একজন নারী পূর্ণতা পায় মাতৃত্বে। কিন্তু এই পূর্ণতা প্রাপ্তি কোন সহজ ব্যাপার নয়। যেদিন থেকে একজন নারী বুঝতে পারেন যে তিনি মা হতে চলেছেন ঠিক সেদিন থেকেই যেন সেই আমৃত্যু দায়িত্বের যাত্রা শুরু। একটি সন্তানকে তিল তিল করে বড় করে তুলতে মাকে যে শ্রম দিতে হয় তা সকল শ্রমের উর্ধে।
আমি যখন আমার সন্তানকে লালন-পালন করি ঠিক তখনই বুঝতে পারি আমার মা আমার জন্য কি করেছেন। এই ডিজিটাল যুগে যেখানে একটি ডায়পারেই পুরো রাত পার হয়ে যায় সেখানে আমাদের মা কতবার যে রাতে ঘুম থেকে জেগে উঠেছেন শুধু তার ছোট্ট সন্তানটি যেন ভিজা কাঁথায় না শুয়ে থাকে এটা ভেবে তার কোন হিসাব নেই। আবার খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে সন্তানের খাবার দেয়া, তার সবকিছু পরিষ্কার করা এবং সেইসঙ্গে পরিবারের কাজ ঠিকমতো করাও কিন্তু মায়েরই দায়িত্ব ছিল।
বিশ্বাস হচ্ছে বন্ধুত্বের প্রথম ও প্রধান খুঁটি। একটু চিন্তা করলেই আমরা দেখব মায়ের থেকে বড় বন্ধু কি আর কেউ হতে পারে? না। কখনই না। মা’ই একমাত্র মানুষ যিনি আমার সুখে সবচেয়ে সুখী হয়ত আমার চেয়েও বেশি।
-যিনি আমার কষ্টে সবচেয়ে আহত।
-যিনি আমার উন্নতিতে প্রাণবন্ত।
-যিনি আমার মঙ্গল কামনায় সদা জাগ্রত।
এই যে মা, আমরা তাঁকে সন্তান হিসেবে কতটুকু সমাদর করি এটা কিন্তু অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে। যে মা আমাকে দশ মাস দশ দিন তাঁর গর্ভে ধারণ করেছেন, তাঁর বুকের দুধ পান করিয়েছেন, আমার জন্য রাত্রী জেগেছেন। সবাই যখন বিকেল বেলা ঘুমিয়ে এই মা’ই তখন না খেয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে আমার স্কুল ফেরার অপেক্ষায়। সেই মাকে আমার শ্রদ্ধা ও সালাম। আমার জীবনের সকল উজাড় করা ভালবাসা তাঁর জন্য।
এই মা যখন বৃদ্ধ অবস্থায়- তখন যেন তাঁকে কেউ বোঝা মনে না করি। যে মায়ের আদেশেই একদিন বাড়িতে সবকিছু হতো আজ বৃদ্ধ অবস্থায় তাঁর একটু গল্প বলা, দেরি করে সময় নিয়ে কথা বলাকে আমরা বিরক্তি হিসেবে না নেই। ঈদে বা পূজার বাজার করতে গিয়ে মায়ের শাড়িটা যেন বাজেটের তলায় না পড়ে সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় অবশ্যই তাঁর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। মায়ের সঙ্গে সঙ্গে বাবারও খেয়াল রাখতে হবে। কারণ একজন তো আরেকজনের পরিপূরক। তাঁদের অভিজ্ঞতার মূল্য, আমাদের জীবনে তাঁদের গুরুত্ব এগুলোকে মাথায় রেখেই তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাঁদের প্রয়োজন মেটাতে হবে। কেননা একদিন তাঁরা তাঁদের প্রয়োজনগুলোকে অগ্রাহ্য করে আমাদের প্রয়োজন মিটিয়েছেন। আর্থ-সামাজিক অবস্থা যেমনই হোক, সন্তান সংখ্যা যতজনই হোক না কেন মা-বাবা কিন্তু কখনই সন্তানকে বোঝা মনে করেন না। কাজেই এই মা-বাবা যখন বৃদ্ধ অবস্থায় তখন কখনই তাঁদের বোঝা মনে করা যাবে না। তাঁদের বয়সজনিত বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ হতে পারে সেগুলোকে দরদ দিয়ে খেয়াল করতে হবে। বড় ধরনের চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে সব ভাই বোন মিলে মা-বাবার চিকিৎসা করাতে হবে। তাঁরা যদি সঙ্গে থাকেন তাহলে তাদের সময় কাটানোর জন্য গল্পের বই, একটু আলাদা করে নিজেদের মতো সময় কাটানোর জায়গা করে দিতে হবে। কোথাও বেড়াতে গেলে তাঁদের কেউ সঙ্গে নিতে হবে। তা না হলে তাঁরা একাকিত্বে ভুগতে পারেন।
আর তাঁরা যদি দূরে থাকেন তাহলে প্রতিদিন অন্তত রুটিন করে একটিবার তাঁদের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে হবে। তাঁদের কোন কিছুর প্রয়োজন আছে কিনা, শরীর সুস্থ আছে কিনা বিশেষ করে ওষুধগুলো সঠিক নিয়মে খাচ্ছেন কি-না এগুলো জানতে হবে। বাৎসরিক উৎসবগুলো মা-বাবার সঙ্গে পালন করার চেষ্টা করতে হবে। মা-বাবা পৃথিবীতে আছেন বলেই হয়ত পৃথিবীটা আজও নিরাপদ আছে। আজ আমরা আমাদের মা-বাবার সঙ্গে যেমন আচরণ করব আমাদের সন্তানও কিন্তু তাই শিখবে।
কাজেই অতীতের সুন্দর স্মৃতিগুলোকে অমলিন রাখতে ও ভবিষ্যতকে আলোকিত করতে আমরা অবশ্যই আমাদের জন্মধাত্রী ‘মা’কে সেই সঙ্গে বাবাকেও ভালবাসব। তাহলেই আমাদের এই পৃথিবীটা ভালবাসা নামক মোড়কে আবৃত থাকবে।
শীর্ষ সংবাদ: