ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কেটির লেন্সেই ব্ল্যাক হোলের রহস্যভেদ!

প্রকাশিত: ১১:৫২, ১৪ মে ২০১৯

  কেটির লেন্সেই ব্ল্যাক হোলের রহস্যভেদ!

সামনে খোলা ল্যাপটপ আর তাতে আপলোড করা হচ্ছে ব্ল্যাকহোলের ছবি। আর ল্যাপটপের সামনে বসা তরুণীর চোখেমুখে বিস্ময় আর সাফল্যের উচ্ছ্বাস। ২৯ বছর বয়সী কম্পিউটার বিজ্ঞানী কেটি বাউম্যানের এমন একটি ছবিই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। আর তা হবেই না বা কেন, কারণ ব্ল্যাক হোল এর প্রথম ছবি লেন্সবন্দী করার পেছনে যে রয়েছেন এই কেটিই। নিজের ফেসবুকে ছবিটি পোস্ট করে তলায় লিখেছেন, ‘বিশ্বাস হচ্ছে না, ব্ল্যাক হোলের যে ছবি প্রকাশ করা হচ্ছে, সেটা আমার সৃষ্টি।’ সোশ্যাল মিডিয়ায় কেটির ছবি পোস্ট হতেই সাড়া পড়ে গিয়েছে। টুইটারে নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাট নেত্রী আলেকজান্দ্রিয়া ওয়াসিয়ো-কর্তেজ লিখেছেন ‘ইতিহাসে নিজের জায়গা করে নিলেন মিস বাউম্যান। আরও লিখেছেন ‘বিজ্ঞান ও মানবসভ্যতায় আপনার অবদানের জন্য ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা। #উইমেনইনস্টেম!’ ইংরেজীতে সায়েন্স, টেকনোলজি ও ম্যাথমেটিক্সের আদ্যাক্ষর নিয়ে - ‘স্টেম’। এদিকে কেটিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে এমআইটি এবং স্মিডসনিয়ানও। সোশ্যাল মিডিয়ায় তারা লিখেছে, ‘তিন বছর আগে এমআইটি স্নাতকের ছাত্রী কেটি নতুন আলগরিদমে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ব্ল্যাক হোলের প্রথম ছবি তৈরিতে সাফল্য এনে দিয়েছে যা।’ কেটি অবশ্য সমস্ত কৃতিত্ব নিজে নিতে রাজি নন। সংবাদ সংস্থাকে তিনি বলেন, ‘কারও একার পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব নয়। বিভিন্ন শিক্ষাক্ষেত্রের একাধিক মানুষের চেষ্টায় এই সাফল্য এসেছে।’ পেশাজীবনে বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির কম্পিউটিং এ্যান্ড ম্যাথমেটিক্যাল সায়েন্সের এসিস্টেন্ট প্রফেসর হিসেবে কর্মরত কেটি। তিন বছর আগে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে স্নাতকের পড়াশোনা করার সময়েই এ নতুন এলগরিদম নিয়ে শুরু করেন কেটি। পরে এমআইটির কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ল্যাবরেটরি, হার্ভার্ড-স্মিডসনিয়ান ‘সেন্টার ফর এস্ট্রফিজিক্স’ এবং ‘এমআইটি হেস্তেক অবসারভেটোরি’-র কিছু বিজ্ঞানী মিলে একটি দল গঠন করেন তিনি। পরবর্তীতে ব্ল্যাক হোলের সেই ছবি শিকারি দলটির নেতৃত্ব দিয়েছেন কেটি। প্রোজেক্টটির জন্য এ্যান্টার্টিকা থেকে চিলিতে, পৃথিবীর আটটি প্রান্তে মোট আটটি রেডিও টেলিস্কোপে বসানো হয়েছিল। আর এই টেলিস্কোপের তথ্যগুলোকে কয়েক শ’ হার্ড ড্রাইভে জমানো হয়। সেগুলো পাঠানো হয় আমেরিকা বোস্টন এবং জার্মানির বনে। এর পরে ওই তথ্যগুলো আলগরিদমের সাহায্যে গাণিতিক উপায়ে বিশেষ বিশ্লেষণে ব্ল্যাক হোলের ছবিটি পাওয়া যায়। ব্ল্যাক হোলের এই ছবিটি এম ৮৭ গ্যালাক্সির যা কিনা পৃথিবী থেকে ৫৪ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত বলে জানিয়েছেন কেটি ও তার দল। কেটি ও তার দলবলই আলগরিদমের এই সিরিজটি তৈরি করেছেন, যা দিয়ে টেলিস্কোপের তথ্যগুলো থেকে ঐতিহাসিক ছবিটির জন্ম দিয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, ছয় বছর আগেও কেটি ব্ল্যাক হোলের ব্যাপারে তেমন কিছুই জানতেন না। আর আজ তার ও তার ব্ল্যাক হোল নিয়েই বিজ্ঞান সমাজে তোলপাড়। তরুণ প্রজন্মের প্রতি তার বক্তব্য হলো- ‘যে কাজটি তোমাকে উত্তেজিত করে, উৎসাহিত করে সেই কাজ কখনও করতে পারবে না বলে ভেব না।’
×