ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সূর্যতাপে পুড়ছে রাজশাহী ॥ বিপর্যস্ত জনজীবন

প্রকাশিত: ১০:১৭, ২৭ এপ্রিল ২০১৯

 সূর্যতাপে পুড়ছে রাজশাহী ॥ বিপর্যস্ত জনজীবন

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ প্রখর তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরের জনপদ রাজশাহী। দিনভর সূর্যের আগুন যেন ঢেলে পড়ছে মাটিতে। সূর্যোদয়ের পর থেকেই রুদ্রমূর্তি ধারণ করছে প্রকৃতি। মৃদু তাপপ্রবাহেই মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে। মানবকুলের পাশাপাশি দুঃসহ গরমে হাঁসফাঁস করছে প্রাণিকুলও। শহরের দক্ষিণের পদ্মার ধু-ধু বালুচর থেকে বয়ে আসা গরম বাতাস শরীরে বিঁধছে আগুনের হলকার মতো। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় জুমার নামাজের পর থেকে প্রধান সড়কগুলো ফাঁকা হয়ে পড়ে গরমের কারণে। তাপমাত্রার পারদ কেবল ওপরে উঠছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহীতে দেশের সর্বোচ্চ ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তবে শুক্রবার তাপমাত্রা কিছুটা কমে ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমেছে। কিন্তু তাপমাত্রা কমলেও কমেনি গরম। বিকেল চারটার পর থেকে পশ্চিম আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে। এতে হঠাৎ করেই ভ্যাপসা গরমের মাত্রা বেড়েছে। মানুষের শরীর দিয়ে পানির মতো ঘাম ঝরছে। রাজশাহী আবহাওয়া অধিদফতরের পর্যবেক্ষক শহীদুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী অঞ্চলের ওপর দিয়ে গত কয়েক দিন ধরে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা সাধারণত ৩৬ থকে ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। আর ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রী পর্যন্ত তাপমাত্রা থাকলে তাকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বলা হয়। এছাড়া তাপমাত্রা ৪০-এর ওপরে উঠলেই তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলে বলা হয়ে থাকে। ফলে রাজশাহীর ওপর দিয়ে প্রায় এক সপ্তাহ থেকে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে তাপপ্রবাহ ততই বাড়ছে। শুক্রবার রাজশাহীর তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও গরম কমেনি। বরং আকাশে মেঘ জমতে শুরু করায় ভ্যাপসা গরম বেড়েছে। ভারি বৃষ্টি না হলে তা কমার সম্ভাবনা নেই। শহীদুল ইসলাম বলেন, দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ থেকে ৩৫ ডিগ্রীর মধ্যে ওঠানামা করছিল। কিন্তু গত ২০ এপ্রিল থেকে তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসের ওপর উঠে যায়। ২১ এপ্রিলই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এরপর ২৪ এপ্রিল আবারও রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তাপমাত্রা ওঠানামা করলেও গরম কমছে না বরং বাড়ছেই বলেন এই আবহাওয়া কর্মকর্তা। এদিকে, ওষ্ঠাগত গরমে সাপ্তাহিক ছুটিতে রাস্তা-ঘাট দুপুরের পর থেকে ফাঁকা হয়ে পড়েছে। এর ওপর শুক্রবার সকাল থেকে রাজশাহীর মূল শহরসহ অধিকাংশ এলাকাই রয়েছে লোডশেডিংয়ের কবলে। ফলে ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। প্রখর রোদ থেকে ঘরে ফিরেও গরমে ছটফট করছেন সাধারণ মানুষ। দুপুরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তীব্র গরমের কারণে হাসপাতালে হিটস্ট্রোক ও ডায়েরিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এছাড়া হৃদরোগ, ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়ে রোগীর ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। বগুড়া সমুদ্র হক, বগুড়া থেকে জানান, এবারের গ্রীষ্মে ঠা ঠা রোদে মানুষের হাঁসফাঁস এবং তৃষ্ণায় যখন ছাতি ফেটে যাওয়ার উপক্রম তখন তরমুজ শরীরে পানির অভাব মিটিয়ে প্রশান্তি এনে দেয়। তরমুজের ৯২ শতাংশই পানি। যা খেলে শরীরের ওজন বাড়ে না। কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি মৌসুমে তরমুজের উৎপাদন বেশি। গ্রীষ্মের কিছুটা আগেই এবার তরমুজ উঠেছে। ভর মৌসুমের পরও অনেকটা সময় তরমুজ থাকবে। এমনটিই আশা করছে তারা। তরমুজের সংস্কৃত নাম তরম্বুজ। একটা সময় দেশের দক্ষিণাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলে তরমুজ ফলত। পরবর্তী সময়ে নাটোর, ঠাকুরগাঁওসহ উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি এলাকায় তরমুজের আবাদ শুরু হয়। বর্তমানে চরাঞ্চলেও তরমুজের আবাদ হচ্ছে। নদীবাহিত যে এলাকায় নতুন চর জেগে উঠছে সেই চর ও চরগ্রামেরও তরমুজের আবাদ সম্প্রসারিত হচ্ছে। যে কারণে দিনে দিনে তরমুজের আবাদ ও উৎপাদন দুইই বেড়েছে। দেশে বর্তমানে দুই ধরনের তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে। একটি পিত (হালকা কালো) রঙের ফুটবলের মতো গোল। জাপান, থাইল্যান্ড, তাইওয়ানের ২০ জাতের এই রঙের তরমুজ হাইব্রিড। আরেকটি তরমুজ সবুজের মধ্যে সাদা স্ট্রাইপ (ডোরাকাটা) দেখতে অনেকটা ডিমআকৃতির। এই তরমুজকেও বলা হচ্ছে হাইব্রিড। নিকট অতীতে এই তরমুজের পরিচিতি ছিল খরমুজ। খোসা তরমুজের তুলনায় শক্ত, পুরু ও খসখসে। এই জাতটি এসেছে ভারতের উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান থেকে। কালো ও সাদা ডোরাকাটায় সবুজ উভয় রঙের তরমুজে দ্রব্য ও ভেষজ গুণ আছে। তরমুজের বাইরেরটা পিত ও সবুজ রঙের ভিতরটা লাল রঙের। তরমুজে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় মানব দেহে গ্রীষ্মের খরতাপে ডিহাইড্রেশনে তরমুজ বেশি উপকারী। চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ বলছেন, মিষ্টি স্বাদের রসালো ফল তরমুজে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে না। তরমুজে আছে ভিটামিন এ, সি, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি-৬, ডি-১, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ক্যারোটিন, পেকটিন, প্রপিওলিক এসিড ও এমাইনো এসিডসহ বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান। তরমুজে পুষ্টিমান বেশি। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীগণ বলছেন, প্রত্যেক মানুষের দিনে অন্তত ২শ’ গ্রাম ফল খাওয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে তরমুজ অনেকটা পূরণ করে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও হর্টিকালচার বিভাগ জানায়, দেশে ৭০ ধরনের ফল উৎপাদিত হচ্ছে। ফলের উৎপাদনে তরমুজ এগিয়ে গেছে। পরিকল্পিত আবাদ ও যত্নের সঙ্গে সুষ্ঠু সরবরাহ ব্যবস্থা না থাকায় অনেক ফল মাঠ থেকে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ী হয়ে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছতে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বিনষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে দেশে তরমুজের আবাদ হচ্ছে ৪৫ হাজার ৭শ’ ৪২ হেক্টর জমিতে। এ থেকে উৎপাদিত হচ্ছে প্রায় ২২ লাখ টন। তরমুজের আবাদ বেশি হয় বরিশাল অঞ্চলে। এরপরই চট্টগ্রাম ও ঢাকা অঞ্চল। হালে উত্তরাঞ্চলের অনেক এলাকায় বিশেষ করে চরাঞ্চলে তরমুজের আবাদ বেড়েছে। বছর পাঁচেক আগেও দেশে এত জমিতে তরমুজ আবাদ হয়নি। বর্তমানে ফলের অধিক উৎপাদনের সঙ্গে তরমুজও যোগ হয়েছে। কৃষক তরমুজ আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন। প্রতিটি তরমুজ মান ভেদে খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে। বড় তরমুজের ওজন ৫ থেকে ৭ কেজি পর্যন্ত।
×