ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কবি হায়াৎ সাইফ আর নেই

প্রকাশিত: ০৩:২৩, ১৩ মে ২০১৯

কবি হায়াৎ সাইফ আর নেই

অনলাইন ডেস্ক ॥ একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি হায়াৎ সাইফ আর নেই। রবিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী ও আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন। প্রকৃত নাম সাইফুল ইসলাম খান হলেও হায়াৎ সাইফ নামেই সমধিক পরিচিত। তিনি বাংলাদেশ স্কাউটসের সাবেক জাতীয় কমিশনার জনসংযোগ ও প্রকাশনা এবং আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কাউটসের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ স্কাউটসের পরিচালক (প্রশাসন) কাজী আসিফুল হক কবি হায়াৎ সাইফের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, কিডনি জটিলতাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন হায়াৎ সাইফ। আগামীকাল মঙ্গলবার রাজধানীর কাকরাইলের স্কাউট ভবনে সকাল ১০টায় কবির প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।এছাড়া বাংলা একাডেমি ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারেও তার মরদেহ নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। সাইফ ১৯৪২ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মোসলেম উদ্দিন খান ও মাতার নাম বেগম সুফিয়া খান। পিতার কর্মস্থল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার সুবাদে তিনি তার শৈশব কাটান রাজশাহীতে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। কর্মজীবন: ১৯৬৫ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্নের পর রাজশাহী কলেজে ৩ বছর শিক্ষকতা করেন। ১৯৬৮ সালে ব্যবসা ক্যাডার হিসেবে তৎকালীন পাকিস্তান ‘সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিসে’ (বর্তমান বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) যোগদান করেন। তিনি তিন দশকের বেশি সময় রাজস্ব প্রশাসন ও কর নীতি প্রণয়নের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৯৯ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৬০-এর দশকে ছাত্রাবস্থাতেই তিনি ঢাকায় তৎকালীন রেডিও পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ বেতার) কেন্দ্রে ও পরবর্তীতে পাকিস্তান টেলিভিশনের লাহোর কেন্দ্রে নৈমিত্তিক ঘোষক ও সংবাদপাঠক হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে চাকরি থেকে অবসরের পর মাঝে মাঝে সাহিত্য বিষয়য়ক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভায় উপস্থাপনা করতেন। ১৯৯৩ সালে ফিসকাল ফ্রন্টিয়ারস নামে একটি জার্নাল প্রকাশ করা শুরু করেন এবং ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি এটি সম্পাদনা করেন। সময়িকীটি রাজস্ব নীতি ও প্রশাসন, রাজস্ব নীতি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ে লেখা প্রকাশ করত। ২০০৫ সালে তিনি আইস টুডে সাময়িকীতে ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন এবং বেশ কয়েক বছর তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। সাহিত্য জীবন: সাইফ ১৯৬০-এর দশক থেকে লেখালেখির মাধ্যমে সাহিত্যজীবনে প্রবেশ করেন। ১৯৬২ সালে তার প্রথম কবিতা তৎকালীন সমকালে প্রকাশিত হওয়ার পর ১৯৮৩ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ সন্ত্রাসে সহবাস প্রকাশিত হয়। তার ১৫টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, যার মধ্যে বাংলা কবিতার ৮টি সংকলন ও ২টি প্রবন্ধ সংকলন রয়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন সময়িকীতে তার অসংখ্য লেখাসহ তার কাব্যগ্রন্থ বাংলা ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ও স্প্যানিশ ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৯২ সালে তার লেখা সাহিত্য বিষয়ক সংকলন গ্রন্থ উক্তি ও উপলব্ধি প্রকাশিত হয়। ২০০৪ সালে মাহবুব তালুকদারের সাথে যৌথভাবে বাংলাদেশের সমসাময়িক গদ্য নিয়ে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ২০০৯ সালে প্রকাশিত হয় কবিতা সংকলন প্রধানত স্মৃতি এবং মানুষের পথচলা যাতে ৭৫টি কবিতা রয়েছে। ১৯৯৮ সালে দিব্য প্রকাশ থেকে ফয়জুল লতিফ চৌধুরীর সম্পাদনায় ভয়েস অব হায়াৎ সাইফ নামে একটি ইংরেজি অনুবাদকৃত কাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। গ্রন্থটিতে ৪৫টি কবিতা রয়েছে। ২০০১ সালে পাঠক সমাবেশ থেকে হায়াৎ সাইফ: সিলেক্টেড পয়েম্স নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। কবিতায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে কবি হায়াৎ সাইফ ২০১৮ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।
×