড়িয়েছে এবং তার স্বমহিমায় জনগণের কাছে গেছে। এবারও দেখেন আপনি যে, কারচুপির নির্বাচন, ডাকাতির নির্বাচন, যে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছি, সেই নির্বাচনেও বিএনপি ইজ দ্য সেকেন্ড লার্জেস্ট অপজিশন পার্টি। বলা যেতে পারে এ বিষয়ে কোন উদ্বেগ নেই। বিএনপি জনগণের দল।
×