ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতে সংখ্যালঘুদের নিয়ে ভোট সন্ত্রাস

প্রকাশিত: ১২:৪৪, ৮ মে ২০১৯

ভারতে সংখ্যালঘুদের নিয়ে ভোট সন্ত্রাস

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নিজের কঠোর অবস্থান নিয়ে কথাবার্তা বলতে পছন্দ করেন। নির্বাচনী প্রচারেও ক্লান্তিহীনভাবে তাই করে চলেছেন। তিনি বলেছেন, সাম্প্রতিক ঘটনায় পাকিস্তান যে তাদের হাতে আটক ভারতীয় পাইলটকে ছেড়ে দিয়েছে তার কারণ প্রতিবেশী এই দেশটি তাকে ভয় পায়। শ্রীলঙ্কায় সম্প্রতি সন্ত্রাসী হামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার পাঁচ বছরের শাসনামলে ভারতে এমন ধরনের কোন হামলা হয়নি। কারণ সন্ত্রাসী জানে যে তার হাত থেকে শাস্তি এড়ানো সম্ভব নয়। মোদি অবশ্য সব ধরনের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যে সোচ্চার তা কিন্তু নয়। বর্তমান লোকসভা নির্বাচনে ভূপালের একটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য তিনি দলের প্রার্থী হিসেবে এমন এক মহিলাকে বেছে নিয়েছেন যিনি সন্ত্রাসী বলে অভিযোগ আছে। প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর নামে এই মহিলা বর্তমানে জামিনে মুক্ত। তার বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগ আছে যে ২০০৮ সালে বোমাবাজি চালিয়ে ৬ জন মুসলমানকে হত্যার ঘটনায় তিনি সহযোগিতা করেছিলেন। নিজেকে যোগিনী বলে দাবিদার এই মহিলা গৈরিক বসন ধারণ করেন। ধর্ষণ, হত্যাসহ গুরুতর অপরাধের অভিযোগ থাকা অবস্থায় নির্বাচনে দাঁড়ানো ভারতীয় রাজনীতিকদের জন্য অস্বাভাবিক বা ব্যতিক্রমী কোন ব্যাপার নয়। তবে সন্ত্রাসবাদে যুক্ত থাকার অভিযোগ থাকা অবস্থায় নির্বাচন করাটা নতুন ঘটনা। কংগ্রেস নেতারা ধর্মান্ধ হিন্দুদের এবং হিন্দুত্ববাদের প্রবক্তা উগ্রবাদীদের ‘জাফরানী সন্ত্রাসবাদী’ আখ্যায়িত করে থাকেন। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে মুসলমানরা বার বার উগ্রবাদী হিন্দু সংগঠনগুলোর হামলায় টার্গেট হয়ে এসেছে। ভারতের বিচার ব্যবস্থাই এমন অস্বচ্ছ যে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে মুসলমানরা যে হারে দোষী সাব্যস্ত হয় হিন্দুরা হয় তার তুলনায় অনেক কম। গোঁড়া হিন্দু জাতীয়তাবাদী এলাকাগুলোতে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর বক্তব্য দেয়া এক অর্থে সেখানকার তুলনামূলকভাবে দরিদ্র ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রতি কঠোর আচরণ সমর্থন করারই নামান্তর। সংখ্যাগুরু হিন্দুদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টায় বিজেপির অন্যান্য নেতা তো আরও সরাসরি মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্য দিয়ে থাকেন। পার্টির ক্ষমতাধর প্রধান স্ট্র্যাটেজিস্ট অমিত শাহ বলেছেন যে ভারত মুসলমান অনুুপ্রবেশকারীদের দ্বারা ছেয়ে যাওয়ার মারাত্মক হুমকির মধ্যে আছে। তিনি এই মুসলমানদের উইপোকা আখ্যায়িত করেন। এক নির্বাচনী প্রচারসভায় উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ঘোষণা দেন এই নির্বাচন আলী ও বজরং বালীর মধ্য লড়াই। একই ধরনের রাজনীতিকে আরও উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে মোদি সরকারের প্রতিমন্ত্রী অনন্তকুমার হেগড়ে রাহুল গান্ধীর সমালোচনা করে বলেন, ‘তিনি যে হিন্দু তার প্রমাণ কি? একজন মুসলমান পিতা ও খ্রীস্টান মাতার সন্তান কি করে গান্ধী হয়? ব্রাহ্মণ হয়?’ বলাবাহুল্য তার এমন বক্তব্য নিতান্তই উদ্ভট। কারণ রাহুলের মাতা ইতালীয় হলেও তার পিতা কিংবা নিকটাত্মীয়দের কেউই মুসলমান নয়। কেরালা হচ্ছে ভারতের এমন এক এলাকা যেখানে ধর্মমতের বৈচিত্র্যময়তা সর্বাধিক। অর্থাৎ সেখানে বিভিন্ন ধর্মমতের মানুষের বাস যত বেশি অন্য কোথাও অতটা নয়। তা সত্ত্বেও সেটা ভারতের অন্যতম শান্তিপূর্ণ রাজ্য। সেখানেও বিজেপির সাম্প্রদায়িক বাগাড়ম্বর প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। এই রাজ্যের পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত শান্ত নিস্তরঙ্গ জেলা ওয়েয়ানন্দকে রাহুলের দ্বিতীয় নির্বাচনী এলাকা হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে। এখানে বিপুল সংখ্যক মুসলমান ও খ্রীস্টানের বাস। মোদি এখানে এক নির্বাচনী প্রচার সভায় পরিহাস করে বলেছেন যে ‘রাহুল আর কোথাও আশ্রয় না পেয়ে এমন এক জায়গায় আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছেন যেখানে সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠী সংখ্যালঘু হয়ে আছে।’ কেরালার হিন্দুদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টায় বিজেপি সবরীমালা মন্দির নিয়ে বিতর্ককেও টেনে এনেছে। মন্দিরটি দারুণ জনপ্রিয় এক তীর্থস্থান যেখানে ঋতুমতী বয়সী সকল মহিলার প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। এ বছরের প্রথম দিকে সুপ্রীমকোর্ট সেই নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে দেয়। কিন্তু তাতেই বা কি আসে যায়। বিজেপি স্থানীয় হিন্দুদের সুপ্রীমকোর্টের এই নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করার আহ্বান জানিয়েছে। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×