ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ড. কামাল ও মোকাব্বিরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ

গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিলে দিনভর নাটকীয়তা

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ২৭ এপ্রিল ২০১৯

 গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিলে দিনভর নাটকীয়তা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, সংবিধানের উর্ধে কেউ না। রাষ্ট্রপতি না, প্রধানমন্ত্রীও না। সবাইকে সংবিধান মেনেই কাজ করতে হবে। কেউ সংবিধানের বাইরে কিছু করলে সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতিবাদ করতে হবে। জবাব চাইতে হবে। নইলে আমরা আমাদের মালিকানা হারাব। যে মালিকানা সংবিধান আমাদের দিয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর গুলিস্তানের কাজী বশির মিলনায়তনে গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিলে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আট বছর পর গণফোরামের কাউন্সিল হয়। অনেকটা তড়িঘড়ি করেই এই আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করা হয়েছে। কাউন্সিলে দিনভর হয়েছে নানা নাটকীয়তা। শুরুতেই দলের নির্দেশ অমান্য করে সদস্য হিসেবে শপথ নেয়া মোকাব্বির খানকে দেখা যায় মঞ্চে কামাল হোসেনের পাশে বসে থাকতে। যদিও শপথ নেয়ার পর মোকাব্বির মতিঝিলে কামাল হোসেনের চেম্বারে দেখা করতে গেলে তাকে ভর্ৎসনা করে বের করে দেয়া হয়েছিল। গণফোরামের পক্ষ থেকে বলা হয়, মোকাব্বির প্যাড চুরি করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিতে স্পীকারকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। তাই দল থেকে তাকে বার বার বহিষ্কারের হুমকিও দেয়া হয়েছিল। কাউন্সিলে কামাল হোসেনের সঙ্গে বসা অবস্থায় দলের প্রথম এই সংসদ সদস্য মোকাব্বিরকে দেখে নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়। দল প্রধানের দ্বৈত ভূমিকায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসিন মন্টু, রাফিকুল ইসলাম পথিকসহ কেন্দ্রীয় বেশ কয়েক নেতা। এরমধ্যে পথিক গণফোরাম থেকে দুপুরে পদত্যাগের ঘোষণাও দেন। বিকেলে মন্টু জানান, কাউন্সিলে অংশ নেয়া বেশিরভাগ সদস্যই মনে করেন মোকাব্বিরকে দল থেকে বহিষ্কার করা উচিত। তবে এ ব্যাপারে দলপ্রধান সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত দেবেন। মন্টু বলেন, নির্বাচন বর্জনের মধ্য দিয়ে আমরা জাতির কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম পার্লামেন্টে যাব না। কিন্তু তা পালন করতে পারিনি। দলপ্রধান একেক সময় একেক ধরনের কথা বলেন। এতে সঙ্কট বাড়ছে। যিনি নির্দেশ অমান্য করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিলেন তিনি আজ কিভাবে কাউন্সিলে যোগ দিয়ে মঞ্চে উঠলেন এমন প্রশ্ন রাখেন মন্টু। এদিকে সকালের পর থেকেই খবর রটে দলের সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন আনছেন কামাল হোসেন। এ ঘটনায় অসন্তোষ আরও বাড়ে। সব মিলিয়ে কামাল হোসেন ও মোকাব্বিরের ওপর ক্ষোভের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হলো দলটির বিশেষ কাউন্সিল। এবারের বিশেষ কাউন্সিলের স্লোগান ছিল ‘গণতন্ত্র উদ্ধারে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোল’। এতে দলটির বিভিন্ন জেলা নেতারা অংশ নেন। তবে কাউন্সিলজুড়ে প্রাধান্য ছিল নির্বাচনের আগে ও পরে যারা দলে যোগ দিয়েছেন সেসব নেতার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপিকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে তোলেন কামাল হোসেন। নতুন এই রাজনৈতিক মোর্চার আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন বঙ্গবন্ধু সরকারের সাবেক এই মন্ত্রী। নির্বাচনে ফ্রন্ট আটটি আসন পায়। এরমধ্যে দুটি গণফোরামের। আট জনের মধ্যে এখন পর্যন্ত শপথ নিয়েছেন তিনজন। ৩০ এপ্রিলের মধ্যে আরও কয়েকজনের শপথ নেয়ার কথা। জনগণের উদ্দেশে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ক্ষমতার উৎস হলো জনগণ, আর কেউ না। সুতরাং আপনাদের দেখতে হবে, যারা ক্ষমতায় তারা কি দেশের স্বার্থে নাকি নিজের স্বার্থে কাজ করছেন। নাকি অন্য কিছু করছেন। উল্টো কিছু করলে সংগঠিত হয়ে তাদের থামাতে হবে। কারণ, জনগণ গণতন্ত্রের পাহারাদার। আর এই নাগরিকরা যদি দায়িত্ব পালন না করেন তাহলে গণতন্ত্র স্বৈরতন্ত্রে পরিণত হয়। পুলিশের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে সাবেক আইনমন্ত্রী কামাল হোসেন বলেন, পুলিশ তাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে দেশে গণতন্ত্র ও সংবিধানের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। মনে রাখতে হবে, পুলিশ কিন্তু দেশের মালিক না, দেশের সেবক। সংবিধান মেনে তারা আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে। আপনারা সতর্ক থাকবেন, পুলিশ যেন তার ক্ষমতার বাইরে গিয়ে কোন অন্যায়-অত্যাচার করতে না পারে। সুষ্ঠু গণতন্ত্র ও সংবিধানের শাসন তখনই থাকে যখন পুলিশ তার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করে। জনগণকে অবাধ ও নিরপেক্ষ বিষয়টি ভালভাবে বুঝতে হবে উল্লেখ করে গণফোরাম সভাপতি বলেন, অর্থের বিনিময়ে ভোট বিক্রি করা অন্যায়। জনগণকে এসব ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এ ছাড়া তিনি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ও ঐক্য গড়ার ওপর জোর দেন। এদিকে দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া। ২০১১ সাল থেকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মোস্তফা মোহসীন মন্টু। দলের কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম পথিক বলেন, আমাদের দলের মধ্যে একটা আলোচনা ছিল ভেতরে ভেতরে। কামাল হোসেন মনে করেন, মন্টু কিছু করেননি। নানা রকম বিষয় আছে। অনেকেই মনে করেন, মোস্তফা মোহসিন মন্টুর সব ধরনের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সংগঠনের জন্য কাজ করেননি। আমাদের সমালোচনা ছিল। জানতে চাইলে মোস্তফা মোহসিন মন্টু বলেন, আমি একটু অসুস্থ। আর সাধারণ সম্পাদক পদে থাকার বিষয়ে আমার আগ্রহ নেই, আমি এই পদে থাকব না। কামাল হোসেন বলেন, নিরাশ হলে চলবে না। জনগণের বিজয় হবেই হবে। দু’তিন বছর কেউ এভাবে চলতে পারে। জনগণ ঠিকই সময়মতো জবাব দেবে। তবে জনগণ কার্যকর ভূমিকা না রাখলে সংবিধানকে অবজ্ঞা করে যারা ক্ষমতা ধরে রাখতে চায় তারা লাভবান হবে।
×