ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সুবীর নন্দীর শেষকৃত্য সম্পন্ন

প্রকাশিত: ০৭:১১, ৮ মে ২০১৯

সুবীর নন্দীর শেষকৃত্য সম্পন্ন

অনলা্ইন রিপোর্টার ॥ বরেণ্য সংগীত শিল্পী সুবীর নন্দীর মরদেহের প্রতি সর্বস্তরের মানুষের পুষ্পার্ঘ্য নিবেদনের পর তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সুবীর নন্দীর পরিবারের সদস্য, কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ, এন্ড্রু কিশোরসহ প্রমুখ। বুধবার (৮ মে) বিকেলে রাজধানীর রাজারবাগের কালিবাড়ির সবুজবাগ বরদেশ্বরী কালিমাতা মন্দির প্রাঙ্গণের মহা শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। এর আগে বুধবার সকাল ৬টা ২০ মিনিটে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের একটি বিমানে করে প্রখ্যাত এ শিল্পী মরদেহ ঢাকায় আনা হয়। এরপর সেটি নেয়া হয় গায়কের দীর্ঘ দিনের আবাসস্থল গ্রিন রোডের গ্রিন ভিউ অ্যাপার্টমেন্টে। সেখান থেকে ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে মরদেহ নেয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। এরপর দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে সুবীর নন্দীর মরদেহ শেষবারের মতো নেয়া হয় এফডিসিতে। সেখানে শিল্পীকে শেষ শ্রদ্ধা জানান পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম খোকন, বাংলাদেশ শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, অভিনেতা আলমগীর, ওমর সানি, জয় চৌধুরী, অরুণা বিশ্বাস, ড্যানি সিডাক সহ অনেকে। গত ৩০ এপ্রিল থেকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন সুবীর নন্দী। মারা যান মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে। বহুদিন ধরে তিনি দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগে ভুগছিলেন। এ জন্য নিয়মিত ডায়ালাইসিস নিচ্ছিলেন। গত ২২ দিনে তিনি তিনবার হার্ট অ্যাটাক করেন। সুবীর নন্দীর প্রথম হার্ট অ্যাটাক হয় গত ১৪ এপ্রিল ঢাকার সিএমএইচে ভর্তির দিনে। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য শিল্পীকে সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে গত শনি ও রবিবার দুইদিন তার হার্ট অ্যাটাক হয়। এর পরের দিন পেরিয়ে মঙ্গলবার ভোরে তিনি মারা যান। গত ১৪ এপ্রিল সিলেটে এক আত্মীয় বাড়িতে অনুষ্ঠান শেষ করে ট্রেনযোগে ঢাকায় ফেরার পথে অসুস্থ হয়ে পড়েন পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এ শিল্পী। ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশনে নামিয়ে তাকে সিএমএইচে নেয়া হয়। সেখানে ভর্তির কিছুক্ষণ পরে তার হার্ট অ্যাটাক হয়। এরপর দ্রুত তাকে লাইফ সাপোর্টে নেন চিকিৎসকরা। মঙ্গলবার (৭ মে) সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ‘একুশে পদক’ জয়ী এই শিল্পী। বুধবার (৮ মে) সকালে তার মরদেহ ঢাকায় এসে পৌঁছায়। পরে সকাল ১১টায় তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। যেখানে বরেণ্য এই শিল্পীর প্রতি শেষ বারের মতো শ্রদ্ধা জানিয়ে ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে সর্বস্তরের মানুষ। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সুবীর নন্দীর মরদেহ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নেওয়া হয় এফডিসিতে। প্রসঙ্গত, ১৯৫৩ সালের ১৯ নবেম্বর হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার নন্দীপাড়ায় সুবীর নন্দীর জন্ম। তিনি সিলেট বেতারে প্রথম গান করেন ১৯৬৭ সালে। এরপর ঢাকা রেডিওতে সুযোগ পান ১৯৭০ সালে। রেডিওতে তার প্রথম গান ‘যদি কেউ ধূপ জ্বেলে দেয়’। বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন সুবীর নন্দী। ১৯৮১ সালে তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘সুবীর নন্দীর গান’ প্রকাশিত হয়। চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম গান করেন ১৯৭৬ সালে ‘সূর্যগ্রহণ’ চলচ্চিত্রে। ১৯৭৮ সালে মুক্তি পায় আজিজুর রহমানের ছবি ‘অশিক্ষিত’। এ সিনেমায় সাবিনা ইয়াসমিন আর সুবীর নন্দীর কণ্ঠে ‘মাস্টার সাব আমি নাম দস্তখত শিখতে চাই’ গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। নন্দিত কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী ৪০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে গেয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি গান। বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রেও উপহার দিয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান। ১৯৮১ সালে তার প্রথম একক অ্যালবাম 'সুবীর নন্দীর গান' ডিসকো রেকর্ডিংয়ের ব্যানারে বাজারে আসে। তবে চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম গান করেন ১৯৭৬ সালে আব্দুস সামাদ পরিচালিত 'সূর্যগ্রহণ' চলচ্চিত্রে। চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করে চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন তিনি। আর চলতি বছরে সংগীতে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার সুবীর নন্দীকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করেছে।
×