ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিদেশী শত্রু থেকে মার্কিন কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সুরক্ষায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ ॥ হুয়াওয়ের সমালোচনা

জরুরী অবস্থা ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৯:৪৮, ১৭ মে ২০১৯

 জরুরী অবস্থা ঘোষণা

বিদেশী শত্রুর হাত থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সুরক্ষা করতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জাতীয় জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ বিষয়ে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। এর ফলে জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টিকারী বিদেশী টেলিকম পণ্য ব্যবহারে মার্কিন কোম্পানিগুলো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হবে। এ আদেশে বিশেষ কোন কোম্পানির নাম উল্লেখ করা হয়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে টেলিকম জায়ান্ট হুয়াওয়েকে টার্গেট করেই এই জরুরী অবস্থা জারি করা হয়েছে। এই জরুরী অবস্থা জারির সমালোচনা করেছে চীনা টেলিকম কোম্পানি হুয়াওয়ে। তারা জানিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি শুধু তাদের ভোক্তা ও কোম্পানিগুলোকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ সম্প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, হুয়াওয়ের টেলিকম পণ্য চীন নজরদারির জন্য ব্যবহার করে থাকতে পারে। আগামী প্রজন্মের ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের জন্য হুয়াওয়ের পণ্য ব্যবহার বন্ধে মিত্রদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অন্য এক আদেশে মার্কিন বাণিজ্য দফতর হুয়াওয়ে ও ৭০টিকে তাদের ‘এনটিটি তালিকা’য় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এর ফলে সরকারের অনুমতি ছাড়া কোম্পানিটি মার্কিন কোন ফার্মের কাছ থেকে প্রযুক্তি কিনতে পারবে না। প্রতিনিধিরা জানান, বাণিজ্য যুদ্ধের অংশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ সপ্তাহেই চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে দেয়ায় উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই আদেশের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যেকার শক্তি প্রদর্শনের কেন্দ্রে এখন অবস্থান করছে হুয়াওয়ে। জাতীয় জরুরী অবস্থা ঘোষণার বিষয়ে হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের এই আদেশের উদ্দেশ্য হলো ‘বিদেশী শত্রুর হাত থেকে আমেরিকাকে সুরক্ষা করা, যারা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অবকাঠামো এবং সেবায় সক্রিয় ও অব্যাহতভাবে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে এবং ক্ষতি করছে।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জাতীয় নিরাপত্তায় অগ্রহণযোগ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করছে এ ধরনের ব্যবসা নিষিদ্ধে বাণিজ্যমন্ত্রীকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে এই আদেশে। নির্বাহী এই আদেশকে তাৎক্ষণিকভাবে স্বাগত জানিয়েছেন ফেডারেল কমিউনিকেশন্স কমিশন (কেন্দ্রীয় যোগাযোগ কমিশন) চেয়ারম্যান অজিত পাই। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, এটি ‘আমেরিকার নেটওয়ার্ক সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে হুয়াওয়ের পণ্য ব্যবহার পরিহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং তাদের মিত্রদেরও উৎসাহিত করছে। অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড উভয় দেশই আগামী প্রজন্মের ফাইভ-জি মোবাইল নেটওয়ার্কে হুয়াওয়ের প্রযুক্তি ব্যবহার থেকে বিরত রয়েছে। এদিকে হুয়াওয়ে জানিয়েছে, এটির কার্যক্রম কোন হুমকির সৃষ্টি করছে না। তারা চীনা সরকার থেকে স্বতন্ত্র বলেও উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটি। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে হুয়াওয়ে কোম্পানি জানায়, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হুয়াওয়ের ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হলে এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অধিকতর নিরাপদ বা শক্তিশালী করবে না। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিরাপদও হবে না। বরং এতে আরও ব্যয়বহুল ও নিম্নমানের বিকল্পের দিকে যেতে হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে। এর ফলে ফাইভ-জি নেটওয়ার্কে পিছিয়ে পড়বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। পরিণামে ক্ষতিগ্রস্ত হবে মার্কিন ভোক্তা ও দেশটির কোম্পানিগুলো। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে ‘অযৌক্তিক নিষেধাজ্ঞা’ ‘আরও কয়েকটি মারাত্মক আইনী বিষয়’ সামনে নিয়ে আসবে। আগামী প্রজন্মের ফাইভ-জি মোবাইল নেটওয়ার্কে হুয়াওয়ের পণ্য ব্যবহারে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ অব্যাহত থাকায় মঙ্গলবার লন্ডনে এক আলোচনায় কোম্পানিটির চেয়ারম্যান লিয়াং হুয়া বলেছিলেন, ‘তারা সরকারের সঙ্গে নো-স্পাই চুক্তি করতে ইচ্ছুক।’ নির্বাহী এই আদেশের প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার চীনা পররাষ্ট্র বিষয়ক মুখপাত্র গেং শুয়াং ‘নির্দিষ্ট চীনা কোম্পানির’ বিরুদ্ধে মার্কিন পদক্ষেপকে ‘অবমাননাকর ও অবিচার’ বলে অভিহিত করেন। গেং বলেন, ‘নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের অজুহাতে চীনা কোম্পানিকে দমন-নিপীড়ন বন্ধ এবং তাদের স্বাভাবিক বিনিয়োগ ও কার্যক্রম চালানোর জন্য যৌক্তিক, ন্যায় ও বৈষম্যহীন পরিবেশ তৈরির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানাই।’ ট্রাম্পের বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রোস বলেন, নির্বাহী আদেশটি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পর্যালোচনা করা হয়েছে। বিদেশী শত্রুর হাত থেকে জনগণের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং পরিষেবা সুরক্ষার জন্যই এই আদেশ। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে মার্কিনীরা আত্মবিশ্বাসী হবে যে, আামাদের তথ্য-উপাত্ত ও অবকাঠামো নিরাপদ।’ হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি সারাহ স্যান্ডার্স বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তায় তৈরি হওয়া অগ্রহণযোগ্য ঝুঁকি বন্ধ করতেই এই নির্বাহী আদেশ।’ উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্টে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা কোম্পানি হুয়াওয়ে ও জেডটিই’র পণ্য ব্যবহার থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিরত রাখার বিষয়ে একটি বলে স্বাক্ষর করেন। -বিবিসি, গার্ডিয়ান ও গ্লোবাল টাইমস
×