স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ নতুন কমিটি নিয়ে বিএনপির দু’গ্রুপ মারমুখী অবস্থান নিয়েছে। শুরু হয়েছে জেলা কার্যালয় দখল, পাল্টাদখলসহ মহড়া। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বুধবার মধ্যরাতে শহরের সূত্রাপুর এলাকায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুর বাসভবনের সামনে ধাওয়া ও মোটরসাইকেল ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে বগুড়া বিএনপিতে দীর্ঘদিনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে চলে আসায় জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন পর্যায়ে বিএনপির দু’গ্রুপের বিরোধ আলোচনার অন্যতম বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে বগুড়া জেলা এিনপির অচলাবস্থা ও সাংগাঠনিক কার্যক্রমে গতি না থাকায় ঝিমিয়েপড়া নেতাকর্মীদের সক্রিয় করতে কেন্দ্রীয় বিএনপি বগুড়া বিএনপিকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়। এর ধারাবাহিকতায় গত ২৫ এপ্রিল জেলা নেতাদের ঢাকা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডেকে পাঠানো হয়। সেখানে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের জন্য তারেক রহমানের নির্দেশনায় নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত জানান কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। এতে জেলা কমিটিতে থাকা নেতারা এর বিরোধিতা করলে সেখানেই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি, এমনকি তুমুল হট্টগোল বাধে। এর জের ধরে জেলা বিএনপির দুই নেতা বহিষ্কার হয়। এর প্রতিবাদে একটি গ্রুপ বগুড়ায় জেলা বিএনপির কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। দু’দিন তালাবদ্ধ থাকার পর তা খুলে দেয়া হলেও আহ্বায়ক কমিটি গঠন নিয়ে আবারও বিবদমান দু’ গ্রুপ বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। গত ৫ মে কেন্দ্রীয় বিএনপি জেলা বিএনপির কমিটি বাতিল ঘোষণা করে। এ অবস্থায় বুধবার কেন্দ্র বিএনপি জেলা বিএনপির ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে। নতুন কমিটির আহ্বায়ক করা হয় বগুড়ার শেরপুর-ধুনটের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মাদ সিরাজকে। এতে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয় এ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম ও ফজলুল বারী তালুকদার বেলালকে। বুধবার কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতাদের পুরো তালিকা প্রকাশ হলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
একটি সূত্র জানায়, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলামের অনুসারী স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল, ছাত্রদল ও অপর সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতাকর্মী ও বঞ্চিতরা ঘোষিত কমিটির বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়েছে। তারা সন্ধ্যায় শহরের নওয়াববাড়ি সড়কের দলীয় কার্যালয়ের সামনে নতুন কমিটির নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে অবস্থান ও দলীয় কার্যালয় দখলে নেয়। এক পর্যায়ে তারা দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। অপ্রীতিকর অবস্থার মোকাবেলায় সেখানে পুলিশও মোতায়েন করা হয়। পরে এদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে নতুন দায়িত্ব পাওয়া আহ্বায়ক কমিটি ও ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ জেলা বিএনপির অফিসে গিয়ে পদবঞ্চিত-বিদ্রোহী গ্রুপের দেয়া তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে। এর পর সেখানে তারা গভীর রাত পর্যন্ত অস্থান নেন। নতুন কমিটির নেতা আলী আজগর রাতে দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে তালা ভেঙ্গে ভেতরে যাওয়ার কথা স্বীকার করেন। নতুন কমিটি রাত প্রায় ১২টা পর্যন্ত দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেয়। পরে তারা সাবেক সংসদ সদস্য হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুর বাড়িতে যান। বিদ্রোহী গ্রুপ এ খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে হামলা চালায়। তারা হেলালুজ্জামান লালুর বাড়ির দরজা-জানলায় লাথি মারে এবং বাড়ির সামনে থাকা বেশ কিছু মোটরসাইকেল ভাংচুর করে। এ সময় নতুন কমিটির নেতাকর্মীরা এলে ধাওয়া ও পাল্টাধাওয়া হয়। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এদিকে বিএনপি সূত্র জানায়, দলীয় কার্যালয়ে তালা লাগানো, আগুন ও সাবেক সংসদ সদস্যের বাসায় হামলার ঘটনায় বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় কমিটি বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে সাময়িক বহিষ্কারসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে।