ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বাস্থ্যঝুঁকিতে কক্সবাজার

প্রকাশিত: ১০:১৬, ২৭ এপ্রিল ২০১৯

 স্বাস্থ্যঝুঁকিতে কক্সবাজার

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ রোহিঙ্গাদের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে কক্সবাজার। রোহিঙ্গারা বিভিন্ন ধরনের রোগ নিয়ে এদেশে এসেছে। চিকিৎসকদের মতে, রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে গিয়ে তাদের কাছে মিলছে এইড্স, ডিপথেরিয়া-কলেরাসহ নতুন নতুন রোগ। রোহিঙ্গাদের কারণে ৪ পৌরসভা ও ৭১ ইউনিয়নের সার্ভার স্টেশন দীর্ঘ ২ বছরের কাছাকাছি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে জন্মনিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্রসহ অনেক সেবা বন্ধ থাকায় জনগণের দুর্ভোগ বেড়েছে। পাসপোর্ট করতে গেলে পুলিশ ভেরিফিকেশনে ব্যাপক হয়রানিসহ রোহিঙ্গাদের কারণে উখিয়া টেকনাফের স্থানীয় জনগণ চরম দুর্ভোগে রয়েছে। রোহিঙ্গাদের কারণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে টেকনাফ উখিয়া এলাকার চাষাবাদের জমি, চিংড়ি প্রকল্প, পাহাড়, বনাঞ্চল, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ও স্থানীয়দের ক্ষেতখামার। কুতুপালং থেকে কোটবাজারের যাতায়াতের রাস্তা মাত্র ১৫ মিনিটের পথ। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত এনজিওর গাড়ির জ্যামের কারণে সামান্য পাড়ি দিতেও কমপক্ষে একঘণ্টা সময় লাগে। রোহিঙ্গাদের কারণে জেলার সর্বত্র দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর থেকে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য বেড়েছে দ্বিগুণ। এমনকি কোন দ্রব্যের দাম কমতি নেই। সচেতন মহল বলেন, এ অবস্থা থেকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বাঁচানো দরকার। কেননা লাখ লাখ রোহিঙ্গার কারণে নিজের দেশটাকে ধ্বংস করতে পারি না। আগে দেশ বাঁচলে পরে মানবতা করতে পারব। তাই কালবিলম্ব না করে উখিয়া টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করা দরকার। কক্সবাজারে একটি বেসরকারী সংস্থার উদ্যোগে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সমস্যাগুলোর ফলাফল এবং সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া বিষয়ে সেমিনারে প্রধান অতিথি শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোঃ আবুল কালাম বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটি বর্তমানে আমাদের সকলের জন্যই চাপের। এ সমস্যার শিকার শুধু রোহিঙ্গারাই নয়, স্থানীয় লোকজনও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশের। মানুষের জীবিকার। তাই সহায়তা শুধু রোহিঙ্গাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না। রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীকেও সহায়তা করা জরুরী। স্থানীয়রা বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবিকা ও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে প্রতিদিন বেরিয়ে পড়ে স্থানীয় বাজারসমূহে। তারা নগদ টাকায় কিনে নিয়ে যাচ্ছে মাছ, তরিতরকারিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি। এক শ্রেণীর অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা মাস্তানদের জন্য উখিয়া টেকনাফে স্থাপিত ছোটবড় ৩৩টি আশ্রয় শিবিরে অবস্থানকৃত রোহিঙ্গারাও রয়েছে টেনশনে। কারণ সন্ত্রাসী রেহিঙ্গাদের নিয়ে ক্যাম্পে প্রতিদিনই ঝামেলা বাড়ছে। রোহিঙ্গাদের সমস্যা একটি শেষ হলে ক্যাম্পে নতুন আরও একটি উদ্ভব হচ্ছে। ক্যাম্প অভ্যন্তরে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি, মালয়েশিয়া রোহিঙ্গা পাচার ও ইয়াবা বিকিকিনির ঘটনায় নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে স্থানীয় প্রশাসন ও সচেতন মহলকে। রোহিঙ্গাদের দিয়ে চিহ্নিত ইয়াবা ডিলাররা ইয়াবার চালান আনছে মিয়ানমার থেকে। সূত্র জানায়, রোহিঙ্গারা অকৃতজ্ঞ জাতিগোষ্ঠী। মিয়ানমারে থাকা অবস্থায় সেনা সদস্য ও রাখাইনরা রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে। বর্তমানে রোহিঙ্গাদের জাতি ভাই রোহিঙ্গারাই মিয়ানমার সেনা বাহিনীর পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি করতে বাংলাদেশে এসে ধরা পড়েছে। তারা ছদ্মবেশে আশ্রয় শিবিরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করে পাচার করছিল মিয়ানমারে। উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবির থেকে একজন রাখাইনসহ সন্দেহভাজন দুই মিয়ানমার নাগরিককে আটক করেছে পুলিশ। অনেকে তাদের মিয়ানমারের গুপ্তচর বলে সন্দেহ করছে। রবিবার রাতে সন্দেহজনক ঘোরাফেরা ও রোহিঙ্গাদের অবস্থাদি অবলোকন করার সময় পুলিশ তাদের আটক করে। আটককৃতরা হচ্ছে- মিয়ানমারের টিনবোইয়া নিগোর উমিলার পুত্র থাইনচেনাইন ও ইয়াঙ্গুনের লাছিয়ে থানার মৃত হোছনের পুত্র জজ মিয়া। উখিয়া থানা পুলিশ বৈদেশিক নাগরিক আইনে মামলা রুজু করে তাদের জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। এদিকে শিবিরে অবস্থানকৃত বহু রোহিঙ্গার হাতে বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট রয়েছে বলে তথ্য মিলেছে। উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের নয়াপাড়া রেজিস্টার্ড ক্যাম্প দুটির বহু রোহিঙ্গা মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে অবস্থান করছে। তারা সেখান থেকে অর্থ পাঠিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে জমিজমাও কিনছে। সীমান্তে অনুপ্রবেশের পর দালালদের মাধ্যমে এনআইডি ও পাসপোর্ট বানিয়ে ফেলেছে রোহিঙ্গারা। তাদের জন্য এক পায়ে খাড়া হয়ে সহযোগিতায় রয়েছে আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপ আরএসও ক্যাডাররা। ফলে তারা আর রোহিঙ্গা নয় দাবি করে এনআইডি দেখিয়ে বাংলাদেশী বলে বাস করে যাচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। বর্তমানেও হালনাগাদ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে মরিয়া হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গারা।
×