ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের চমক

প্রকাশিত: ১২:০৪, ১৫ মে ২০১৯

মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের চমক

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে (আইপিএল) আরও একটি শিরোপা জিতল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। ফাইনালের নাটকীয় ম্যাচে লাসিথ মালিঙ্গার শেষ ওভারে ১ রানের অবিশ্বাস্য জয় পায় রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন দলটি। এ নিয়ে চারটি শিরোপা ঘরে তুলল মুম্বাই। শেষ ওভারে জয়ের জন্য চেন্নাইয়ের প্রয়োজন ছিল মাত্র ৯ রান। একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলকে জয়ের পথেই রেখেছিলেন শেন ওয়াটসন। কিন্তু লাসিথ মালিঙ্গার করা ওভারের চতুর্থ বলে দুর্ভাগ্যজনক রান আউট হন ওয়াটসন। তার বিদায়ের পর চাপে পড়ে যায় চেন্নাই। শেষ দুই বলে প্রয়োজন ছিল মাত্র ৪ রান। নতুন ব্যাটসম্যান শার্দুল ঠাকুর ওভারের পঞ্চম বলে নেন ২ রান। শেষ বলে প্রয়োজন ছিল ২ রান। মালিঙ্গা ব্যাটসম্যানের ঠিক পায়ের গোড়ায় বল ফেলে শার্দুল ঠাকুরকে এলবিডব্লিউর আবেদন করলে আম্পায়ার আঙ্গুল তুলে দেন। সঙ্গে সঙ্গে জয়ের উল্লাসে মেতে ওঠে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের ক্রিকেটার-ফ্রাঞ্চাইজি এবং সমর্থকরা। মুম্বাই এর আগে ২০১৩, ২০১৫, ২০১৭ সালে শিরোপা জিতেছিল, চেন্নাই ২০১০, ২০১১, ২০১৮-এ। অর্থাৎ এবার রেকর্ড সর্বোচ্চ চতুর্থবারের উড়ল মুম্বাইর পতাকা। আগের এগারো আসরের অন্য চ্যাম্পিয়ন দলগুলো হচ্ছেÑ রাজস্থান (২০০৮), ডেকান চার্জার্স (২০০৯), , কলকাতা (২০১২, ২০১৪), ও হায়দরাবাদ (২০১৬)। দশম ওভারের মধ্যে ১ উইকেটে ৭০ রান তুলে ফেরার পর মনে হচ্ছিল চেন্না¦ইর জয়টা সময়ের ব্যাপার। কিন্তু গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট। ১৩ বলে ২৬ রান করে ফ্যাফ ডুপ্লেসিস আউট হওয়ার পর ওয়াটসন একপ্রান্ত আগলে রাখলেও অন্য প্রান্ত নিয়মিত উইকেট হারিয়ে ক্রমশ চাপে পড়ে ধোনির দল। ছয় ব্যাটসম্যানের পাঁচজনই দুই অঙ্ক ছুঁতে ব্যর্থ হন। ১৫ বলে ১ ছক্কায় ১৫ রান করে ফেরেন ডোয়াইন ব্রাভো। ক্যাপ্টেন ধোনি আউট হন মাত্র ২ রান করে। আগের ওভারেই যে মালিঙ্গা ২০ রান দিয়েছিলেন শেষ ওভারে সেই তার হাতে বল তুলে দিয়েই বাজিটা জিতলেন রোহিত শর্মা! একেই বলে পুরনো চাল ভাতে বাড়ে। ৫৯ বলে ৮ চার ও ৪ ছক্কায় ৮০ রানের ম্যারাথন ইনিংস খেলেও রানআউটের খাড়া পড়ে চেন্নাইর হার দেখতে হয় ওয়াটসনকে। জাসপ্রিত বুমরাহ ২, হারদিক পান্ডিয়া, দীপক চাহার ও লাসিথ মালিঙ্গা প্রত্যেকে নেন একটি করে উইকেট। এর আগে টস জিতে ব্যাটিং নেয়া মুম্বাইর হয়ে দুই ওপেনার রোহিত শর্মা এবং কুইন্টন ডি কক মিলে মাত্র ২৮ বলেই যোগ করে ফেলেছিলেন ৪৫ রান। এ সময়ে ১টি চারের বিপরীতে ৫টি ছক্কা হাঁকান এ দু’জন। কিন্তু অতিরিক্ত উত্তেজনা সামাল দিতে পারেননি ডি কক। তাই তো পঞ্চম ওভারের চতুর্থ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে, পরের বলেও চেষ্টা করেন বড় শটের। কিন্তু ব্যাটের ওপরের কানায় লেগে তা চলে যায় উইকেটরক্ষক মহেন্দ্র সিং ধোনির গ্লাভসে। থেমে যায় ডি ককের ১৭ বলে ৪ ছক্কায় খেলেন ২৯ রানের ইনিংস। ঠিক পরের ওভারেই অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে সাজঘরে পাঠিয়ে দেন দীপক চাহার। আউট হওয়ার আগে রোহিত করেন ১৪ বলে ১৫ রান। হুট করেই থেমে যায় মুম্বাইর রানের গতি। দশম ওভারে আসা ১২ রানের কল্যাণে ২ উইকেটে ৭০ রান নিয়ে ইনিংসের মাঝপথ অতিক্রম করে তারা। রোহিত-ডি কক ফেরার পর ইশান কিশান এবং সূর্যকুমার যাদব মিলে চেষ্টা করেন পরিস্থিতি সামাল দেয়ার। কিন্তু ১২তম ওভারে ইমরান তাহির ভেঙ্গে দেন জুটি। সূর্যকুমার ফেরেন ১৭ বলে ১৫ রান করে। পরের ওভারে ফিরে যান ৭ বলে ৭ রান করা ক্রুনাল পান্ডিয়াও। তরুণ ইশান কিশানকে সঙ্গ দিতে উইকেটে আসেন কাইরন পোলার্ড। কিন্তু পোলার্ড আসার পর ইশান বেশিক্ষণ উইকেটে টিকতে পারেননি, ১৫তম ওভারে আউট হন ২৬ বলে ২৩ রান করে। সেখান থেকে ষষ্ঠ উইকেটে ২২ বলে ৩৯ রানের জুটি গড়েন হারদিক পান্ডিয়া এবং কাইরন পোলার্ড। ১৮ ওভার শেষে তাদের সংগ্রহ ছিল ৫ উইকেটে ১৩৬। সেখান থেকে অন্তত ১৬০ রানের সংগ্রহের আশা করতেই পারত মুম্বাই। কিন্তু ১৯তম ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে পরের বলেই আউট হয়ে যান ১০ বলে ১৬ রান করা পান্ডিয়া। যিনি টুর্নামেন্টজুড়ে ছিলেন দারুণ ধারাবাহিক। ওই ওভারের পরের চার বলে কোন রান দেননি দীপক চাহার, সঙ্গে নিয়ে নেন তারই সহোদর রাহুল চাহারের উইকেট। শেষ ওভার করতে আসেন ডোয়াইন ব্রাভো। প্রথম বলে নিশ্চিত সিঙ্গেল নেননি পোলার্ড। পরে ডট দেন দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বলে। শেষ পর্যন্ত শেষের তিন বলে ৯ রান নিয়ে দলীয় সংগ্রহটাকে ৮ উইকেটে ১৪৯ রানে নিয়ে ঠেকান পোলার্ড। ২৫ বলে সমান ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৪১ রানে অপরাজিত থাকেন এই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান তারকা। চেন্নাইর হয়ে বল হাতে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন দীপক চাহার। দুটি করে শিকার শার্দুল ঠাকুর ও ইমরান তাহিরের। অল্প পুঁজি নিয়েও ইতিহাসগড়া সাফল্যের রূপকার মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স বোলাররা। অধিনায়ক রোহিত শর্মা তাই বোলারদেরই বেশি কৃতিত্ব দিয়েছেন। এ নিয়ে রেকর্ড সর্বাধিক চতুর্থ শিরোপা জিতল মুম্বাই। লিগ পর্বে দুইবার, প্রথম কোয়ালিফায়ার ও ফাইনাল মিলিয়ে এবারের আসরে চেন্নাইকে মোট চারবার হারিয়েছে মুম্বাই! অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেন, ‘এবারের আইপিএলে আমরা ভাল ক্রিকেট খেলেছি, যার বড় প্রমাণ এই শিরোপা। শুরুতে আমরা টুর্নামেন্টটিকে দুটি ভাগে ভাগ করার পরিকল্পনা করেছিলাম। প্রতিটা ম্যাচে প্রতিটা জিনিস আমরা একটা দল হিসেবে করার চেষ্টা করেছি। আমাদের স্কোয়াডে যে ২৫ ক্রিকেটার ছিল তারা সবাই কোন না কোন স্টেজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এমনকি কোচ রিকি পন্টিং আর পরামর্শক শচীন টেন্ডুলকরের কথাও আলাদা করে বলতে হবে। এই সাফল্যে সবারই অবাদন রয়েছে। টুর্নামেন্টজুড়ে সঙ্গে থাকা সমর্থকদেরও অনেক ধন্যবাদ।’ এর পরই রুদ্ধশ্বাস ফাইনালের বোলিং নিয়ে কথা বলেন মুম্বাই অধিনায়ক, ‘সত্যি বলতে ১৪৯ রানের পুঁজি নিয়ে এদিন আমাদের বোলিং ছিল প্রত্যাশার চেয়ে ভাল। প্রয়োজনীয় মুহূর্তে বোলাররা উইকেট এনে দিয়েছে, আবার প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানকে ক্রিজে বেঁধে রেখেছে। মালিঙ্গা একজন চ্যাম্পিয়ন বোলার। ও আমাদের জন্য বেশ কয়েক বছর ধরে সর্বোচ্চটা নিংড়ে দিচ্ছে।’ বহুল আলোচিত শেষ ওভারে মালিঙ্গার হাতে বল তুলে দেয়া প্রসঙ্গে মুম্বাই অধিনায়ক রোহিত বলেন, ‘একবার আমি হারদিক পান্ডিয়ার কথা ভাবছিলাম, কিন্তু আবার এমন একজনকে চাইছিলাম যে আগেও এমন পরিস্থিতিতে বল করেছে। অভিজ্ঞতার বিবেচনায় তাই শেষ পর্যন্ত মালিঙ্গাকেই বেছে নেই। আর ও যেটা করেছে, তার তুলনা হয় না।’ এমন একটি আকর্ষণীয় টুর্নামেন্টে অধিনায়ক হিসেবে শিরোপা জিততে পেরে দারুণ খুশি রোহিত, ‘জাতীয় দল কিংবা আইপিএল, অধিনায়ক হিসেবে আমি প্রতিটি ম্যাচেই শেখার চেষ্টা করি। আর সাফল্যের মূল কৃতিত্বটা খেলোয়াড়দের, কারণ তাদের ভাল নৈপুণ্যে ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে এমন একটা দলকে নেতৃত্ব দিতে পেরে আমি খুবই খুশি।’ ফাইনালে দুর্দান্ত বোলিং করে ম্যাচ সেরা হয়েছেন জাসপ্রিত বুমরাহ। তার বোলিং ফিগার ৪-০-১৪-২। মুম্বাইয়ের শিরোপা জয়ে রেখেছেন অগ্রণী ভূমিকা। সঙ্গত কারণে সেরা খেলোয়াড় বেছে নেয়া হয়েছে তাকে। প্লে-অফে উঠতে পারেনি কলকাতা নাইট রাইডার্স (কেকেআর)। তবে লিগজুড়ে অসাধারণ ব্যাটিং করে টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কার জিতে নিয়েছেন দলটির ক্যারিবীয়ান তারকা আন্দ্রে রাসেল। কে কি পুরস্কার পেলেন- চ্যাম্পিয়ন : মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স, চতুর্থ শিরোপা, ২০ কোটি রুপী রানার্সআপ : চেন্নাই সুপার কিংস, সাড়ে ১২ কোটি রুপী ম্যান অব দ্য ফাইনাল : জাসপ্রিত বুমরাহ, মুম্বাই, ৫ লাখ রুপী ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট : আন্দ্রে রাসেল, কলকাতা, ১০ লাখ রুপী সেরা উদীয়মান খেলোয়াড় : শুভমান গিল, কলকাতা, ১০ লাখ রুপী সেরা ক্যাচ : কাইরন পোলার্ড, মুম্বাই, ১০ লাখ রুপী সেরা স্ট্রাইক রেট : আন্দ্রে রাসেল, কলকাতা, ১০ লাখ রুপী অরেঞ্জ ক্যাপ (সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী) : ডেভিড ওয়ার্নার, ৬৯২ রান, হায়দরাবাদ, ১০ লাখ রুপী পার্পল ক্যাপ (সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি) : ইমরান তাহির, ২৬ উইকেট, চেন্নাই, ১০ লাখ রুপী মোস্ট ভ্যালুয়েবল ক্রিকেটার : আন্দ্রে রাসেল, কলকাতা, ১০ লাখ রুপী ফেয়ার প্লে ট্রফি : সানরাইজার্স হায়দরাবাদ, নগদ অর্থ নেই
×