ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

লিবিয়ায় ট্রলার ডুবির ঘটনায় নিহত পরিবারে আহাজারী, নিখোঁজ ৩

প্রকাশিত: ০৯:৫৮, ১৪ মে ২০১৯

লিবিয়ায় ট্রলার ডুবির ঘটনায়  নিহত পরিবারে আহাজারী, নিখোঁজ ৩

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর ॥ দালালদের খপ্পরে জিম্মি হয়ে সাগর পথে লিবিয়া থেকে ইটালি যাবার পথে ট্রলার ডুবিতে মাদারীপুরের নিহত জাকির হোসেন (২৮) ও সজিব হোসেনের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। নিহত জাকির হোসেন শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের ৮নং চর গ্রামের সেকান্দার হাওলাদারের ছেলে এবং সজিব হোসেন সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের উত্তর শিরখাড়া এলাকায় আজিজ শিকদারের ছেলে। নিখোঁজ রয়েছে সদর উপজেলার মনির হোসেন মাতুব্বর (২২) নাদিম মাতুব্বর (১৭) ও সাইফুল ইসলাম (২৪) নামের ৩ যুবক। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে পরিবারের মুখে হাসি ফুটাতে অর্থ উপার্জনের জন্য নূর-নবী খলিফা ও নূর ইসলাম খলিফা নামের দুই দালালের হাত ধরে বিদেশে পারি জমায় জাকির। নিহত জাকিরকে স্থলপথে তুরস্ক নেওয়ার কথা থাকলেও দালাল চক্র লিবিয়া নিয়ে আটকিয়ে রাখে। লিবিয়ায় জাকির হোসেনকে আটক রেখে পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন সময় টাকা দাবী করে। টাকা দিতে অস্বীকার করলেই ছেলেকে বিক্রি করে দিবে অথবা না হয় অনাহারে রাখবে বলে হুমকি দিতে থাকে। এ পর্যন্ত পরিবার প্রায় ৮ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দালালচক্রের কাছে দেন। বৃহস্পতিবার ভূমধ্যসাগরে লিবিয়ার উপকুল থেকে ৭৫ জন অভিবাসী নিয়ে ইটালির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া ট্রলার ডুবিতে নিহত হন জাকির হোসেন। জাকির হোসেনকে হারিয়ে এখন দিশেহারা স্ত্রী সন্তানসহ পরিবারের লোকজন। স্বামীকে হারিয়ে কান্না যেন থামছেই না স্ত্রী শান্তা আক্তারের। অবুঝ দুটি কন্যা সন্তানকে শান্তনা দেওয়ার ভাষা নেই পরিবারের লোকজনের। এদিকে সন্তান ট্রলার ডুবিতে নিহত হওয়াকে যেন বিশ^াসই করতে পারছেনা নিহত জাকিরের বাবা-মামা। এদিকে সজিবের বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির চারপাশে মানুষের ভিড়। সজিবের মা ও বোন যেন একটু পর পরেই সজিবের ছবি বুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করেই যাচ্ছে। সজিবের মা মোবাইল হাতে নিয়ে বারবার বলছিল যে তার সাথে ছেলে সজিবের শেষ কি কথা হয়েছিল। তাঁর ছেলে আর বেঁচে নেই এটি কিছুতেই যেন মানতে পারছে না এই মা। শোকময় পরিবারটি এমন দৃশ্য দেখে স্থানীয়দের মধ্যেও বইছে শোকের মাতম। সজিবের স্বজনরা জানান, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা না দিয়েই গত ঈদের পরের দিন এক দালালের হাত ধরে লিবিয়া যায় সজিব। এরপর লিবিয়াতে ছয় মাস কাজ করার পরে নোয়াখালীর রুমান নামে এক দালালের খপ্পরে পরে সজিব। সেই দালাল আড়াই লাখ টাকার বিনিময়ে সজিবকে ইতালি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। সজিব রাজি হয় তার সাথে যেতে। এরপর দালাল টাকা আটকে রেখে সজিবকে লিবিয়ার জিম্মি দশায় বন্দি করে রাখে। এরপর দীর্ঘ চার মাস পরে গত বৃহস্পতিবার সজিবকে অবৈধ পথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে লিবিয়া পৌছানোর কথা বলে সজিবকে নৌকা তোলা হয়। সজিবের বোন মিম আক্তার বলেন, ‘আমারে আফা কইয়া আর কে বোলাবো। আমার ভাইরে এক বছর রাইখা কেন বৃহস্পতিবার পাঠাইলি। আমি এহন কেমনে ভাইরে ভুইলা থাকমুরে। কোথায় গেলি সজিবরে। আমি আমার ভাইয়ের না দেখা পর্যন্ত রোজা ভাঙ্গমু না।’ সজিবের সাথে একই নৌকায় ছিল একই ইউনিয়নের আরো দুজন। তাঁরা হলেন বলল্লভদী গ্রামের আদেল উদ্দিন মাতুব্বরের ছেলে মনির হোসেন মাতুব্বর (২২) ও শ্রীনদী এলাকার জোবায়ের মাতুব্বরের ছেলে নাদিম মাতুব্বর (১৭)। ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে তারা নিখোঁজ রয়েছেন। এখন পর্যন্ত তাদের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। এছাড়াও একই ঘটনায় সদর উপজেলার খোয়াজপুর মঠেরবাজার এলাকার মজিবুর রহমানের ছেলে সাইফুর ইসলাম (২৪) নিখোঁজ রয়েছেন। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি মাদারীপুর শাখার যুব প্রধান শিশির হোসেন বলেন, ‘আমরা তিউনিসিয়ার উপকূলের কাছে নৌকা ডুবির ঘটনায় এই পর্যন্ত ৫ জনের নাম পেয়েছি। এরমধ্যে তিনজন নিখোঁজ আর জাকির ও সজিব নামে দু‘জন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত হতে পেরেছি।’
×