ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনা নগরবাসীর বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু

শহীদ হাদিস পার্ক

প্রকাশিত: ১০:২৮, ১১ মে ২০১৯

শহীদ হাদিস পার্ক

খুলনার ঐতিহাসিক শহীদ হাদিস পার্ক। বহু আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার এই পার্কটি নতুন আঙ্গিকে সংস্কার হওয়ায় এটি এখন আরও জনবান্ধব হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন এই পার্কে প্রাতঃভ্রমণ ও সান্ধ্যকালীন ভ্রমণ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্র্মকান্ড চলে। বিনোদন পিপাসুদের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এই পার্কটি। এ পার্কেই রয়েছে খুলনার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। আগের মেয়াদে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র থাকাকালে বর্তমান মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক দৃশ্যমান অনেক প্রকল্পের পাশাপাশি এই পার্কটিকে দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলেন। বিনোদন বঞ্চিত খুলনার মানুষের কাছে শহীদ হাদিস পার্কটি এখন অনেক আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে খুলনার সকল আন্দোলন-সংগ্রাম আবর্তিত হয়েছে শহীদ হাদিস পার্ককে ঘিরে। এখনও এই পার্ক ও শহীদ মিনারকে ঘিরে নানা কর্মসূচী পালন করা হয়। একাধিক সূত্র মতে, ১৯৬৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি খুলনায় গণআন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হাদিসের স্মরণে এ পার্কটির নাম রাখা হয় ‘শহীদ হাদিস পার্ক’। ওই দিন বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার দাবিতে বিরাট একটি বিক্ষোভ মিছিল হাজী মহসিন রোডের পৌর চেয়ারম্যান ভবনের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ মিছিলে গুলিবর্ষণ করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে দোকান কর্মচারী হাদিস, সুতা কলের শ্রমিক আলতাফ ও খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী স্কুলছাত্র প্রদীপ নিহত হন। হাদিসের জানাজা খুলনার এই কেন্দ্রীয় পার্কে অনুষ্ঠিত হয় এবং সেদিন পার্কটির নামকরণ করা শহীদ হাদিস পার্ক। যা আজও প্রচলিত। এর আগে খুলনার ঐতিহাসিক এ পার্কটির নাম ছিল পর্যায়ক্রমে ‘মিউনিসিপ্যাল পার্ক’, ‘গান্ধী পার্ক’, ‘শহীদ পার্ক’, ‘জিন্নাহ পার্ক’ ও ‘মিউনিসিপ্যাল পার্ক’। রাজনৈতিক কারণে বার বার নাম পরিবর্তন করা হয় বলে সূত্র জানায়। শহীদ হাদিস পার্কটি নতুন রূপে গড়ে তোলার পর এটি এখন খুলনার মানুষের কাছে বিনোদনের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়েছে। অনেকেই সকালে ও বিকেলে পার্কের অভ্যন্তরের বিরাট পুকুরের চারপাশের ওয়াকওয়েতে হেঁটে শরীরচর্চা করছেন। আবার অনেকে বিকেলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখানে ঘুরতে আসেন। নারী-শিশু, ছাত্র-ছাত্রীসহ সকল স্তরের মানুষের কাছে এটি এখন একটি দৃষ্টিনন্দন পার্ক। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) পূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আগের মেয়াদে মেয়র থাকাকালে বর্তমান মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক শহীদ হাদিস পার্কটিকে দৃষ্টিনন্দন করতে উদ্যোগ নেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি জ্ঞাপনের পর ২০১১ সাল থেকে শুরু হয়ে ২০১৪ সালে শেষ হয় খুলনার ঐতিহাসিক শহীদ হাদিস পার্কের শহীদ মিনার, হাদিস পার্ক ও তৎসংলগ্ন পুকুরের উন্নয়ন প্রকল্পটি। পার্কটি আধুনিকায়নের ফলে খুলনার মানুষ এখন অন্তত একটি বসার বা ঘুরে বেড়াবার দৃষ্টিনন্দন জায়গা পেয়েছে। জিওবির ফান্ড থেকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে এ প্রকল্পের আওতায় পুকুরের পশ্চিম পাড়ে শহীদ মিনারসহ প্লাজা নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় পার্কের চারদিকে আরসিসি বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণ, পুকুরের চারপাশে রিটাইনিং আরসিসি ওয়াল ও রেলিং এবং ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়। পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, ভূমি উন্নয়ন, নগর ভবনের সামনের দিকে পুকুরের মধ্যে ঝর্ণা নির্মাণ করা হয়। এছাড়া চমৎকার বৈদ্যুতিক কাজ এবং প্লানটেশন ও বিউটিফিকেশন সম্পন্ন করা হয়। যে কারণে খুলনার শহীদ হাদিস পার্কটি নগরবাসীর জন্য এক অপরূপ সৌন্দর্যে রূপ নিয়েছে। আর এই প্রকল্প বাস্তবায়নে জন্য ব্যয় হয়েছে আট কোটি ৪০ লাখ টাকা। সন্ধ্যায় পার্কের অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক আলো জ্বলে ওঠার পর অপরূপ দেখায়। এ সময় পার্কে মানুষের উপস্থিতিও অনেক বেশি থাকে। শহীদ হাদিস পার্কের উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে তিনটি গেট রয়েছে। পশ্চিমের গেটের সামনের দিকে দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার। একুশের শহীদদের স্মরণে এখানে খুলনার রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানসহ সর্বস্তরের মানুষ এই শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে থাকেন। শুধু একুশে ফেব্রুয়ারি নয়, বিভিন্ন ইস্যুতেও শহীদদের উদ্দেশে এখানে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সরকারী- বেসরকারী পর্যায়ে এই পার্কে নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। পার্কের অভ্যন্তরের বিরাট পুকুরে নানা রকমের মাছ রয়েছে। পুকুরের পাড়ে রেলিংয়ে দাঁড়িয়ে অনেক ছেলেমেয়েসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ কথা বলেন, ঝর্ণা ধারাসহ মাছের উথাল পাথাল দৃশ্য দেখেন। পার্কের উত্তর দিকে একটি কৃত্রিম টিলা রয়েছে। টিলায় উঠে অনেকেই নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখেন। পার্কের মধ্যে বসার জন্য কনক্রিটের বেঞ্চ রয়েছে। পার্কের বিভিন্ন স্থানে ডাষ্টবিন দেয়া হয়েছে। সকল প্রকার ময়লা-আবর্জনা সেখানে ফেলতে এবং পুকুরে কোন প্রকার বর্জ্য যাতে না ফেলা হয় সেদিকেও নাগরিকদের খেয়াল রাখার জন্য বলা হচ্ছে। খুলনা সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত এ পার্কটি ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করা হলেও এটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অন্তরায় দেখা যাচ্ছে। পার্কে ধূমপায়ীদের সিগারেট ঠোঁটে নিয়ে বিচরণ করতে দেখা যায়। পার্কে নারী ও শিশুদের পদচারণা থাকায় ধূমপানকে অনেকেই নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তাছাড়া কেউ কেউ জুতা পায়ে শহীদ মিনারের পাদদেশে ওঠে পড়ে। বুধবার সন্ধ্যায় পার্কে কথা হয়, স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে নিয়ে ঘুরতে আসা ব্যাংকার্স ওলিয়ার রহমানের সঙ্গে। পার্কটি দৃষ্টিনন্দন এবং ঘোরাফেরা ও বিনোদনের জন্য খুব ভাল হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শহীদ মিনারের পবিত্রতা ও পার্কের পরিচ্ছন্নতা রক্ষা এবং পার্কটিকে ধূমপান মুক্ত রাখতে কর্তৃপক্ষের তদারকি বাড়ানো দরকার। একই সঙ্গে এ ব্যাপারে সকলের সচেতন হওয়াও প্রয়োজন। -অমল সাহা, খুলনা অফিস থেকে
×