ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাজধানীর পাঁচ স্থানে পাওয়া যাবে

ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি ২২ মে থেকে

প্রকাশিত: ১০:১৮, ১৬ মে ২০১৯

 ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি ২২ মে থেকে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসন্ন ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে আগামী ২২ মে থেকে ২৬ মে পর্যন্ত পাঁচদিন ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল মন্ত্রণালয়। ঈদ পরবর্তী ট্রেনের ফিরতি টিকেট বিক্রি শুরু হবে ২৯ মে, চলবে দুই জুন পর্যন্ত। ৯৫টি আন্তঃনগর ট্রেনের প্রতিদিন বিক্রি হবে প্রায় ৭০ হাজার টিকেট। এ্যাপের মাধ্যমে ট্রেনের ৫০ শতাংশ টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন ক্রেতারা। বাকি ৫০ ভাগ দেয়া হবে কমলাপুর রেলস্টেশনসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানের পাঁচ কাউন্টার থেকে। এবারের ঈদ যাত্রায় আট জোড়া স্পেশাল ট্রেন যুক্ত হচ্ছে। কোন ব্যক্তি জাতীয় পচিয়পত্র দেখিয়ে সর্বোচ্চ চারটি টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন। এছাড়া গাজীপুর রেলস্টেশন থেকেও অগ্রিম টিকেট বিক্রি হবে। বুধবার নিজ রেলভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রেলমন্ত্রী মোঃ নূরুল ইসলাম সুজন ঈদ যাত্রায় সার্বিক প্রস্তুতির কথা তুলে ধরেন। এদিকে আগামী ১৭ মে থেকে চার বিভাগের বাসের টিকেট বিক্রি শুরু হবে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের জন্য ২১ অথবা ২২ রোজা থেকে লঞ্চের কেবিনের অগ্রিম টিকেট বিক্রির সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে লঞ্চ মালিক সমিতি। প্রতিবছর ঈদের আগে ট্রেনের টিকেট বিক্রিতে কালোবাজারির অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে পক্ষ বিপক্ষের নানা রকম কথাই শোনা যায়। এবার টিকেট কালোবাজারি ঠেকাতে নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। সংবাদ সম্মেলনে রেলমন্ত্রী জানান, টিকেট কালোবাজারি রুখতে ন্যাশনাল আইডি কার্ড দেখিয়ে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ চারটি টিকেট কিনতে পারবেন। ঈদের আগে ও পরে মালবাহী ট্রেন বন্ধ থাকবে। মন্ত্রী বলেন, ঈদের প্রায় পাঁচদিন আগে ৩১ মে থেকে রেলওয়েতে ট্রেনের কোন ডে-অফ থাকবে না। ফলে ৪৮টি বিশেষ ট্রিপ পরিচালিত হবে। রেলমন্ত্রী বলেন, এবার প্রথমবারের মতো কমলাপুর রেলস্টেশন ছাড়াও চারটি স্থানে টিকেট বিক্রি করা হবে। কমলাপুর থেকে সমগ্র পশ্চিমাঞ্চলগামী ট্রেনের টিকেট, বিমানবন্দর স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট, তেজগাঁও স্টেশন থেকে ময়মনসিংহ ও জামালপুরগামী ট্রেনের টিকেট, বনানী থেকে নেত্রকোনাগামী মোহনগঞ্জ ও হাওড় এক্সপ্রেসের টিকেট ও ফুলবাড়িয়া (পুরাতন রেলওয়েস্টেশন) থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট বিক্রি করা হবে। প্রতি বছর ঈদে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সকল ট্রেনের টিকেট বিক্রি হতো। ফলে দীর্ঘ লাইনের কারণে টিকেট প্রত্যাশীদের দুর্ভোগের শেষ ছিল না। অনেকেই দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতেন। তাই সাধারণ যাত্রীদের পক্ষ থেকে অনেক আগে থেকেই পৃথক-পৃথক স্থানে অগ্রিম টিকেট বিক্রির দাবি ছিল। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমাতেই এবারই প্রথমবারের মতো পাঁচ স্থানে অগ্রিম টিকেট বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে অনলাইনে ৫০ ভাগ টিকেট বিক্রি নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন ওঠেছে। প্রথমবারেই অনলাইনে এত টিকেট দেয়ায় অনেকে বলছেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে এ্যাপ ব্যবহারের প্রচলন এত বেশি নেই। তাই সর্বোচ্চ ২৫ ভাগ টিকেট অনলাইনে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে। অর্ধেক টিকেট অনলাইনে দেয়ায় কাউন্টার থেকে যাত্রীরা প্রত্যাশিত টিকেট না পেয়ে ফেরার আশঙ্কা ঘরমুখো মানুষের। সংবাদ সম্মেলনে নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন রুটে আট জোড়া স্পেশাল ট্রেন চলবে। ঢাকা দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা রুটে এক জোড়া স্পেশাল ট্রেন চলবে। চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটে দুই জোড়া স্পেশাল ট্রেন চলবে। কলকাতা-খুলনার বন্ধন ট্রেন স্পেশাল হিসেবে চলবে খুলনা-ঢাকা-খুলনা রুটে। এছাড়া ঢাকা-ঈশ্বরদী-ঢাকা রুটে একটি, লালমনিরহাট-ঢাকা-লালমনিরহাট রুটে একটি, শোলাকিয়া স্পেশাল-১ ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ- ভৈরববাজার রুটে ঈদের দিন, শোলাকিয়া স্পেশাল-২ ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রুটে ঈদের দিন স্পেশাল ট্রেন হিসেবে চলবে। তবে স্পেশাল ট্রেনের টিকেট এ্যাপসের মাধ্যমে কেনা যাবে না বলে জানান তিনি। মন্ত্রী আরও বলেন, ২২ মে ৩১ মে’র, ২৩ মে ১ জুনের, ২৪ মে ২ জুনের, ২৫ মে ৩ জুনের ও ২৬ মে ৪ জুনের টিকেট বিক্রি করা হবে। আর অগ্রিম ফিরতি টিকেটের ক্ষেত্রে ২৯ মে ৭ জুনের, ৩০ মে ৮ জুনের, ৩১ মে ৯ জুনের, ১ জুন ১০ জুনের এবং ২ জুন ১১ জুনের টিকেট বিক্রি করা হবে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টিকেট বিক্রি করা হবে। রেলমন্ত্রী এও বলেন, আগামী ২৫ মে ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস নামে নতুন ট্রেন চালু করা হবে। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিরতিহীন এই ট্রেনটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রেনটির উদ্বোধন করবেন। বনলতার মতো পঞ্চগড় এক্সপ্রেসে খাবার বাধ্যতামূলক করা হয়নি। ভাড়ার হার নির্ধারণ করা হয়েছে শোভন ৫৫০ টাকা, এসি চেয়ার ১ হাজার ৩৫ টাকা, এসি কেবিন ১ হাজার ২৬০ টাকা এবং এসি স্লিপিং বার্থ ১ হাজার ৮৯২ টাকা। ৫৯৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এটি বাংলাদেশের সর্ব দীর্ঘ ট্রেন সার্ভিস হতে যাচ্ছে। ১৮টি বগি নিয়ে ঢাকা থেকে সরাসরি পার্বতীপুর পর্যন্ত যাবে ট্রেনটি। এরপর দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এ দুই জায়গায় থেমে পঞ্চগড়ে গিয়ে শেষ হবে ট্রেনটির যাত্রা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রেলসচিব মোফাজ্জেল হোসেন ও রেলওয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা। রেলমন্ত্রী জানান, ঈদের সময় ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস বন্ধ থাকবে। ওই ট্রেনটি দিয়ে চালানো হবে খুলনা ঈদ স্পেশাল একটি ট্রেন। ৩ জুন রাত ১২টা ৫ মিনিটে ট্রেনটি ঢাকা ছাড়বে। ঢাকা-ঈশ্বরদী-ঢাকা রুটে ২ থেকে ৪ জুন চলবে ঈশ্বরদী ঈদ স্পেশাল ট্রেন। লালমনি ঈদ স্পেশাল নামে বিশেষ একটি ট্রেন ২ থেকে ৪ জুন চলবে লালমনিরহাট-ঢাকা-লালমনিরহাট রুটে। মন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকার কমলাপুর, ঢাকা বিমানবন্দর, জয়দেবপুর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিং, সিলেট, রাজশাহী, খুলনাসহ সকল বড় বড় স্টেশনে জিআরপি, আরএনবি, বিজিপি ও স্থানীয় পুলিশ এবং র‌্যাবের সহযোগিতায় টিকেট কালোবাজারি প্রতিরোধে সর্বক্ষণিক ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া জেলা প্রশাসকদের সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, যে কোন নাশকতা প্রতিরোধে চলন্ত ট্রনে, স্টেশনে বা রেললাইনে আরএনবি, জিআরপি ও রেলওয়ে কর্মচারীদের কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে। এছাড়া র‌্যাব, বিজিবি ও স্থানীয় পুলিশসহ অন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতায় নাশকতাকারীদের কঠোরভাবে দমন করা হবে।’ এ্যাপে যেভাবে টিকেট কাটবেন ॥ ‘রেল সেবা’ নামে নতুন এ্যাপ চালু করেছে রেল মন্ত্রণালয়। গত ২৮ এপ্রিল কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ্যাপটির উদ্বোধন করা হয়। এর মাধ্যমে ঘরে বসেই কাটতে পারবেন ট্রেনের টিকেট। এজন্য আপনার মোবাইলে একটি এ্যাপ ডাউনলোড করে নিতে হবে। এ্যাপটির মাধ্যমে ঘণ্টায় ১৫ হাজার টিকেট কাটা যাবে। অর্থাৎ প্রতি মিনিটে আড়াইশ টিকেট কাটা যাবে। একই সঙ্গে একজন যাত্রী সর্বোচ্চ চারটি টিকেট কিনতে পারবেন। রেলওয়ে সূত্র জানায়, নতুন এই এ্যাপটির মাধ্যমে একসঙ্গে ৫০০ যাত্র ট্রেনের টিকেট কাটতে পারবেন। পরবর্তীতে অবকাঠামোগত পরিবর্তন আসলে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। সংশ্লিষ্টরা আরও জানিয়েছেন, মোট টিকেটের ৫০ শতাংশ ক্রয় করা যাবে মোবাইলের ম্যাসেজ বা অনলাইনের মাধ্যমে। এর মধ্যে কিছু সংখ্যক ম্যাসেজের মাধ্যমে, কিছু ওয়েবসাইট ও কিছু পাওয়া যাবে এই ‘রেল সেবা’ এ্যাপের মাধ্যমে। ১৭ মে থেকে বাসের আগাম টিকেট বিক্রি ॥ আগামী ১৭ মে থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলের যাত্রীদের ঘরে ফেরার সুবিধার্থে অগ্রিম টিকেট বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাস মালিকরা। অগ্রিম টিকেট বিক্রি চলবে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত। আর ঈদের আগে ৩০ মে থেকে অগ্রিম বাস যাত্রা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রমেশ ঘোষ। তিনি বলেন, ১৭ মে শুক্রবার সকাল থেকে টিকেট বিক্রি শুরু হবে। ৬ জুন ঈদ হিসাব করে আমরা টিকেট বিক্রি শুরু করব। ওইদিন ৩০ মের টিকেট বিক্রি হবে। সেটা ৩০ তারিখ পর্যন্ত ওপেন থাকবে। যতক্ষণ টিকেট থাকবে ততক্ষণ বিক্রি চলবে।
×