ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাদ্রিদে উত্তর কোরীয় দূতাবাসে লঙ্কাকা-

প্রকাশিত: ১২:৪৪, ৮ মে ২০১৯

মাদ্রিদে উত্তর কোরীয় দূতাবাসে লঙ্কাকা-

গত ফেব্রুয়ারি মাসের এক বিকেলের ঘটনা। মাদ্রিদে উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসে ঘটল এক লঙ্কাকা-। এক লোক দূতাবাসের কড়া নেড়ে চার্জ দ্য এফেয়ার্সের সঙ্গে কথা বলতে চাইল। লোকটিকে ভিতরে ঢুকতে দেয়ার পর সে দরজাটা হাট করে খুলে ধরল এবং বাইরে থাকা তার নয়জন সহযোগী কুড়মুড় করে ঢুকে পড়ল। ঘটনার তদন্তকারী এক স্পেনীয় বিচারক জানান, লোকগুলো ঢুকেই ভেতরে থাকা কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রহার করতে লেগে গেল। তারপর তাদের পিঠমোড়া করে বেঁধে জিজ্ঞাসাবাদ করতে লাগল। দূতাবাসের এক মহিলা কর্মচারী কোনভাবে জানালা গলিয়ে পালিয়ে মেতে সক্ষম হয়। তার আর্তচিৎকারে প্রতিবেশীরা কোন অঘটন আঁচ করে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ কয়েক ঘণ্টা পরে অকুস্থলে উপস্থিত হলে উত্তর কোরীয় কর্মকর্তার মতো দেখতে জনৈক ব্যক্তি দরজাটা খুলে পুলিশকে জানায় সবকিছু এখন ঠিক আছে। পুলিশ চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পর হামলাকারীরা দূতাবাসের দুটো গাড়ি এবং একটি উবারএ করে পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় তারা নিয়ে যায় কয়েকটি পেনড্রাইভ, কম্পিউটার ও হার্ডড্রাইভ। তারা প্রথমে পর্তুগালে পালায় এবং শেষ পর্যন্ত গিয়ে হাজির হয় আমেরিকায়। সেখানে তারা লুটের জিনিসগুলো এফবিআই-এর হাতে তুলে দেয় বলে অভিযোগ আছে। হামলার ঘটনাটি শুনে মনে হতে পারে এটা কোন স্পাইথ্রিলারে পৃষ্ঠা থেকে তুলে নেয়া। তবে উত্তর কোরিয়ার ৭০ বছরের অস্তিত্বের ইতিহাসে দেশটির কোন কূটনৈতিক মিশনে এই প্রথম সরাসরি হামলা। হামলার মূল উদ্দেশ্য বাহ্যত ছিল দূতাবাসের কূটনীতিকদের বুঝিয়ে সুজিয়ে স্বপক্ষ ত্যাগ করানো। কিন্তু সেই উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়। হামলাকারীরা দূতাবাসের কোন ক্ষতিসাধন করেছে কিনা তা পরিষ্কার নয়। তবে এই ঘটনার মধ্য দিয়ে উত্তর কোরিয়ার স্বৈরশাসক কিম জংউনের বিরোধীদের ক্রিয়াকলাপ পাদপ্রদীপের আলোয় চলে এসেছে। মাদ্রিদে এই চমকের ঘটনার দায়-দায়িত্ব যারা নিজেদের বলে দাবি করেছে তারা অপেক্ষাকৃত নতুন একটি সংগঠনের সদস্য। সংগঠনটির নাম চিত্তল্লিমা সিভিল ডিফেন্স। এরা অস্বাভাবিক উচ্চাভিলাষী সব পরিকল্পনার কথা প্রচার করে থাকে। গত ১ মার্চ সংগঠনটি তার ওয়েবসাইট ঘোষণা করে যে তারা একটি অস্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে যা কিনা উত্তর কোরিয়ার জনগণের একমাত্র বৈধ প্রতিনিধি। স্পেনের একটি আদালত দূতাবাসে হামলায় অংশ নেয়া দুই ব্যক্তির নামে বহিসমর্পণ ওয়ারেন্ট ইস্যু করার পর চিত্তল্লিমা সিভিল ডিফেন্স আরেক বিবৃতি প্রকাশ করে ঐ ঘটনায় সহিংসতা প্রয়োগের কথা অস্বীকার করে। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রও পরে এ হামলায় অংশ নেয়া দুই ব্যক্তির মধ্যে একজনকে গ্রেফতার এবং অপরজনের এপার্টমেন্টে হানা দেয়। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি একজন প্রাক্তন মেরিন। তাকে আগে থেকে হন্যে হয়ে খোঁজা হচ্ছিল। দু’জনেই আমেরিকায় বসবাসকারী কোরীয় বংশোদ্ভূত। চিত্তল্লিমা সিভিল ডিফেন্স উত্তর কোরিয়ার স্বৈরাচারী সরকারের পক্ষ নেয়ার জন্য স্পেন ও মার্কিন সরকারকে অভিযুক্ত করেছে। তা থেকে বুঝা যায় যে এর সদস্যরা আশা করেছিল তাদের নাম পরিচয় অজানা থেকে যাবে। কিন্তু পরিচয় প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর তারা গা-ঢাকা দিতে বাধ্য হয়। এটা ঠিক যে উত্তর কোরিয়ার অভ্যন্তরে কেউ প্রকাশ্যে ভিন্নমত ব্যক্ত করতে পারে না। সেখানে রাজনৈতিক প্রতিবাদে লিপ্ত থাকার সামান্যতম লক্ষণ প্রকাশ পেলে তার জন্য জুটে হয় নির্বাসন নয়তো ফায়ারিং স্কোয়াড। দেশের বাইরে থাকলেও এই বিরুদ্ধবাদীরা যে উত্তর কোরিয়ার ঘাতকদের হাত থেকে নিরাপদ তা নয়। কিন্তু তারপরও কোন কোন বিরুদ্ধবাদী তাদের ভূমিকায় অবিচল থাকে। তাদেরকে নিবৃত্ত রাখা যায় না। দক্ষিণ কোরিয়ায় পালিয়ে যাওয়া এই বিরুদ্ধবাদীরা যে উত্তর কোরিয়ার ঘাতকদের হাত থেকে নিরাপদ তা নয়। কিন্তু তারপরও কোন কোন বিরুদ্ধবাদী উত্তরের বিরুদ্ধে বছরের পর বছর ধরে এক ধরনের তথ্য যুদ্ধে লিপ্ত। তারা সরকারবিরোধী বক্তব্য লিখে বেলুনের সঙ্গে বেঁধে ছেড়ে দেয়। বার্তায় তারা দেশবাসীকে এই সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কিংবা দেশ থেকে পালিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে থাকে। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×