ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রোজায় ফলের বাজার গরম, দ্বিগুণ তিনগুণ দামে বিক্রি

প্রকাশিত: ১০:২৩, ১৬ মে ২০১৯

 রোজায় ফলের বাজার গরম, দ্বিগুণ তিনগুণ দামে বিক্রি

ওয়াজেদ হীরা ॥ রমজানে রোজাদারদের একটু বেশি আকর্ষণ থাকে ফলের প্রতি। ইফতারে সবাই একটু স্বাস্থ্যসম্মত ফল রাখতে চান। এবার ফলের সরবরাহ কম থাকায় এবং মধুমাসের ফল ব্যাপকভাবে বাজারে না আসার সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন ফল ব্যবসায়ীরা। রোজায় সবজিসহ অধিকাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামে তেমন হেরফের না হলেও চড়েছে ফলের দাম, কোন কোন ফলের দাম দ্বিগুণ হয়েছে কয়েক দিনের ব্যবধানে। দেশী-বিদেশী সব ধরনের ফলের বাজার গরম। তবুও বাড়তি দামেই কাটতি ভাল হচ্ছে রসালো ফলের। আর সাধারণ মানুষের পকেট কাটলেও মুনাফা উঠাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর পাইকারি ফলের বাজারের চেয়ে খুচরা বাজারে ফল বিক্রি হচ্ছে কোথাও দ্বিগুণ কোথাও তিনগুণ দামে। অনেকটাই বাধ্য হয়েই ফল কিনতে হচ্ছে সাধারণ মানুষদের। গত কয়েক দিনের দাবদাহের কারণে দাম আরও বেশি আকশচুম্বী। তবে মধুমাসের ফল বেশি করে বাজারে আসলে দাম কমবে বলেও জানা গেছে। রাজধানীর ফলের বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানেই সব ধরনের ফলের দাম ২০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কম থাকা সত্ত্বেও সরবরাহ কমের অজুহাতে দেশের বাজারে দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পাইকারি বিক্রেতাদের মতে, রোজা তাই দামও বেশি। বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে আপেল, আঙ্গুর, নাশপাতি, মাল্টা, আনারস, পেয়ারা। বেড়েছে কলার দামও। কোথাও কোথাও আবার কলা পাওয়া যাচ্ছে না দাবি করে অনেক বেশি দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ খেজুরের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজধানীর, মতিঝিল, পল্টন, মগবাজার, কাওরানবাজার, বাবুবাজার, যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর বেশকিছু বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব ফলের দোকানেই ক্রেতাদের ভিড়। অফিস শেষে ইফতারের আগে পছন্দের ফল কিনে বাড়ি ফেরার তাড়া। তবে বাড়তি দামের কারণে ক্রেতাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান, দাম বাড়তি হলেও বিক্রি থেমে নেই। বিকেল থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত ভিড় জমছে দোকানে। বিক্রিও অনেক ভাল। এদিকে ফলের পাইকারি বাজার বাদামতলি ঘুরে দেখা গেছে যে দামে সেখানেও ফলের দাম বেশ চড়া। তবে খুচরা বিক্রেতারা যে মূল্যে ফল কিনছেন তা রাজধানীর বিভিন্ন এলকায় গিয়ে দ্বিগুণ বা তিনগুণ হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও এ বছর সময় না হওয়ার কারণে মধুমাসের ফল বাজারে তেমন একটা আসেনি তেমনি বিদেশী আমদানিনির্ভর ফলের সরবরাহও কম সব মিলিয়ের রমজানকে পুঁজি করে ফলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও জানা গেছে। বাবুবাজারের ফলের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কয়েকদিনের ব্যবধানে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে তরমুজ, বাঙি, বেল, মাল্টা, আপেল, আনারস, আনাড়, আঙ্গুর ইত্যাদি ফলের। সবচেয়ে দাম বেড়েছে তরমুজ, মাল্টা, বেল ও আঙ্গুরের। বড় তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকায় যা খুচরা বাজারে কোথায় কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ বা পিস হিসেবে ৪৫০ এর উপরে। বাদামতলির পাইকারি বিক্রেতা জসিম বলেন, আমাদের এখানে তরমুজ যা এসেছে তাতে সরবরাহ একটু কমই বলব। আবার গরমে চাহিদা আরও বেড়েছে। আমরাও বেশি দিয়ে কিনে আনি। আরেক পাইকারি বিক্রেতা বলেন খুচরা বাজারে যে যার মতো মূল্য নেয় এটি তো আমরা দেখতে পারি না। এদিকে বাদামতলীর পাইকারি সরবরাহ কম বলে পাইকারি ক্রেতারা জানিয়েছেন। কৃষি সম্প্রসারণের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইংয়ের আমদানি বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যেও দেখা গেছে গত অর্থ বছরে যে পরিমাণ বিদেশী ফল আমদানি হয়েছে তা পূর্বের অর্থবছরের চেয়ে কম। আমদানি বিভাগ সূত্রে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আপেল আদমানি হয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার ৮৪ দশমিক ৬১ টন যা ২০১৬-১৭ তে ছিল ২ লাখ ১৮ হাজার ৭৩৯ দশমিক ৭৫ টন। সে হিসেবে প্রায় দুই হাজারের বেশি আপেল আমদানি কম হয়েছে। এছাড়াও কমলা ২০১৭-১৮ তে আমদানি করা হয় ১ লাখ ৭২ হাজার ৬৭৪ দশমিক ৯২৫ টন যা ২০১৬-১৭ তে ছিল ১ লাখ ৮৭ হাজার ৯২১ দশমিক ২২৮ টন। ২০১৭-১৮ তে আঙ্গুর আমদানি হয় ৭৬০৪২.৬৪৭ টন যা পূর্বের বছর ছিল ৭৬৫৬১.৬৩৮ টন। মাল্টা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩০৫.৫২৩ টন আমদানি হলেও পরের অর্থবছর ২০১৭-১৮ তে কমে হয়েছে ২২.৯ টন। নাশপাতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭৬০২.৩১৬ টন আমদানি হলেও ২০১৭-১৮ তে কমে হয়েছে ৬৭৮৩.৬৪ টন। শুধু খেজুর আর বেদেনাতে আমদানি বেশি ছিল। খেজুর ২০১৬-১৭ তে ৩৮৭৫৭.০৪ টন আমদানি হলেও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেড়ে ৪৭৭৬৬.৬০৬ টন। আর বেদেনা ২০১৬-১৭ তে ৩২৩৯.৪১৭ টন ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানি হয় ৪৭১৫৭.২৫৭ টন। ফল ব্যবসায়ীরা জানান নানা কারণে গত অর্থবছরে ফল আমদানি কম হয়। তার একটি প্রভাব দামের ওপর পরতে পারে। একাধিক পাইকারি বিক্রেতারা বলেন কয়েকদিনের মধ্যেই বাজারে আসবে মধুমাসের ফল তখন ফলের দাম কমে যাবে। জানা গেছে, এ বছর রাজশাহীতে আম পাড়া শুরু হবে ১৫ মে থেকে। এদিন থেকে পর্যায়ক্রমে সাত ধাপে বিভিন্ন জাতের সুস্বাদু পরিপক্ব আম গাছ থেকে পাড়া হবে। রাজশাহীতে সাধারণত সবার আগে পাকে গুটি জাতের আম। ইতোমধ্যেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আম কাঁঠাল পাওয়া গেলেও দাম যেমন বেশি তেমনি মান নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। মধু মাসের ফল নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর রোজায় আর তেমনভাবে মধুমাসের ফল পেতে পেতে রোজাই শেষ হয়ে যাবে। আম, জাম, লিচ কাঁঠাল জাতীয় ফল পুরোপুরি বাজারে আসতে আরও ১৫ দিনের বেশি লেগে যাবে। যদিও কিছু কিছু বাজারে হঠাৎ গুটি কয়েক লিচু ও কাঁঠাল দেখা গেলেও আগাম হওয়ার ফলে এগুলো কেনার পরিবর্তে দেখেই স্বাদ মেটাচ্ছেন ক্রেতারা। যে লিচু বাজারে এসেছে তা গাজীপুরের। এই লিচুর মাংস কম বিচি বড়। আর মূল্য চাওয়া হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। তবে আগামী কয়েক দিনে আমের চালান যত বাড়বে ততই ফলের দাম নিম্নমুখী হবে বলেও জানান পাইকারি ব্যবসায়ীরা। খুচরা বাজারে ফলের চাহিদা ও দামের বিষয়ে জানতে চাইলে খুচরা ব্যবসায়ী জুলহাস বলেন, পাইকারি কেনার পরে লাভের বিষয়টি থাকে। যেহেতু বেশি দিয়ে কিনছি বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে সামনে দাম কমে আসতে পারে বলেও জানান। অফিস শেষে কারওয়ানবাজার ফল কিনতে এসেছিলেন রশিদুল ইসলাম। বেসরকারী এই চাকরিজীবী বলেন ইফতারে তার পরিবার ফল খেতেই বেশি পছন্দ করে। প্রত্যেক রমজানেই ফলের দাম বেশি থাকে। গতবার মধুমাসের ফল ছিল। এবার মধুমাসের ফল এখনও নামেনি। ফলে আরও বেশি করে দাম নিচ্ছে বিক্রেতারা। মাল্টা কিনতে এসে একরকম বিরক্ত হলে না কিনে অন্য ফল কিনলেন তানিয়া বেগম। তিনি বলেন, ফলের বাজার এত বেশি চড় যে দেখার কেউ নেই। আর আমাদের বাধ্য হয়েই কিনতে হচ্ছে।
×